ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৭৬টি স্থায়ী মার্কেটের প্রায় ২২ হাজার দোকানের ভাড়া বৃদ্ধি করায় দোকান মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মালিকরা বলছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ দোকান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের নিচতলার দোকানে প্রতি বর্গফুট ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে ভাড়া বাড়ানো নিয়ে মালিকদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের ঠান্ডা লড়াই চলছে।
ভাড়া কমানোর দাবিতে ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনের দোকান মালিকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। এতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দেয়নি। উল্টো আগের চেয়ে দ্বিগুন ভাড়া আদায় কারার চেষ্টা চালাচ্ছে।অনেক দোকান মালিক বর্ধিত ভাড়া দিতে অস্বীকার করায় তাদেরকে দোকানের বরাদ্দ বাতিল করার মতো ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খোদ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী সরদারের নামে এ অভিযোগ উঠেছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ মাচ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কররপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের অনুমোদনক্রমে গত ১৬ জুন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৬. ২০৭. ০১৮. ১০. ০৩. ২১০০. ২০১২/৫৫৩ স্মারকের এক আদেশ বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উপ-আইন ২০১৬ এর (২৩)ধারার বিধান অনুসারে মালিকানাধীন মার্কেটগুলোর দোকান ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে।তবে মালিকরা বলছেন, ভাড়া বৃদ্ধির আইন সাজানো। দ্রুত এই আইন বাতিল করতে হবে। নইলে ব্যবসায়ীরা মার্কেট খোলা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
এছাড়া ও সম্পত্তি বিভাগ থেকে অস্থায়ী বরাদ্দকৃত ৪২টি মার্কেটের মধ্যে সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটের বেজমেন্টের ২৩০টি দোকান এবং সুপার মাকের্টের বেজমেন্টের ১ হাজার ৬৩৫ বগফুট খালি জায়গার ২১টি দোকান ভাড়া বন্ধ রেখে উল্লেখিত তারিখের আদেশ জারি করা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
রাজধানীর কয়েকটি মার্কেটের দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, অস্থায়ী দোকান থেকে প্রতি মাসে মাসোহারা আদায় করে আঙ্গুলফুলে কলাগাছ হয়েছে। এ কারণে অস্থায়ী দোকানের ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ রেখে মালিকানাধীন মার্কেটের ভাড়া বৃদ্ধিই তার প্রমাণ বহন করে।
ঢাকা নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এম এ কাশেম দৈনিক জাগরণকে বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মেয়রকে উস্কে দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭৬টি মার্কেটের প্রায় ২২ হাজার দোকানের ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের উপর চরম জুলুম করা হয়েছে। আর যে সব অস্থায়ী দোকান সম্পত্তি বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেসব দোকানের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। এর মূল কারণ হচ্ছে রাজস্ব কর্মকর্তার মাসোহারা বিষয় এখানে জড়িত। একারণে অস্থায়ী দোকান মালিকদের দোকান ভাড়া বাড়ানো হয়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো.ইউসুফ আলী সরদার দৈনিক জাগরণকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি কমিটির সিদ্ধান্তে দোকান ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। গত ৫ মাস আগে দোকান ভাড়া বাড়ানো হয়। কিন্ত এতো দিনেও বর্ধিত ভাড়া আদায় করা যায়নি।
রাজধানীর কয়েকজন দোকান মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক জাগরণকে বলেন, মধু খাওয়ার জন্য সিটি করপোরেশন মালিকানাধীন মার্কেটের দোকানের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আর অস্থায়ী দোকানের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। এক সিটিতে দুই ধরণের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এর খেশারাত আগামী নির্বাচনে মেয়র সাঈদ খোকনকে দিতে হবে।
নিউ সুপার মার্কেটের অপর দোকান মালিক ওহিদুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন আদি ঢাকার মানুষ। তাকে প্যাচে ফেলতে দোকান ভাড়া বাড়ানোর উৎসাহ দেয়া হয়েছে। তিনি সরলভাবে অনুমোদন দিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। এর মাশুল দিতে হবে আগামী সিটি নির্বাচনে। নগরীর কোনো মার্কেটের মালিক থেকে শুরু করে প্রায় ১ লাখ মানুষ তাকে ভোট দেবে না।
ঢাকা নিউসুপার মার্কেটের বনলতা সুপার মার্কেটের দোকানদার আতিকুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, মরিচের ঝাল পায়খানায় গেলে বোঝা যায়। তিনি বলেন, দোকান মালিকরা ভাড়া কমানোর জন্য দফায় প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এবং মেয়রের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্ত রাজস্ব কর্মকর্তার কারণে এখনো ভাড়া কমানো হয়নি। এর প্রভাব আগামী মেয়র নির্বাচনে পড়বে বলে জানান তিনি।
টি এইচ/বিএস