ব্যাংকের লভ্যাংশের সীমা বেধে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ১১, ২০২০, ১০:০৮ পিএম ব্যাংকের লভ্যাংশের সীমা বেধে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

২০১৯ সালে ব্যাংকগুলোর মুনাফার বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষণা নির্ভর করবে ওই ব্যাংকের মূলধন ভিত্তির ওপর। সবচেয়ে ভালো মূলধন থাকা ব্যাংক ১৫ শতাংশ নগদসহ সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে। এভাবে মুলধন অনুযায়ী কতটুকু লভ্যাংশ দেওয়া যাবে তার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে সব ক্ষেত্রে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লভ্যাংশ বিতরণের ওপর বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে।

সোমবার (১১ মে) এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।

সার্কুলারে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে সৃষ্ট চাপ থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহৎ শিল্প ও সিএমএসএমই খাতে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা বাস্তবায়নে সহজে অর্থের সংস্থানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে দু’টি বড় পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করেছে। সামগ্রিকভাবে  চাপ মোকাবেলা করে ব্যাংকগুলো যেন দেশের অর্থনীতিতে যথাযথ অবদান রাখতে পারে সে লক্ষ্যে মুনাফা অবন্টিত রেখে মূলধন শক্তিশালী করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তারল্য বজায় রাখা একান্ত অপরিহার্য। ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা এবং শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০১৯ সালে ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে এই নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডেফারেল সুবিধার অধীন নয় (প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় নেয়নি যে ব্যাংক) এমন ব্যাংকের মূলধনের পরিমাণ ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের সাড়ে ১২ শতাংশ বা তার বেশি হলে সামর্থ্য অনুসারে ওই ব্যাংক সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে। ডেফারেল সুবিধার অধীন না থাকা যেসব ব্যাংকের মূলধন ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশের মধ্যে তারা সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ নগদসহ ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে। আর ডেফারেল সুবিধার আওতায় থাকা যেসব ব্যাংকের সম্পূর্ণভাবে প্রভিশন সমন্বয়ের পর মূলধন সংরক্ষণের হার ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ বা তার বেশি সে সব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ নগদসহ ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে। আর ডেফারেল সুবিধা সমন্বয়ের পর যেসব ব্যাংকের মূলধন ১১ দশমিক ২৫ শতাংশের কম তবে ন্যূনতম ১০ শতাংশ হবে তারা ৫ শতাংশ স্টক দিতে পারবে। যেসব ব্যাংক  লভ্যাংশ দিয়েছে তাদের লভ্যাংশের হার এই নির্দেশনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে তা স্থগিত করে শিগগির ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের হার ১০ শতাংশের কম হলে ওই ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিসেম্বর ভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, ১২টি ব্যাংকের ২২ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি ছিল। নানান ছাড় নিয়ে গতবছরের শেষ প্রান্তিকে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ২১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা কমে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকায় নেমেছে। তবে তা প্রকৃত আদায় না হওয়া এসব ঋণের বিপরীতে আগের মতোই ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতির আলোকে ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকগুলোকে মূলধন রাখতে হয়। ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে বর্তমানে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকি ভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকা, এর মধ্যে যেটি বেশি ন্যূনতম সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হয়। এর বাইরে আপতকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় বা কনজারবেশন বাফার হিসেবে ব্যাংকগুলোকে ২০১৬ সাল থেকে বছরে অতিরিক্ত নির্দিষ্ট হারে হারে মূলধন রাখতে হচ্ছে। এভাবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে আপতকালীন সঞ্চয়সহ প্রতিটি ব্যাংকের মূলধন হওয়ার কথা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের সাড়ে ১২ শতাংশ।

গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোতে মূলধন সংরক্ষণের হার নির্ধারিত সীমার ওপরে থাকলেও সরকারি ব্যাংকের প্রভাবে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের মূলধন সংরক্ষণের হার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

এসএমএম

আরও সংবাদ