• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০১৯, ০৯:১৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৭, ২০১৯, ১০:২২ পিএম

জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাতকাহন

জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাতকাহন
গোলাম মোস্তফা

বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়- এটা এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার। সবাই স্বীকার করছে- বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক খাত ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জনের পথে। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকার ব্যয় প্রায় আড়াইগুণ বৃদ্ধি করেছে। জোরদার করেছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীমূলক নানা কর্মসূচি। বিদেশে প্রায় এক কোটি লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। দেশে বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ। বিশ্বমন্দার অভিঘাত সত্ত্বেও গত এক দশকে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে এবারই ৮ শতাংশের মাইলফলক অতিক্রম করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

উদীয়মান অর্থনীতির দেশের স্বীকৃতিও মিলছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস (পিডবিøউসি) বলছে, ২০৫০ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ তিনটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি। শুধু তা-ই নয়, এ সময়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ভিত্তিতে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৩তম বড় অর্থনীতির দেশ। পিডবিøউসি প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০১৭ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত ৩৪ বছরে তিনটি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় ৫ শতাংশের বেশি হবে বলেছে। এ তিনটি দেশের একটি হলো বাংলাদেশ। বাকি দুটি দেশ হলো ভারত ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৩১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন- এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চের প্রতিবেদনেও এর সত্যতা মিলেছে। বাংলাদেশকে ‘বিগেস্ট রাইজার্স- সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ’ হিসেবে অভিহিত করেছে এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চ। এইচএসবিসির এক প্রতিবেদনে ২০৩০ সাল নাগাদ যেসব দেশের অর্থনীতির আকার  দ্রুত বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, সে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান থাকবে সবার ওপরে। এর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- ফিলিপাইন, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশকে ছাড়িয়ে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৬ ধাপ এগিয়ে ২৬তম স্থান দখল করে নেবে।

 স্বাভাবিক নিয়মে জিডিপির প্রবৃদ্ধি মানে হলো সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন। এতে একদিকে যেমন নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আয় বাড়ে, বাড়ে তাদের জীবনযাত্রার মান; অপরদিকে কমে দারিদ্র্যের হার। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরও কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য বিমোচনে তেমন প্রভাব না পড়ায় সাধারণ মানুষ ধরে নিচ্ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাবে নিশ্চয় কোনো শুভঙ্করের ফাঁকি আছে 

বাংলাদেশের এ উত্তরণ ঘটে ১৯৯১ সালে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর। তখন থেকেই দেশ ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে। তবে এই এগিয়ে যাওয়ার পথ কোনো সময়ই মসৃণ ছিল না। মূলত এই এগিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতার শুরু ২০০৯ সাল থেকে। তখনকার সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রবৃদ্ধির হার ৬-তে ওঠে। তার পর ৭-এর ওপরে ওঠে। তখন থেকে প্রতিবছরই এ প্রবৃদ্ধির হার কিছু কিছু করে বাড়ছে। সমসাময়িককালে এভাবে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির হার পৃথিবীর আর কোনো দেশ নেই। অতিঅল্প সময়ে বাংলাদেশ এটা অর্জন করতে পেরেছে। বাংলাদেশের সর্বশেষ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে এটা ৮ শতাংশের ওপরে যাবে বলে ইতোমধ্যে প্রাক্কলন করা হয়েছে।

দেশে ধারাবাহিকভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেলেও এর সুফল বা উপকারিতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহও কম নয়। এর গুণগতমান নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। সরকার বলছে, বৃত্ত ভেঙে রেকর্ড গড়ছে জিডিপির প্রবৃদ্ধি। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হলেও আশানুরূপ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না; কমছে না আশাব্যঞ্জক দারিদ্র্যের হার। স্বাভাবিক নিয়মে জিডিপির প্রবৃদ্ধি মানে হলো সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন। এতে একদিকে যেমন নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আয় বাড়ে, বাড়ে তাদের জীবনযাত্রার মান; অপরদিকে কমে দারিদ্র্যের হার। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরও কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য বিমোচনে তেমন প্রভাব না পড়ায় সাধারণ মানুষ ধরে নিচ্ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাবে নিশ্চয় কোনো শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও এ রকমই বলে আসছে।

