ইসমাঈল মিয়া (৩৫)। তিনি ৩ বছর আগে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকার একটি মুদি দোকানে মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বন্ধুর মোটর সাইকেল দিয়ে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা উবার-পাঠাও ব্যবহার শুরু করেন। এভাবে ২ মাস চালানোর পর দেখেন, ‘উবার-পাঠাওয়ে তার লাভ অনেক বেশি। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রতিদিন ৫০০ টাকা আয় করা সম্ভব, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চালালে একদিনে ১ হাজার টাকা ভাড়া পাওয়া যাবে’।
বুদ্ধি থেকে তিনি কিছু ধারকর্জ ও জমানো টাকা দিয়ে একটি ১২৫সিসির মোটর সাইকেল দিয়ে কাজ শুরু করেন। কিন্তু শুরু করার এক বছরের মধ্যে দেখেন তার আয় কমে গেছে। যেখানে মাসে পেতেন ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সেটা নেমে এসেছে ১৫ থেকে ২০ হাজারে। এরপর ইসমাঈল অ্যাপ ব্যবহার বাদ দিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও রিকশার মতন চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন শুরু করেন।
যাত্রী খোঁজার সময় গত ২৫ মে ফার্মগেট খামার বাড়ি এলাকায় পরিচয় হয় ইসমাঈলের সঙ্গে। তিনি বলেন, একটা সময়ে দেখলাম অ্যাপে কল কম আসছে। কেননা, বিপুল সংখ্যক মোটর সাইকেল এই কাজে নেমেছে। আবার কোম্পানিকে ট্রিপ প্রতি শতকরা ২০-২৫ টাকা কমিশন দিতে হয়, আছে তেল খরচ, মোটর সাইকেল মেরামত খরচ। লোকসান এড়াতে অ্যাপ ছাড়া চুক্তিতে চালানোটাই সঠিক মনে হয়েছে। এটা করার পর দেখলাম, আমার উপার্জন আগের মতন বেড়েছে।
তবে অ্যাপের প্রতি অনীহা শুধু ইসমাঈল মিয়ারই নয়। বহু অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার সাথে যুক্ত বহু মোটর সাইকেল চালক চুক্তিতে ভাড়া যাচ্ছেন। তাদের মতে- অ্যাপে কলের সংখ্যা কমে গেছে, কিন্তু কমিশনের পরিমাণ কমেনি। তাছাড়া প্রায়শই নেটওয়ার্কে ত্রুটি দেখা দেয়, অ্যাপ চালাতে বাড়তি টাকা দিয়ে ইন্টারনেট ক্রয় করতে হয়, ভাল একটি স্মার্টফোন লাগে, অ্যাপ পরিচালনা জটিল মনে হয়।
এভাবে চুক্তিতে চলাচলের বিষয়টি নিয়ে একসময় যাত্রীরা খুব নেতিবাচকভাবে দেখতেন এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করতেন। কিন্তু এখন প্রতিক্রিয়ার ঝাল আগের মতন নেই। যাত্রীরা বাধ্য হয়ে তাল মিলিয়ে চলছেন। কোম্পানির কাছে অভিযোগ করেও সুবিধা হচ্ছে না।
নিয়মিত উবার-পাঠাও ব্যবহারকারী ব্যাংক কর্মী সাজ্জাদ বলেন, দৈনিক যেতে লাগত প্রায় ১৫০ টাকা। প্রতি সপ্তাহে ডিসকাউন্ট পেতাম, তা দিয়ে একশ টাকার মতন লাগত। কিন্তু এখন তো অ্যাপে ড্রাইভারই পাই না। চুক্তিতে যেতে ২০০ টাকা চায়। এগুলো নিয়ে বহু ড্রাইভারের সাথে বহু ঝামেলা করেছি, কিন্তু লাভ নেই। কষ্ট আমারই। এখন বাধ্য হয়ে চুক্তিতেই যেতে হচ্ছে, মাঝে মাঝে অ্যাপ ব্যবহার করি।
যাত্রী রোখসানা বলেন, ছেলেরা না হয় চুক্তিতে গেল। কিন্তু সমস্যা আমাদের। নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে। অ্যাপে গেলে লোকেশন ট্র্যাক হয়। এখন তো যে অবস্থা দেখছি, নিরাপত্তার কারণে এসব ব্যবহারই ছাড়তে হবে।
তিনি বলেন, এখন আর রাইড শেয়ার বলতে কিছু নেই, সব আগের বেবিট্যাক্সি, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশার মতন হয়ে গেছে। ড্রাইভারদের ব্যবহারও অশোভন।
জানার জন্য পাঠাওয়ের বনানীস্থ প্রধান অফিসে যায় দৈনিক জাগরণ। সেখানকার সাধারণ কর্মীরা জানান, অ্যাপ ব্যবহারে ড্রাইভারদের উৎসাহী করতে কাজ করছেন তারা। তারপরও যদি কেউ অ্যাপ ব্যবহার না করেন এবং এ বিষয়ে অভিযোগ আসে, তাহলে একাউন্ট ব্লক করে দেয়া হয়।
তবে দায়িত্বশীল পদস্থ কারও সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। এছাড়াও উবারের ধানমণ্ডি ও উত্তরা অফিসে যোগাযোগ করে সাড়া পাওয়া যায়নি।
আরএম/টিএফ