• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯, ০৮:৩২ পিএম

জাতীয় সংসদ

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় মূল প্রসঙ্গই গৌণ!

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় মূল প্রসঙ্গই গৌণ!
জাতীয় সংসদ অধিবেশন-ফাইল ছবি

 

জাতীয় সংসদের চলতি ও প্রথম অধিবেশনে নিয়ম অনুযায়ী ভাষণ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। নিয়ম অনুয়ায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণের জন্য আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনার জন্য বিষয়টি অধিবেশনের দৈনিক কর্মসূচিতেও রাখা হয়। এতে অংশগ্রহণ করে প্রতিদিন বক্তব্যও দিচ্ছেন সংসদ সদস্যরা।

কিন্তু দীর্ঘ এই বক্তব্যে সংসদ সদস্যরা নানা প্রসঙ্গে কথা বললেও রাষ্ট্রপতির ভাষণের (মূল প্রসঙ্গ) ওপর কথা বলছেন না বললেই চলে। কেউ কেউ রাষ্ট্রপতির দেয়া ভাষণের জন্য তাকে ধন্যবাদ দেয়া যাবে কি যাবে না- তাও বলছেন না। আবার কেউ একটি বাক্য ব্যয় করে ধন্যবাদ দিলেও, কেনো ধন্যবাদ দিলেন তা বলছেন না। গত তিনদিনে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের বক্তব্য লক্ষ্য করে শুধু একজনকে ব্যাখ্যাসহ ধন্যবাদ দেয়া বা না দেয়ার মত প্রকাশ করতে দেখা যায়। তাদের মধ্য থেকে গত মঙ্গলবার সংসদ সদস্যদের দেয়া বক্তব্য থেকে কয়েকজনের বক্তব্য তুলে ধরা হলো।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শুরু হয় রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা। প্রথমে বক্তব্য দেন চাঁদপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম। বক্তব্যের শুরুতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভাষা শহীদদের স্মরণ করেন এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি তার সংসদীয় এলাকায় বিগত সময়ে তিনি সংসদ সদস্য থাকাকালে যা উন্নয়ন করেছেন, তার কিছু তথ্য তুলে ধরেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আগে ডাকাতিয়া নদীর ওপর একটি সেতু ছিল, এরপর তিনি আরও সাতটি সেতু করেছেন এই নদীর ওপর।

বক্তব্যে নিজের সংসদীয় আসনের সঙ্গে দেশের সামগ্রীক উন্নয়ন চিত্রও তিনি তুলে ধরেন প্রবীণ এই রাজনীতিবীদ। সে জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন চলছিল।

বক্তব্যের শেষ দিকে তিনি তার নির্বাচনি এলাকা হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তীর জনগণকে ধন্যবাদ জানান তাকে বারবার নির্বাচিত করার জন্য। এর পর সংসদে দেয়া ভাষণের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তার ওপর আস্থা রেখে বারবার তাকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য। পুনরায় স্পিকার নির্বাচিত হওয়ায় শিরীন শারমীন চৌধুরীকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার জন্য বরাদ্দ পাওয়া সময়ে রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে ধন্যবাদ উচ্চারণ করলেও মোট ২১ মিনিটের বক্তব্যে তিনি ধন্যবাদের কারণ তুলে ধরেননি।

এরপর বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ। বক্তব্যের শুরুর দিকে তিনি ভাষণের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান। ১৫৮ পৃষ্ঠার এই ভাষণটি প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রবীণ এই সাংসদ।

এরপর তিনি মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, ভাষা শহীদ ও সব আন্দোলন সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তা ছাড়া ছয়বারের এই সংসদ সদস্য নিজ সংসদীয় এলাকার ভোটার ও সাধারণ মানুষ এবং গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান।

এরপর তিনি বিএনপি–জামায়াতের অপশাসন, নির্যাতন ও গত নির্বাচনে দলটি মনোনয়ন বাণিজ্য করেছিল বলে সংসদকে অবহিত করেন। তবে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার জন্য বরাদ্দ পাওয়া সময়ের শুরুতে তিনি রাষ্ট্রপতির প্রতি ধন্যবাদ উচ্চারণ করলেও ২১ মিনিটের আলোচনায় তিনি এর কারণ উল্লেখ করেননি।

এরপর রাষ্ট্রপতির ভাষণের জন্য আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য রাখার জন্য সময় বরাদ্দ পান সংসদ সদস্য ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বক্তব্যের শুরুতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীর প্রশংসা করেন। এ সময় তিনি আইনজীবী হিসেবে আদালতে শিরীন শারমিন চৌধুরীর আইন অনুশীলনের ইতিবাচক উদাহরণ তুলে ধরেন। এছাড়া স্পিকার হিসেবে তার বিচক্ষণতার প্রশংসাও করেন শ ম রেজাউল করিম।

বক্তব্যে মন্ত্রী মু্ক্তিযুদ্ধের শহীদ, বঙ্গবন্ধু, সদ্য প্রয়াত রাজনীতিবীদ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও একুশ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম এই অধিবেশনে দেয়া ভাষণের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান।

এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিভিন্ন সময়ে বিশ্বনেতাদের দেয়া প্রশংসাবাণী থেকে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পূর্ব পাকিস্তান স্টাইলের বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে’ ফিরিয়ে এনেছেন বলে সংসদে উল্লেখ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি, বিএনপি আমলে তারা সহজভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়নি এবং নিজেদের পছন্দের লোককে দায়িত্বে বসিয়ে নির্বাচনে জেতার অপকৌশল করেছিল বলে সংসদকে অবহিত করেন। এ সময় তিনি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথাও সংসদে তুলে ধরেন।

তবে তিনিও বক্তব্যের এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ দিলেও এর কারণ তুলে ধরেননি ২১ মিনিটের বক্তব্যে। 

এরপর বক্তব্য দেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি গাইবান্ধা-১ আসনের সাংসদ। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া রাষ্ট্রপতির ভাষণকে উটপাখির ভাষণের সঙ্গে তুলনা করেন জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণে অনেক উন্নয়ন ও ইতিবাচক কথা থাকলেও ব্যর্থতার বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সংসদকে তিনি বলেন, দুর্নীতি আশানুরূপভাবে কমেনি, ব্যাংক কমিশন করার কথা থাকলেও সেটা হয়নি, প্রতিনিয়ত রাজধানীর মানুষ যানজটে ভুগছে— এসব বিষয়ে রাষ্ট্রপতির ভাষণে কোনো নির্দেশনা নেই।

বক্তব্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরও সমালোচনা করে শামীম হায়দার বলেন, দেশের গণমাধ্যম মুক্তিযুদ্ধবান্ধব। তারা অবশ্যই সমালোচনা করবে। সংবিধানে চিন্তার অধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ভিন্নমত থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বেশ কিছু আইন হওয়ার পর সেভাবে জনগণকে কথা বলতে দেখা যায়নি। মনে হয় তারা মনে করছে, কথা বলেও লাভ হবে না। এটা সহনীয় পরিবেশ নয়।

সংসদ সদস্য বলেন, এবার সরকারি দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এসেছে, অনেকটা বিরোধী দল শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের জন্য বড় সংকট তৈরি করতে পারে। প্রথমে ৩০ মিনিট ও পরে আরও দুই মিনিট সময় বরাদ্দ নিয়ে সংসদে এসব মত তুলে ধরেন তিনি।

মাআ/এসএমএম