• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০১৮, ০৬:২৬ পিএম

প্রবৃদ্ধি কি সত্যিই ১০ শতাংশে পৌঁছবে

প্রবৃদ্ধি কি সত্যিই ১০ শতাংশে পৌঁছবে

 

জাপানভিত্তিক পত্রিকা নিক্কেই এশিয়ান রিভিউকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, আগামী তিন বছর নাগাদ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য খুবই আশাব্যঞ্জক। আমাদের লক্ষ্য, আরও বহুদূর এগিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ক্রমেই বাড়ছে। শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে গত ১০ বছরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৮৬ শতাংশ। গত দশকে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দার সূচনা হয়েছিল, তার রেশ এখনো কাটেনি। অনেক উন্নত দেশেরই জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২-৩ শতাংশের বেশি নয়। এ অবস্থায়ও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬-এর ওপরে থেকেছে। এডিবি প্রেসিডেন্ট তাকিহিকো নাকাও জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। 

বাংলাদেশ এখন এক সাফল্যের গল্প। বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে। এ সাফল্য শুধু অর্থনীতিতেই নয়, মানব উন্নয়নেও হয়েছে। স্বাধীনতার পর পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশকে নিয়ে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছিল। কারও কারও মধ্যে এমন ধারণা ছিল, বাংলাদেশ বেশিদিন টিকবে না। সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত রাখায় বাংলাদেশ সম্পর্কে সেই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এখন আশার সঞ্চার হয়েছে।

সরকার অনেক বড় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এটি অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক। দেশে সর্বক্ষণ বিদ্যুতের জন্য রাশিয়ার সহযোগিতায় রূপপুরে তৈরি হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ লাখ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা। এজন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। এরই মধ্যে ১১টি চালু রয়েছে এবং ৭৯টির নির্মাণের পথে। এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের কর্মসংস্থান অত্যন্ত গতিশীল হবে। দেশে বিদেশি কর্মসংস্থানও ব্যাপক হারে চলমান। সেবা খাতও অনেক বিকশিত হয়েছে। এসব খাতের শক্তিশালী ভিত্তি আমরা ইতোমধ্যে তৈরি করে ফেলেছি।

যদি সত্যিই প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হয়, তাহলে এখনই বাস্তবমুখী কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন খাতে আমাদের ব্যবসায়ীদের যে সক্ষমতাও বেড়েছে, সেটা আরও বাড়াতে হবে। সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির সব পথ উন্মুক্ত রাখা।  এ অগ্রগতি ধরে রাখতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। অধিকন্তু উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগও অপরিহার্য। এ ছাড়া দেশের দ্রুত উন্নয়ন করতে চাইলে আয়করের বিষয়টিতেও আমাদের আরও যতœশীল হতে হবে।

এসব অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখার জন্য দরকার সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা। সেটা রক্ষা করতে পারলে আমাদের উন্নয়ন আরও বেশি গতিশীল হবে, যার প্রমাণ আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি। স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। স্বাধীনতার চার দশক পরে এসে সেই পালে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। হাজার বছরের শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস মুছে বাঙালি জাতিকে সমৃদ্ধির সোনালি জগতে নিয়ে যেতে প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার। আমাদের বিশ্বাস, নির্বাচনে যে দলই সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুকÑ সেই অঙ্গীকার নিয়েই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।