• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২১, ০৯:২৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৮, ২০২১, ১২:৩২ পিএম

রোজিনার মুক্তির দাবিতে থানার সামনে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ

রোজিনার মুক্তির দাবিতে থানার সামনে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ

প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা ও শাহবাগ থানায় হস্তান্তরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ  করেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকেরা।

সোমবার (১৭ মে) রাতে রোজিনা ইসলামকে থানায় সোপর্দ করার পর সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সচিবালয় রিপোর্টার্স ফোরামের নেতারাসহ প্রায় ৪০ জন সাংবাদিক থানার সামনে অবস্থান নেন। রোজিনা ইসলামকে দ্রুত মুক্তির দাবি জানান তারা। তার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন সাংবাদিকরা। এ ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিবের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন।

এদিকে মঙ্গলবার (১৮ মে) সকালে রোজিনাকে আদালতে নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় চুরি এবং ১৯২৩ সালের ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের’ ৩ ও ৫ ধারায় গুপ্তচরবৃত্তি ও রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের দখলে রাখার অভিযোগ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই অভিযোগ করেন।

এর আগে অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রীয় নথির ছবি তোলার অভিযোগে সোমবার (১৭ মে) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সচিবালয়ে স্বাস্থ্যসচিবের দপ্তরে আটকে রেখে রোজিনাকে হেনস্তা করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্যসচিব লোকমান হোসেন মিয়ার একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞার রুমে আটকে রাখা হয়। এ সময় রোজিনা ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। একাধিকবার বমিও করেন। অসুস্থ অবস্থায় রোজিনাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের পরিবার অভিযোগ করেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিকেলে তিনি সচিবালয়ে স্বাস্থ্যসচিবের দপ্তরে যান। ওই সময় দপ্তরের কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধে তথ্য চুরির অভিযোগ এনে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং পিএসের রুমে আটকে রাখেন।

এ সময় স্বাস্থ্যসচিব অফিসে ছিলেন। সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলার চেষ্টা করলেও সচিব কারও সঙ্গে কথা বলেননি।

এ ঘটনার পর থেকেই নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও সাংবাদিক নেতারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তীব্র নিন্দা জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিকরা।

নারী সাংবাদিকের ওপর সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের এই আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।

নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এক টুইট বার্তায় এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। রোজিনাকে অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, “বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে রোজিনা ইসলাম কাজ করছেন। তিনি তার প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম তুলে এনেছেন। একজন সাংবাদিককে পেশাগত কাজের সময় এভাবে আটক করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, “মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। তার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা লজ্জাজনক।”