• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০১৯, ০১:৫২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৬, ২০১৯, ০৪:০২ পিএম

দুর্নীতি করে কেন টাকা বাড়াতে হবে : শেখ হাসিনা

দুর্নীতি করে কেন টাকা বাড়াতে হবে : শেখ হাসিনা
স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা - ছবি : টিভি থেকে নেয়া

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা এই দেশ থেকে মাদক-সন্ত্রাস-দুর্নীতি দূর করতে চাই। এর বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে সেই অভিযান আমরা অব্যাহত রাখব। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে শান্তি-নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আর একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেই উন্নতি সম্ভব। শনিবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন দুর্নীতি করে, চুরি করে টাকা বাড়াতে হবে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি দুর্নীতি, অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে সেটা দিয়ে বিলাস ব্যাসনে জীবনযাপন করা, আর ফুটানি-ফাটানি করা - এটা কখনো এদেশের মানুষ বরদাশত করবে না। অসৎ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার থেকে সৎ পথে নুন-ভাত খাওয়া অনেক মর্যাদার, অনেক সম্মানের, অনেক ভালো। এটাই হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, একজন রাজনীতিবিদের জীবনে কী পেলাম না পেলাম- এ চিন্তা না করে মানুষের জন্য কী দিতে পারলাম সেই চিন্তা করা উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে এখন একটা সমস্যা চলছে। সব দেশেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের দেশে কেন কী কারণে এত অস্বাভাবিকভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে জানি না। যে কারণে আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন আমরা বিমানের কার্গোতে করে পেঁয়াজ আমদানি করে নিয়ে আসছি। আমরা দেখতে চাই এ ধরনের চক্রান্তের সঙ্গে কেউ জড়িত আছে কি না। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় অনেক পণ্যের উৎপাদন বাড়ে, বা উৎপাদক কমে। যেহেতু পেঁয়াজ বেশিদিন রাখা যায় না। কেউ যদি এখন মজুদ করে দাম বাড়াতে চায় তাদের এটাও চিন্তা করতে হবে যে পেঁয়াজ তো একদিন পচেও যাবে। এখন পচা পেয়াজ শুকানোর চেষ্টা হচ্ছে। তাহলে মানুষকে কষ্ট দেয়াটা কেন? এভাবে কারা এর পেছনে আছে সেটাও আমাদের দেখতে হবে। আগামী পরশুর মধ্যে পেয়াজ দেশে পৌঁছবে। সুতরাং চিন্তার কোনো কারণ নেই।

তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে তাদের কামানো অবৈধ অর্থ দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অনেক তদন্ত শুরু করে। এরপর কেয়ারটেকার এসে শুরু করে। কিন্তু কিছু পায়নি। আমেরিকায় আমাদের পরিবারের কার কী আছে সেটি দেখতে বিএনপি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে এফবিআইয়ের একজন সদস্যকে ‘হায়ার’ করে। সেই তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে এলো খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলের দুর্নীতির চিত্র। আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় কিডন্যাপ করে তাকে মেরে ফেলতে বিএনপি ষড়যন্ত্র করেছিল বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ষড়যন্ত্রের গভীরতা অনেক দূর পর্যন্ত।  

বিএনপি সরকারের শাসনামলে দেশে দুর্নীতি আর সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির সময়ে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে। পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই দুর্নীতিবাজ বিএনপি যাতে কখনো ক্ষমতায় যেতে না পারে এজন্য বাংলাদেশের মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। এরা ক্ষমতায় থাকা মানেই দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাবে। এসময় আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী।

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের মঞ্চ  - ছবি : জাগরণ

এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়ে মঞ্চে উঠলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু স্লোগান আর করতালিতে মুখরিত করে তোলে পুরো এলাকা। মঞ্চে উঠে শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিনন্দনের জবাব দেন।

প্রধানমন্ত্রীকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করে নেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ ও সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মেলনের ব্যাজ পরিয়ে দেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্ববায়ক শাহনাজ ইয়াসমিন।

বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকেও পাঠ করা হয়। শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে এবং জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এসময় ৬৪ জেলার প‌ক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগের পতাকা একযোগে উত্তোলন ক‌রেন জেলা সভাপ‌তিরা। সংগঠনের থিম সং এবং ‘জয় বাংলা’ সঙ্গীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এরপর গান পরিবেশন করেন সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম।

সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আা ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, দলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপিসহ আরও অনেকে উপস্থিত আছেন। 

দুপুরের বিরতির পর সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। এখানেই ঘোষণা হবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন নেতৃত্ব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হবে এদিন। গত ১১ ও ১২ নভেম্বর যথাক্রমে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

 এএইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন