• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৪, ২০১৯, ১২:২৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৪, ২০১৯, ০৬:২৫ পিএম

অনস্ট্রিট পার্কিং

ঘণ্টায় ১৫ টাকা পার্কিং দিতেও কষ্ট যানবাহন মালিকদের

ঘণ্টায় ১৫ টাকা পার্কিং দিতেও কষ্ট যানবাহন মালিকদের

সরকার অনুমোদিত স্থানে প্রতিঘণ্টায় ১৫ টাকা পার্কিং ফি দিতেও গায়ে লাগে যানবাহন মালিকদের। নানা অজুহাতের কাঁধে ভর করে ফি আদায়কারীদের সাথে যানবাহন মালিক-চালকরা বচসা করেই যায়।

পার্কিং সমস্যা এড়াতে ২০১৭ সালের শেষভাগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) চালু করে অনস্ট্রিট পার্কিং ব্যবস্থা। এর তত্ত্বাবধায়নে আছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এসব জায়গা ব্যক্তি মালিকানায় ইজারা দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। চাহিদা বিবেচনায় ধীরে ধীরে পার্কিং এরিয়া বাড়ানোর ঘোষণাও আছে ডিএমপির পক্ষ থেকে। বর্তমানে ডিএমপির ট্রাফিক পূর্ব বিভাগে ১৩, ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগে ৯, উত্তর বিভাগে ২৫, পশ্চিম বিভাগে ৭টি স্থানে অনস্ট্রিট পার্কিং করা হচ্ছে।

গত ১১মে দুপুর ২টার দিকে বনানী স্টার কাবাবের বিপরীতে থাকা অনস্ট্রিট পার্কিংস্থানে ফি আদায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত রবিউলের সাথে তর্ক করছিলেন একটি প্রাইভেট কার চালক ইমরান। ইমরান বলছিলেন, ৫মিনিটও গাড়ি রাখা হবে না, তাহলে পার্কিং ফি কেন দেব? পাল্টা জবাবে রবিউল বলছিলেন- এক সেকেন্ড রাখলেও দিতে হবে ১৫ টাকা, এক ঘণ্টাতেও ১৫টাকা। এটাই সরকারি নিয়ম। তারপরও মানছিলেন না ইমরান। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কয়েকজন প্রাইভেট কার চালক ও কিছু পথচারীর মধ্যস্থতায় ইমরান ১৫ টাকা দিতে বাধ্য হন। কিন্তু রবিউলকে কটুক্তি করেই যাচ্ছিলেন।

ক্ষুব্ধ রবিউল দৈনিক জাগরণকে বলেন, চিন্তা করছেন, মাত্র ১৫টাকা, এইটা কোনো টাকা হইলো। এইটা দিতে যার গায়ে লাগে, তার এই লাখ লাখ টাকা দামের গাড়ি চালানো কী দরকার?

৯ মে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এলিফ্যান্ট রোড বাটা সিগন্যাল এলাকায় দেখা যায়, ফি আদায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী বাশারের সাথে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত ছিলেন মাইক্রোবাস চালক সুজন। সুজন বলছিলেন, ভালভাবে তো রাখতেই পারলাম না, আবার টাকা কিসের? গাড়ির মাথা বের হয়ে রইছে, এটা রিস্কি। এজন্য মাথার সামনে আমারেই খারায়া থাকতে হইব?

পাল্টা উত্তরে বাশার বলছিলেন, এটা সরকার নির্ধারিত জায়গা, যেভাবেই পার্কিং করেন না কেন, টাকা দিতেই হবে। সব গাড়ি লাইন ধরে সোজা করে রাখতে পারছে, আপনি পারছেন না, সেটা কী আমার দোষ? জায়গার দোষ?

কিন্তু সুজন তেজি হয়ে বলতে লাগলেন, দিমু না যা, তর সরকাররে নিয়ায়।

এক পর্যায়ে পরিস্থিতি বেগতিক হবার লক্ষণ দেখে কিছু পথচারী এগিয়ে আসেন এবং বহু বুঝিয়ে শুনিয়ে ১৫ টাকা ফি দিতে বাধ্য করা হয় সুজনকে। কিন্তু সুজন থামছিলেনই না, গালমন্দ করেই যাচ্ছিলেন বাশারকে। 

ক্ষুব্ধ স্বরে বাশার দৈনিক জাগরণকে বলেন, প্রতিদিনই এমন ক্যাঁচাল করতে হয়। আগে যখন এমনে পার্কিং করলে পুলিশ মামলা দিতো, রেকার দিতো, সেটাই ভাল ছিল, ১৫টাকা ফি দিয়া ওগোর পেট ভরে না।

সুজন বলেন, টাকা তো দেবই, কিন্তু জায়গাটাতো ভাল হতে হবে।

প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অনস্ট্রিট পার্কিং স্থানে যানবাহন রাখার নিয়ম। প্রতি ঘণ্টায় বাই সাইকেল ৫টাকা, মোটর সাইকেল ১০ টাকা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস মিনি পিকাপ, লরি-ট্রাক ইত্যাদি যানবাহনকে ১৫টাকা দিতে হয়।

বেইলি রোডের উত্তর পাশে অনস্ট্রিট পার্কিং স্থানে কাজ করছিলেন ফি আদায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী নজরুল। তিনি বলছিলেন, প্রতিদিন বেশকিছু মানুষের সাথে গণ্ডগোল করে কাজ করতে হয়। কেউ কয়, ৫ মিনিট থাকব, কেউ কয় যামু আর আমু, কেউ কয় রাস্তায় পার্কিং এর আবার টেকা কিসের- নানা ক্যাঁচাল। এতো কথা বইলা কী কাজ করন যায়? ১৫ টাকা কী খুব বেশি কিছু?

