• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০১৯, ০৯:৫৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০১৯, ০৮:০৮ পিএম

ব্যাংকের সুদহার না কমলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে

ব্যাংকের সুদহার না কমলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে
-প্রতীকী ছবি

বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ গত কয়েক মাস ধরে কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ায় কমে গেছে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। এছাড়াও গত কয়েকবছর ধরে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগও একই বৃত্তে ঘুরছে। ব্যাংকের সুদের হর না কমলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়বে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কাঙ্খিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল ব্যাংকের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা। কিন্তু ব্যাংকগুলো সুদহার কমায়নি। নানা অজুহাতে এখনো ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদহার ১৪-১৬ শতাংশ পর্যন্ত নিচ্ছে। এই কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করলেও তা অর্জন সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় কমে গেছে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। এতে বিনিয়োগের ওপর ভর করে অর্জিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা বাধার মুখে পড়বে। 

বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকের ঋণের সুদহারকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ঋণের সুদহার বেশি হওয়াতে উদ্যেক্তারা ঋণ নিবেননা। এতে বিনিয়োগও বাড়বে না। এ জন্য প্রয়োজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসির পরিবর্তন। ব্যাংকগুলো যদি সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ বিতরণ না করে তাহলে কি করা যাবে। দেখা গেছে বড় বড় ঋণের ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দিতে হবে। তাই অনেক ক্ষেত্রে এসব কৌশল নিতে পারে ব্যাংকগুলো। আর এসব কারণেই মূলত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমেছে। তবে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে পলিসিতে পরিবর্তন আনতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দৈনিক জাগরণকে বলেন, বেসরকারি খাতের উপর ভর করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে বাংলাদেশ। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমে যাবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের সুদহার কমিয়ে আনতে হবে। সুদহার কমিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যেগ প্রয়োজন। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি সরকারের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করতে পারে তাহলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমতে থাকবে। এর বিরুপ প্রভাব পড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে।

ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনার বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার ব্যাংক ঋণের সুদহার কমিয়ে আনতে চায়। ব্যাংকগুলো এই নির্দেশনা অবশ্যই মানবে যদি তা বাস্তসম্মত হয়। তারা বলছেন, সরকারের মেঘা প্রকল্পগুলোতে বিশাল বিনিয়োগ হচ্ছে। এর সিংহভাগ অর্থায়ন হচ্ছে ব্যাংক থেকে। এছাড়া বিদ্যুত কেন্দ্রের বিনিয়োগও হচ্ছে ব্যাংক থেকে। এই কারণে ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট বিরাজ করছে। এই অবস্থায় ব্যাংকগুলোর জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমানত সংগ্রহ করা। এই আমানত ব্যাংকগুলো প্রায় ১০ শতাংশ সুদে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এছাড়া সরকারি আমানতের সুদহার ও কমেনি। এই অবস্থায় ১০ শতাংশে আমানত সংগ্রহ করে কিভাবে ৯ শতাংশে ঋণ বিতরণ করবে ব্যাংকগুলো।    

ব্যাংক ঋণের সুদহার নিয়ে কথা হয় দেশের প্রথম সারির এক বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি জাগরণকে জানান, সরকারের নির্দেশনা সব ব্যাংকই মানবে। কিন্তু বাস্তব সম্মত নির্দেশ না দিলে কিভাবে মানবে ব্যাংকগুলো। কারণ ব্যাংক আমানত আনবে ১০ শতাংশ হারে আর ঋণ বিতরণ করবে ৯ শতাংশ সুদে তাহলে ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া হতে হবে। ব্যাংক ঋণ সিঙ্গেল ডিজিটে না নামার প্রধান কারণ হচ্ছে তারল্য সঙ্কট। আর সরকারের মেঘা প্রকল্প থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ খাতে বড় ধরণের অর্থায়ন হয়েছে ব্যাংক খাত থেকে। এই কারণে ব্যাংকগুলো তারল্য সঙ্কটে পড়েছে।

এত উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, সরকারের কাছ থেকে আমানত আমরা যে হারে নিয়েছি। এখনো সেই হার অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রের সুদহার অনেক বেশি তাই মানুষ ব্যাংকে আমানত না রেখে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন। এতে আমানত সংগ্রহ ব্যাংকগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।      
  
ব্যাংকের সুদহারে বিনিয়োগে কি ধরণের প্রভাব পড়ছে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদের সঙ্গে। তিনি দৈনিক জাগরণকে জানান, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমতে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাবে। কারণ বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ না বাড়লে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়বেনা। আর বাংলাদেশের বিনিয়োগের অন্যতম খাত হচ্ছে বেসরকারি খাত। আর এই বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে গেলে কাঙ্খিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হবে বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ।

এআই/এসজেড