• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১২, ২০১৯, ০৮:১৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১২, ২০১৯, ০৮:১৯ এএম

কানুনগো পদে পদোন্নতি, মাঠ প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা

কানুনগো পদে পদোন্নতি, মাঠ প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা

ভূমি মন্ত্রণালয়ের কানুনগো পদে পদোন্নতি নিয়ে নিয়ে মাঠ প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। 

তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত পদটির জন্য ৩৩ বছরেও বিধিমালা তৈরি হয়নি। এ কারণে যে যার মতো করে চেষ্টা করছেন পদোন্নতি পাওয়ার জন্য। এমনকী কয়েকটি পক্ষ পদোন্নতি প্রাপ্তির জন্য মামলাও করেছেন। 

ঐতিহাসিক ৪৮/১১ রায় উপেক্ষা করে খোদ ভূমি মন্ত্রণালয় পদোন্নতি দেয়ার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ অমান্য করে জ্যেষ্ঠতা পাশ কাটিয়ে একটি পক্ষকে দেয়া হচ্ছে পদোন্নতি। এতে মাঠ প্রশাসনের ভূমি জরিপ কার্যক্রমে চরম বিশৃংঙ্খলা দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে জ্যেষ্ঠদের মধ্যে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কানুনগো পদটি মাঠ পর্যায়ের তৃতীয় শ্রেণির পদ ছিল। পরবর্তীতে তা দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে উন্নীত করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পর এ পদের নিয়োগ বিধিমালা হয়নি। ফলে সরাসরি ও পদোন্নতি- কোনো মাধ্যমেই কানুনগো/উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার পদে পদোন্নতি/নিয়োগ হয়নি। 

বর্তমানে এ পদে প্রায় ১৪০০ শূন্য পদ রয়েছে। গত ৩৩ বছর ধরে নিয়োগ বিধিমালা না থাকায় চরম জটিলতা দেখা দিয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের চরম অবহেলার কারণে যে যেভাবে পারে সেভাবে পদোন্নতি নেয়ার চেষ্টা করছেন।

এদিকে রেকর্ড কিপার, খারিজ সহকারী ও কপিষ্ট-কাম-সহকারীদের একটি অংশ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে এ বিষয়ে একটি মামলা করেছেন। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আদালত তাদের পক্ষে রায় দেন। রায় প্রাপ্ত কর্মচারীরা পদোন্নতি পাওয়ার জন্য সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয় বরাবর একাধিক আবেদন করেন। কিন্ত তৎকালীন ভূমি সচিব রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে উচ্চ আদালতে রায় বহাল রাখেন। তবে কিছু মামলা এখনও চলমান রয়েছে। 

সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালের কানুনগো নিয়োগ-বিধিটি সংবিধানের ৭ম সংশোধনী বাতিল হওয়ায় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ঐতিহাসিক ৪৮/২০১১ মামলার আদেশে সাময়িক সসরকারের আমলের জারিকৃত আইন-বিধি প্রো-বিধি বাতিল হয়। উক্ত আদেশে কানুনগো নিয়োগ-বিধিও বাতিল হয়। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় এখানেও সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ মানছেন না অথচ হাইকোর্টের আদেশ মানার জন্য কতিপয় (৫৭১ জন) কর্মচারীদের পদোন্নতি দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। 

সূত্রটি বলছে, ধরে নিলাম হাইকোর্টের আদেশ ভূমি মন্ত্রণালয় মেনে নিচ্ছে কিন্তু এখানেও বড় ধরনের দুর্নীতির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। তার কারণ হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন ১৯৮৪ সালের নিয়োগ-বিধি মোতাবেক পদোন্নতি দেয়ার জন্য কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয়ের পদোন্নতির সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোটি কোটি টাকার বিনিময় ১৯৮৪ সালের কানুনগো নিয়োগ বিধির বর্হিভূত কর্মচারীদের পদোন্নতি দিচ্ছেন। 

অন্যদিকে ভূমি মন্ত্রণালয় সার্ভেয়ারদের (সেটেলমেন্ট) মামলার বিরুদ্ধে কোনও আপিল মামলা করা হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা উক্ত সার্ভেয়ার (সেটেলমেন্ট) কর্মচারীদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজসে আপিল না করে পদোন্নতি দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন।

সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয় হাইকোর্টের রায়ের আলোকে তা বাস্তবায়নের জন্য কনটেমপ্ট মামলার প্রেক্ষিতে পদোন্নতি দিচ্ছে। অথচ ভূমি মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৪৮/২০১১ মামলার অর্থাৎ এই মামলার মাধ্যমে ১৯৮৪ সালে কানুনগো নিয়োগ বিধিমালাটি বাতিল হয়েছে উল্লেখ করলেই হাইকোর্টের কনটেমপ্ট মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পেতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তারা পরস্পর যোগসাজসে সার্ভেয়ারদের পদোন্নতি দেয়ার জন্য কনটেমপ্ট মামলা দেখিয়ে অন্যায়ভাবে সিনিয়র কর্মচারীদের বঞ্চিত করে সার্ভেয়ারদের পদোন্নতি দিচ্ছেন। 

ভুক্তভোগীরা জানান, সার্ভেয়ার সেটেলমেন্ট কর্মচারীরা ১৯৮৪ সালে কানুনগো নিয়োগ বিধিমালায় তাদের পদবি ফিডারভুক্ত নেই। যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৪৮/২০১১ মামলার আদেশে কানুনগো বিধিমালা বাতিল হয়েছে। তাই সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করা উচ্চ আদালত অবমাননার সামিল। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় ইচ্ছে করে ট্রাইব্যুনাল, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের রায়প্রাপ্ত ১০/১৫ বছর সিনিয়র কর্মচারীদের বঞ্চিত করে সার্ভেয়ারদের পদোন্নতি দিচ্ছে। 

আরও অভিযোগ রয়েছে, কানুনগো পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির পদ। তাই পদোন্নতির জন্য পিএসসি (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) বরাবর নামের তালিকা অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করতে হয়। 

জানা গেছে, পিএসসি তাদের চিঠিতে সার্ভেয়ার (সেটেলমেন্ট), ট্রাভার্স সার্ভেয়ার ও ডি/ম্যান-কাম-এরিয়া এস্টিমেটর কাম সিটকিপার পদগুলো ফিডারভুক্ত পদ কি-না, তা জানতে চায় সচিব ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাবর।

ভূমি মন্ত্রণালয় পিএসসির চিঠির প্রেক্ষিতে জানায়, ১৯৮৪ সালে কানুনগো নিয়োগ বিধি অনুযায়ী সার্ভেয়ার (সেটেলমেন্ট), ট্রাভার্স সার্ভেয়ার ও ডি/ম্যান-কাম-এরিয়া এস্টিমেটর কাম সিটকিপার পদগুলো ফিডারভুক্ত পদ নয়।

এ বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী দৈনিক জাগরণকে বলেন, পদোন্নতির বিষয়টি একান্ত প্রশাসনিক কাজ, আইনের মারপ্যাঁচে কোনো সমস্যা থাকলে পদোন্নতি হবে না।

তবে অভিযোগ উঠেছে, এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসনের এক যুগ্ম সচিবের কারসাজিতে পদোন্নতি দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মন্ত্রণালয়। সুপ্রিম কোর্টের রায় উপেক্ষা করে বিধি-বহির্ভূত পদোন্নতি দিলে মন্ত্রী ও ভূমি সচিব প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন নিঃসন্দেহে- এ শঙ্কা করছেন পদোন্নতি বঞ্চিতরা।

টিএইচ/এসএমএম