যেখানে অনস্ট্রিট পার্কিং করার ব্যবস্থা আছে, সেখানে সাইনবোর্ড লিখা আছে, তাতে বড় করে এ বিষয়ে লিখা আছে। কোথা থেকে পার্কিং শুরু, কোন পর্যন্ত শেষ।

ডিএমপির ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের মধ্যে দয়াগঞ্জ মোড় হতে জুরাইন রেলগেট (মীর হাজিরবাগ নতুন বাজার) এর এক পাশে ১০০ টি, মতিঝিলস্থ বিনিয়োগ বোর্ড হতে পিপলস ইন্সুরেন্স পর্যন্ত রাস্তার এক পাশে ১২০ টি, বায়তুল মোকারমস্থ স্বর্ণ মার্কেট লিংক রোডের এক পাশে ৩০ টি, মতিঝিলস্থ জনতা ব্যাংক প্রধান কার্যালয় হতে বক চত্বর পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে ৩০ টি, মতিঝিলস্থ বাবে রহমত ক্রসিং হতে এজিবি কলোনি বাজার পর্যন্ত রাস্তার এক পাশে ৬০ টি, নয়া পল্টনস্থ পলওয়েল মার্কেটের এক পাশে ১৮ টি, মতিঝিলস্থ কমিশনার গলি হতে মন্দির পর্যন্ত রাস্তার এক পাশে ২৫ টি, মতিঝিলস্থ বন ও শিল্প ভবন হতে শাপলা চত্বর পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে ৪০টি , মতিঝিলস্থ ২৪ তলা বিল্ডিং থেকে অ্যালিকো ভবন পর্যন্ত সড়কের এক পাশে ৫০ টি, কমলাপুর পীরজঙ্গী মাজার হতে কমলাপুর পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে ৪০ টি, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের সামনের রাস্তার উভয় পাশে ৪০ টি, মতিঝিলস্থ আল-হেলাল পুলিশ বক্স হতে বাবে রহমত পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে ২৫ টি, মাতুয়াইল মাতৃসদন হাসপাতাল থেকে হাশিম রোড পর্যন্ত সার্ভিস রোডের এক পাশে ১০০ টি গাড়ির জন্য অনস্ট্রিট পার্কিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল হয়ে নভী কল্যাণ ফাউন্ডেশন পর্যন্ত রাস্তার এক পাশে ৯০ টি, বেইলী রোডের উত্তর পাশে ১০০ টি, এলিফ্যান্ট রোডস্থ বাটা সিগন্যাল হতে গাউছিয়া মার্কেট পর্যন্ত রাস্তার এক পাশে ৭৫ টি, পলাশী হতে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত রাস্তার এক পাশে ১১৭ টি, নিউমার্কেট ১নং গেইট রাস্তার উভয়পাশে ২৫০ টি, নিউমার্কেট ২নং গেট হতে ৪নং গেট পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশে ১৫০টি, ধানমণ্ডি ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ নং রোড, মিরপুর রোডের সাথে গ্রিণ রোডের সংযোগকারী রাস্তার উভয় পার্শ্বে ৭৫ টি, সাত মসজিদ রোডের পশ্চিম পার্শ্বে (জিগাতলা হতে বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতাল পর্যন্ত) ১০০ টি গাড়ির জন্য অনস্ট্রিট পার্কিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

