• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০১৯, ০৫:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৬, ২০১৯, ০৫:১৩ পিএম

কর্মশালায় বক্তারা

অভিবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন

অভিবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন

নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি (জিসিএম) বাস্তবায়ন করতে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা। 

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে জিসিএম নিয়ে একটি কর্মশালায় তারা একথা বলেন।  বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের মাইগ্রেশন নেটওয়ার্ক এই কর্মশালার আয়োজন করে।

২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা আন্তর্জাতিকভাবে অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয় নিয়ে একসঙ্গে আলোচনায় বসেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ‌‍‘নিউ ইয়র্ক ডিক্লারেশন ফর রিফিউজিস অ্যান্ড মাইগ্রেন্টস’ গ্রহণ করে। ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্র এটাও অনুভব করে যে, বিশ্বব্যাপী মানুষের চলাফেরা এবং ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার জন্য একটি ব্যাপক উদ্যোগ ও কাঠামো প্রয়োজন। 

এমন প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, দায়িত্ব-বণ্টন, বৈষম্যহীনতা, এবং মানবাধিকারের মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে ২০১৮ নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি (জিসিএম) স্বাক্ষরিত হয়। যেখানে বলা হয়, অভিবাসনের সামগ্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সুবিধা বড়ানোর জন্য একটি সহযোগিতামূলক মানসিকতা প্রয়োজন যেটি একজন ব্যক্তির অভিবাসন ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে। একইসঙ্গে ‍চুক্তিটি কোনো একটি অভিবাসী গোষ্ঠীর নিজ দেশ, যে দেশ দিয়ে যাচ্ছেন ও যেখানে যাচ্ছেন তার সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করবে।  বৈশ্বিক এই চুক্তি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত হলেও এর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং পরবর্তীতে করণীয় বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত ধারণা থাকা দরকার।

এই পটভূমিতে কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়। যেখানে জিসিএম নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি, বিষয়টি নিয়ে সামাজিকীকরণ বৃদ্ধি এবং বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। কর্মশালায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি, বাংলাদেশে জাতিসংঘের মাইগ্রেশন নেটওয়ার্কের সদস্যবৃন্দ, উন্নয়ন অংশীদার, এনজিও, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গবেষক এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)- এর চিফ অব মিশন এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের মাইগ্রেশন নেটওয়ার্কের কো-অর্ডিনেটর গিওরগি গিগাউরি বলেন, নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসনের সুবিধার্থে সকল স্তরে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জিসিএমে উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক এই চুক্তিতে যে নির্দেশনা নীতি আছে সেগুলো আমাদের মানতে হবে। জিসিএম বাস্তবায়নের জন্য আমাদের অভিবাসী, নাগরিক সমাজ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, বেসরকারি খাত এবং অভিবাসন সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব প্রয়োজন।
 
জিসিএমের ২৩টি লক্ষ্য রয়েছে। এটি বিশ্বের সর্বপ্রথম আন্তঃসরকারি সমঝোতাভিত্তিক চুক্তি, যা সব ক্ষেত্রে অভিবাসনকে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দেখা হয়। সব ক্ষেত্রে, সব জায়গায় অভিবাসীদের সুরক্ষা, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিশ্চিতে কথা বলা হয়েছে এই চুক্তিতে। চুক্তিটি বিশ্বব্যাপী অভিবাসন বিষয়ে সহযোগিতা, সমস্যা সমাধানের সর্বোচ্চ চর্চা ও আন্তর্জাতিক আইনের আলোকেই করা হয়েছে। যেটি বাস্তবায়নে সব রাষ্ট্র সম্মত হয়েছে। 

বাংলাদেশে জাতিসংঘের রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর মিয়া সেপ্পো বলেন, জিসিএম আন্তর্জাতিক অভিবাসন উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এই চুক্তির বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। একইসঙ্গে জিসিএমের মাধ্যমে যেন মানবপাচার প্রতিরোধ ও অভিবাসীদের অধিকার রক্ষা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অভিবাসন বিষয়ক সমস্যা সমাধানে সবাইকে জিসিএম বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বলেন, অভিবাসন বিষয়ক আলোচনায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবসময় সরব থেকেছে। তবে অভিবাসন বিষয়ে এখনও আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। বিশেষ করে সমন্বয়, সুশাসন ও জিসিএম বাস্তবায়নে। এছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিবাসন নিয়ে অনেক উদ্বেগ ও উত্তাপ আছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অভিবাসন এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু জিসিএম বাস্তবায়নে রাষ্ট্রগুলো সম্মত হয়েছে, তাই আমাদের সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। যাতে আমরা নিরাপদ, সুশৃঙ্খল, নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করতে পারি।

জিসিএম সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর বাস্তবায়নে উদ্যোগ, পরবর্তীতে করণীয় এবং ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা পদ্ধতি কী হবে এবং বিশ্বব্যাপী জিসিএমের সমন্বয় পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হয় এই কর্মশালায়।  এছাড়া বাংলাদেশে জাতিসংঘ অভিবাসী নেটওয়ার্কের অধীনে মানবপাচার রোধে একটি টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপের পথচলা শুরু হয় এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। 

আরএম/ এফসি

আরও পড়ুন