একটি দেশের অর্থনীতির ভাল-মন্দ হিসাব করতে প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে আসে তা হচ্ছে জিডিপি। সাধারণভাবে ভোক্তার ভোগ, সরকারি ব্যয়, বিনিয়োগ ও নিট রফতানি- এ চারটি উপকরণযোগে হয় জিডিপি। এর অর্থ হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়লে জিডিপি বাড়ে। কারণ এতে ভোগ বাড়ে। এ চাহিদা কীভাবে মেটানো হলো-  আমদানি করে না দেশীয় উৎপাদন দিয়ে, তা নিয়ে জিডিপির প্রত্যক্ষ কোনো মাথাব্যথা নেই। অনেকের মতে, চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমেও যদি বাড়তি চাহিদা মেটানো হয়, তাও জিডিপি বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। বিনিয়োগ বাড়লে জিডিপি বাড়ে। এ বিনিয়োগ করে আপনি কি পারমাণবিক বোমা বানালেন, না জীবনরক্ষাকারী ওষুধ তৈরি করলেন তা হিসাবের দায়িত্ব জিডিপির নয়। সরকারি ব্যয় উৎপাদনশীল খাতে না অনুৎপাদনশীল খাতে হলো, তা নিয়েও জিডিপির কোনো  ভাবনা নেই। ব্যয় বেড়েছে, তাই জিডিপি বেড়েছে।

অর্থনীতির নির্ণায়ক হিসেবে এ প্রবৃদ্ধি হার যে বিপজ্জনক হতে পারে, তারও অনেক উদাহরণ আছে। এক্ষেত্রে আফগানিস্তানের কথাই ধরা যাক। বিগত কয়েক বছর ধরেই দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। অর্থনীতির সাদামাটা বিচারে দেশটির অর্থনীতি খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে। সত্যিই কি তাই! দেশটিতে বোমার ঝনঝনানিতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওষুধ দিয়ে সামাল দিতে পারছে না। সরকার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনছে তালেবানদের শায়েস্তা করার জন্য। দাতাদের কাছ থেকে ধার করে অর্থ আনছে। ব্যয় করছে জঙ্গিবাদ ঠেকাতে, জনগণের খাদ্য ও মানবিক সেবা দিতে। আর রফতানি করছে প্রাকৃতিক সম্পদ। সে কারণে নিট রফতানির অংকটাও তাদের খারাপ নয়। কিন্তু আসলেই কি আফগানিস্তান সরকার ও জনগণ ভালো আছে! একই কথা বলা যায় পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও। পাকিস্তানে নিরাপত্তার জন্য যে ব্যয় করা হচ্ছে, তাতে অভ্যন্তরীণ বাজারে যে চাহিদা তৈরি হচ্ছে, তা দিয়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই বৃদ্ধি পাকিস্তানের জনগণের ভালোর জন্য কতটুকু অবদান রাখছে তা দেখার দায়িত্ব কিন্তু জিডিপি প্রবৃদ্ধির নয়।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির আরেকটি নেতিবাচক দিক দেখা দিয়েছে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে। চীন তিন দশক ধরে গড়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ভারতও প্রায় দুই দশক ধরে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোতে পারেনি দেশ দুটির দারিদ্র্যপীড়িত ও নিম্নআয়ের বিশাল জনগোষ্ঠী। এর ফলে ধনী-গরিব বৈষম্য অনেক বেড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক সমস্যা। শ্রমিকের মজুরিও প্রায় চারগুণ বেড়েছে চীনে। তারপরও সেখানে শ্রমিকের নানা সংকট দেখা দিয়েছে। এত প্রবৃদ্ধির পরও দেশ দুটিতে মধুর নহর বইয়ে যায়নি।

‘‘রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলোয় যেসব সমস্যা রয়েছে, তা ধীরে ধীরে সংক্রমিত হচ্ছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতেও। অথচ ব্যাংক হচ্ছে কোনো দেশের আর্থিক খাতের হৃৎপিণ্ড। হল-মার্ক, বিসমিল্লাহসহ অন্যান্য কোম্পানি কত টাকা নিয়ে গেল এবং এই টাকা জিডিপির তুলনায় কত কম বা বেশি, সেটা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হচ্ছে, এসবের মাধ্যমে পুরো আর্থিক খাতই প্রচণ্ডভাবে আজ ক্ষতিগ্রস্ত’’

জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দিয়ে আসলে অর্থনীতির চলমান হালচাল খুব একটা পরিষ্কার বোঝা যায় না। পরিষ্কার বোঝা যায় না বোঝা যায় না দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থাও। তাই এ নিয়ে আমাদের বিতর্ক অহেতুক ও নিরর্থক বলেই মনে হয়। সাধারণ মানুষের অবস্থা বোঝার জন্য এবার দেখা যাক দেশের পরিসংখ্যান কী বলে! পরিসংখ্যান ব্যুরোর সম্প্রতি কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের কর্মীদের প্রকৃত আয়ের সূচকে দেখা যায়, অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের মজুরি ২০১০-১১ থেকে ২০১৪-১৫ সময়ে বেড়েছে ২৪.৭ শতাংশ। কিন্তু এ সময়ে ভোক্তামূল্য সূচক বেড়েছে ৩২.৬ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১০-১১-এর তুলনায় শ্রমিকের প্রকৃত আয় কমেছে ৭.৯ শতাংশ। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার দাবি করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ তাদের আয়-বৃদ্ধি থেকে শুধু বঞ্চিতই হয়নি, বরং তাদের আয়ও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সবাই সমানভাবে পাচ্ছে না। ফলে দিন দিন আয়বৈষম্য বাড়ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপ-২০১৬ বলছে, দেশের সব মানুষের যত আয়, এর মাত্র ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ আয় করেন সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষ। ছয় বছর আগেও মোট আয়ের ২ শতাংশ এ শ্রেণির মানুষের দখলে ছিল। অন্যদিকে সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষের আয় বেড়ে হয়েছে মোট আয়ের ৩৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। ছয় বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুফল সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের ভাগ্যে না জুটলেও দেশে কোটিপতির চাষ কিংবা টাকা পাচার থেমে নেই। বাংলাদেশ থেকে ২০১৩ সালেই পাচার হয়ে গেছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। ২০০৪-১৩ সময়কালে এই পাচারের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটের ১৪৬ শতাংশ। এমন খবরটি আমাদের জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা এবং পরামর্শদাতা সংগঠন গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি। লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাচ্ছে।

আসলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির জিগিরের আড়ালে অর্থনীতির বড় বড় দুর্বলতাগুলো ঢাকা পড়ে আছে। অর্থনীতির এসব দুর্বলতার মধ্যে একটি হচ্ছে আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনা। রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলোয় যেসব সমস্যা রয়েছে, তা ধীরে ধীরে সংক্রমিত হচ্ছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতেও। অথচ ব্যাংক হচ্ছে কোনো দেশের আর্থিক খাতের হৃৎপিণ্ড। হল-মার্ক, বিসমিল্লাহসহ অন্যান্য কোম্পানি কত টাকা নিয়ে গেল এবং এই টাকা জিডিপির তুলনায় কত কম বা বেশি, সেটা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হচ্ছে, এসবের মাধ্যমে পুরো আর্থিক খাতই প্রচণ্ডভাবে আজ ক্ষতিগ্রস্ত। অর্থনীতির দ্বিতীয় দুর্বলতা হচ্ছে, বাছবিচার বা মূল্যায়নহীন বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ। বড় অবকাঠামো আমাদের বেশ প্রয়োজন রয়েছে। তবে এগুলোর মূল্যায়নের কাজটিও থাকা দরকার। বাস্তবায়নের একটা পরিকল্পনা থাকা দরকার, যার খুব অভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো না থাকাটা আমাদের অর্থনীতির তৃতীয় বড় দুর্বলতা। এক্ষেত্রে বড় ব্যাপার হচ্ছে আস্থার অভাব। অর্ধেক জীবন কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, বাকি অর্ধেক বাংলাদেশে- এ রকম বহু মানুষ আমাদের দেশে রয়েছে। এক্ষেত্রে ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডের উদাহরণ আমরা দিতে পারি। ফিলিপাইন অনেক সম্ভাবনার দেশ হওয়ার পরও তেমন উন্নতি করতে পারেনি। কারণ, ফিলিপাইনের লোকেরা নিজেদের সম্পদ জমা রাখত যুক্তরাষ্ট্রে। আর থাইল্যান্ডের শিল্পপতিরা কখনোই তাদের সম্পদ বিদেশে নিয়ে যায়নি। দেশটি এগিয়েছে নিজের শক্তিতেই। সম্পদ পাচার রোধে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশকেও এর খেসারত দিতে হবে। দেশে এখন প্রয়োজন টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন। তা না হলে দীর্ঘমেয়াদি সুফল আমরা পাব না।

স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় অর্ধশত বছর পর দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জিত হলেও সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আজও মেলেনি। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটা যেমন সত্য, তেমনি সত্য- আমরা এখনও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি; যা এতদিনে পৌঁছার কথা ছিল। তাই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে সংঘাত-সংঘর্ষ পরিহার করে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনকল্যাণে মনোনিবেশ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দেশের সাধারণ মানুষের এটাই প্রত্যাশা।