• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ৫, ২০১৯, ০৫:৩৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৫, ২০১৯, ০৫:৩৮ পিএম

বিএসএমএমইউ কেবিনে স্বজনদের ফুলেল শুভেচ্ছায় খালেদা জিয়া

বিএসএমএমইউ কেবিনে স্বজনদের ফুলেল শুভেচ্ছায় খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া-ফাইল ছবি

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেছেন তার স্বজনরা। হাসপাতালে প্রবেশ করার সময় খালেদা জিয়ার স্বজনদের মধ্যে দু’জনের হাতে ফুলের তোড়া ও দু’টি ব্যাগ দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ব্যাগ দু’টিতে খালেদা জিয়ার জন্য রান্না করা খাবার ও ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ফুলের তোড়া নিয়ে গেছেন স্বজনরা। সেখানে তার ঘনিষ্টজনরা তাকে ফুল দিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা জানান।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, বুধবার (৫ জুন) ঈদের দিন দুপুরে সেখানে যান তারা। স্বজনদের মধ্যে ছিলেন খালেদা জিয়ার বড় বোন সেলিনা ইসলাম, বোন জামাই অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ভাইয়ের বউ নাসরিন ইস্কান্দার, ভাতিজা অভিক ইস্কান্দার ও তারেক রহমানের শ্বাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বোনও উপস্থিত ছিলেন।

কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, ঈদ উপলক্ষে স্বজনরা বাসার রান্না করা খাবার এনে খাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া আছে। তা ছাড়া ঈদের দিনে বন্দির খাবার ও দেখা-েসাক্ষাতের বিষয়টি মানবিক চিন্তা থেকে শিথিল করা হয়েছে। তাই কেবিনে স্বজনরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। বাসার রান্না করা খাবারও খেয়েছেন তিনি। প্রায় এক ঘন্টা স্বজনরা তার কেবিনে অবস্থান করেছেন।

কারা সূত্র জানায়, ঈদের দিন সকালে খালেদা জিয়াকে দেয়া হয় পায়েস, সেমাই ও মুড়ি। এসবই ঢাকা কেন্দ্রীয় (কেরানীগঞ্জ) কারাগারের কারারক্ষীদের তৈরি। তবে অন্যান্য কয়েদির মতো নয়, তার খাবার তৈরি হয়েছে চিকিৎসকের পরামর্শ ও ডায়েট চার্ট অনুযায়ী।

দুপুরে খালেদার খাবারের মেন্যুতে ছিল ভাত এবং পোলাও। এর সঙ্গে ছিল ডিম, রুই মাছ, মাংস আর আলুর দম। রাতে দেয়া হবে পোলাও। সঙ্গে গরু অথবা খাসির মাংস, ডিম, মিষ্টান্ন, পান-সুপারি এবং কোমল পানীয়। এ সব মেন্যুর বাইরে খালেদা জিয়া অন্য কোনও খাবার খেতে চাননি। তবে হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকের অনুমতি ক্রমে ফাতেমার মাধ্যমে অন্য খাবার রান্না করে খাওয়ানো হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালক ব্রি. জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) যে সব সমস্যা নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিলেন সে সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে কমছে। তার ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসের উন্নতি হয়েছে, দুর্বলতা কাটছে। আমরা বলব, শারীরিকভাবে তিনি এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন।

বিএসএমএমইউ পরিচালক বলেন, এখানে আসার পর তার নতুন করে কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি। এখানে সব ধরনের চিকিৎসা নেয়া বা থাকা নিয়েও কোনও ধরনের সমস্যা তার হচ্ছে না।

গত ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। বিএসএমএমইউ-তে ভর্তির পর গত ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ডের প্রধান হলেন ডা. জিলন মিঞা। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ডা. তানজিমা পারভিন, ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ, ডা. চৌধুরী ইকবাল মাহামুদ। এছাড়া ডা. শামিম আহমেদ এবং ডা. মামুন মেডিকেল বোর্ডকে সহযোগিতা করছেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। পরে ওই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট।

মামলার রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। বিএসএমএমইউতে স্থানান্তরের আগে তিনি সেখানেই বন্দি ছিলেন। গত ২৫ মার্চ আর্থাইটিস ও ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধির কারণে তাকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের ৬২১ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

কারাগারে প্রথম থেকেই আদালতের অনুমতি নিয়ে খালেদার সঙ্গে থাকছেন গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম। দীর্ঘদিন ধরে খালেদার গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করছেন ফাতেমা। কারাগারে খালেদার সঙ্গে একই সেলে থাকার পর এবার ফাতেমা একই কেবিনে থাকছেন।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খালেদার পাশাপাশি একই খাবার পান তার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম। ফাতেমার পরিবারের লোকজনও তার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করতে আসেন।

খালেদা জিয়ার কারাবাস এবারই প্রথম নয়। এর আগে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর তিনি মোট চারবার গ্রেফতার হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি গ্রেফতার হন। তবে তখন তাকে বেশি দিন বন্দি থাকতে হয়নি। ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার স্থাপিত বিশেষ সাব জেলে ৩৭২ দিন ছিলেন খালেদা জিয়া।

এইচএম/এসএমএম