গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় নিহত ফারাজ, ইশরাত ও অবিন্তার স্মৃতি আজো কাঁদায় স্বজনদের। তাদের ছবি এবং স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন পরিবারের সদস্যরা। স্বজনরা বলছেন, ওরা শহীদ, ওদের জন্য আমরা গর্বিত। তবে আর যেন এমন নারকীয় ঘটনা না ঘটে। আর যেন এভাবে কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।
অবিন্তা কবির
পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০১৬ সালের ২৭ জুন দেশে আসেন অবিন্তা। ১ জুলাই ছিল ২৫ রমজান। সেদিন ইফতারের পর দুই বন্ধু ফারাজ আইয়াজ হোসেন ও তারুশি জৈনের সঙ্গে দেখা করতে হলি আর্টিজান বেকারিতে যান অবিন্তা। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে কয়েকজন অস্ত্রধারী জঙ্গি। তারা সেখানে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। তাদেরই একজন অবিন্তা।
অবিন্তা এলিগ্যান্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান রুবা আহমেদ ও ইহসানুল কবিরের মেয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। স্বজনরা জানান, সেখান থেকে এ বছর (২০১৯ সালে) তার গ্র্যাজুয়েট হওয়ার কথা ছিল।
স্বজনদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯ বছর বয়সী অবিন্তা কবিরের প্রাণ কেড়ে নিলেও তার স্বপ্ন কেড়ে নিতে পারেনি জঙ্গিরা। অবিন্তা তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করে দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছার কথা। তার মায়ের কাছেও সেই ইচ্ছার কথা বলেছিলেন।
অবিন্তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ২০১৭ সালের ৪ মার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয় অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন। অবিন্তার নানি নিলু রওশন মোরশেদ বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন দেখেছিল অবিন্তা। সবসময় সে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পক্ষে কথা বলত। অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন করা হয়েছে তার স্বপ্নপূরণের জন্যই।
অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, অবিন্তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলার বিষয়ে কাজ করছে সংগঠনটি। বৃদ্ধাশ্রম গড়াসহ সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের জন্য আবাসিক স্কুল, বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে ফাউন্ডেশন থেকে। অবিন্তা কবিরের স্বপ্নপূরণে রাজধানীর ভাটারার ১০০ ফিট এলাকায় একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে অবিন্তা ফাউন্ডেশন। স্কুলটিতে রয়েছে ৮০ শিক্ষার্থী।
অবিন্তা কবিরের স্মৃতি সংরক্ষণে এবং চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও অনুষদ সদস্যদের ব্যবহারের জন্য একটি সাইবার সেন্টার ও আর্কাইভ চালু করেছে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন। এটি ২০১৭ সালের ২৪ মে চালু করা হয়। এ সাইবার সেন্টারের নামকরণ করা হয় অবিন্তা কবিরের নামে।
ফারাজ আইয়াজ হোসেন
বিশিষ্ট শিল্পপতি ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মেয়ে সিমিন হোসেনের দুই ছেলের মধ্যে ফারাজ দ্বিতীয়। ফারাজ সেই রাতে খাওয়া-দাওয়া করতে ওই রেস্টুরেন্টে গিয়ে নিহত হন। ফারাজ ট্রান্সকম গ্রুপে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজও করেছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে লেখাপড়া করতেন।
ফারাজে স্মৃতি রক্ষায় ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করা হয় ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন। মানুষের কল্যাণে কাজ করছে এই ফাউন্ডেশন। ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার বিতরণ, উত্তরবঙ্গে শীতবস্ত্র বিতরণ, রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে ত্রাণ বিতরণ, দুস্থ শিশুদের জন্য বিনামূল্যে চক্ষুশিবির পরিচালনা, দুস্থ রোগীদের জন্য ডায়াবেটিস পরীক্ষা ও চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি আরও অনেক সামাজিক কাজ করছে এই ফাউন্ডেশন।
ইশরাত আখন্দ
ফারাজের বন্ধু ইশরাত আখন্দও এ রাতে নিহত হন জঙ্গিদের হাতে। হলি আর্টিজানের হামলার রাতে ৮টার দিকে রেস্টুরেন্টের সামনে ইশরাত আখন্দকে নামিয়ে দিয়ে যায় তার ড্রাইভার। বন্ধু নাদিয়া ইসলামের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা ছিল ইশরাতের। কিন্তু নাদিয়া আসতে পারেননি। সেখানে আটকা পড়েছিলেন ইশরাত। সেখানে ইশরাতকে জবাই করে হত্যা করে জঙ্গিরা।
স্থানীয় ডেএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনালের মানব সম্পদ বিভাগের পরিচালক ইশরাত ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান ক্রিয়েটিভসে ছিলেন। তিনি গ্রামীণফোন ও ওয়েস্টিন হোটেলেও কাজ করেছেন।
এইচ এম/ এফসি