ট্রাফিক উত্তরের জসিম উদ্দিন সংলগ্ন উত্তরা ১নং সেক্টর এর সার্ভিসলেনে হোটেল মেপললিপ হতে সাউথ-ইস্ট ব্যাংক পর্যন্ত রাস্তার পূর্ব পাশে ৯০টি, জসিম উদ্দিন সংলগ্ন উত্তরা ৩নং সেক্টরের সার্ভিস লেনে জিবিটি টাওয়ার (ব্র্যাক ব্যাংক) হতে সিয়াম টাওয়ার পর্যন্ত রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে ৩০টি, জসিম উদ্দিন সংলগ্ন উত্তরা ৩নং সেক্টরের সার্ভিস লেনে এবিসি টাওয়ার হতে উত্তরা টাওয়ার (লাজ ফার্মা) পর্যন্ত রাস্তার উত্তর পাশে ২৫টি, জসিম উদ্দিন সংলগ্ন এবিসি টাওয়ার হতে এস্টনিস্ট শপিং সেন্টার পর্যন্ত রাস্তার পূর্ব পাশে ৩০টি, উত্তরাস্থ সিঙ্গাপুর প্লাজা হতে রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশে ৫০টি, উত্তরাস্থ লতিফ ইম্পেরিয়াল খাজানা হোটেল হতে কুশল সেন্টার পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশে ১০টি, উত্তরাস্থ কুশলম সেন্টার হতে বেলী কমপ্লেক্স পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশে ২০টি, উত্তরাস্থ বেলী কমপ্লেক্স হতে লন্ডন প্লাজা পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশে ২৫টি, উত্তরাস্থ লন্ডন প্লাজা হতে এস.বি প্লাজা পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশে ১৫টি, উত্তরাস্থ এসবি প্লাজা হতে এবি মার্কেট পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশে ৩০টি, উত্তরাস্থ এবি মার্কেট হতে আমির কমপ্লেক্স পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম ও রবীন্দ্র সরণীর উত্তর পাশে ২০টি, উত্তরা আমির কমপ্লেক্সের পশ্চিমে এইচএম প্লাজা পর্যন্ত রাস্তার পূর্ব পাশে ৯০টি, বনানী ১৭ নং রোডের হাউজ নং-০৫ হতে শুরু করে হাউজ নং-৩৫/এ পর্যন্ত রাস্তার উত্তর পাশে৭৫টি, বনানী ১৭ নং রোডের হাউজ নং-৮ এবিসি টাওয়ার হতে শুরু করে হাউজ নং-৪২ ইকবাল সেন্টার পর্যন্ত রাস্তার উত্তর পাশে ৭৫টি, বনানী রোড নং-১৯/এ এর হাউজ নং-৬২ হতে শুরু করে হাউজ নং-৯৩ পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশে ৪০টি, গুলশান রোড নং-১০৩ এর হাউজ নং-সিইএন (বি)-৫ হতে শুরু করে হাউজ নং-১ পর্যন্ত রাস্তার দক্ষিণ পার্শ্বে ৭০টি, গুলশান রোড নং-১০৯ এর হাউজ নং-সিইএন-৪ হতে হাউজ নং-৭ পর্যন্ত রাস্তার উত্তর পাশে ৫০টি, মহাখালীস্থ স্কয়ার বিল্ডিং এর পশ্চিম পাশে স্কয়ার বিল্ডিং হতে শুরু করে খাবার ঘর হোটেল ৭৭/১ পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশে ২৫টি, মহাখালীস্থ ব্র্যাক ইউনির্ভাসিটির সামনে হাউজ নং-৬৭/৮ হতে শুরু করে মহাখালী কমিউনিটি সেন্টার বিয়্যামগার পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশে ২০টি, তিতুমীর কলেজের সামনে (ব্যাংক এশিয়া) হাউজ নং-৮২ হতে শুরু করে হাউজ নং-৮২ পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশে ১৫টি, উত্তরা ১২নং চৌরাস্তা থেকে দিয়াবাড়ি খালপাড় রাস্তার দক্ষিণ পাশে ৪০টি, মহাখালী ফ্লাইওভারের নীচ হতে সৈনিক ক্লাবগামী ফিডার রোড পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে ২৫টি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলস্থ বিএসটিআই এর পূর্ব-পশ্চিম পাশে ৫টি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলস্থ বিটাক এর পূর্ব-পশ্চিম পাশে ৫টি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলস্থ সোনালী ব্যাংক এর পূর্ব-পশ্চিম পাশে ৫টি গাড়ির জন্য অনস্ট্রিট পার্কিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

ট্রাফিক পশ্চিমে ফার্মগেটস্থ খেজুর বাগান গোল চত্বরের পূর্ব পাশে ৪০ টি, মিরপুর স্টেডিয়ামের পাশে মিল্ক ভিটা রোড এর উত্তর পাশে (লাভ রোড) ১৫ টি, চিড়িয়াখানা রোড (সনি সিনেমা হল হতে চিড়িয়াখানা) ফুটপাত সংলগ্ন মূল সড়কের উভয় পাশে ২০ টি, মিরপুর-১৪ হতে টেকনিক্যাল (প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম রোড এর বশির উদ্দিন স্কুল এর গলি হতে র্যাব-৪ এর কার্যালয় এর গলি পর্যন্ত) মূল সড়কের পূর্ব পার্শ্বে ২০ টি, কঁচুক্ষেত রোডস্থ ইব্রাহীমপুর বাজার রোড ও কঁচুক্ষেত রোড এর সংযোগস্থল হতে উত্তর ও দক্ষিণ প্রধান সড়ক এর পশ্চিম পাশে ২৫ টি, মিরপুর-১৪ বাসস্ট্যান্ড হতে পুলিশ স্মৃতি স্কুল ও কলেজ পর্যন্ত মূল সড়কের দক্ষিণ পাশে ২০ টি, মিরপুর শাহ্ আলী মাজার হতে মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার উত্তর পাশে ২০ টি গাড়ির জন্য অনস্ট্রিট পার্কিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

আরএম/টিএফ