মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার (১৭ নভেম্বর)। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা এবং টাঙ্গাইলসহ সারাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করছে দিনটি।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সন্তোষে তার মাজারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং আলোচনা সভা।
সকাল সাড়ে ৭টায় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, ‘মাওলানা ভাসানী ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তার (ভাসানী) নেতৃত্বের ভিত্তি ছিল সমাজের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ, কৃষক-শ্রমিক-সাধারণ জনগণ। কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ জনগণের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘১৯১৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে ভাসানীর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। ৫২-র ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ছাত্র নিহতের ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামেও মওলানা ভাসানী অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি দেশ ও জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সবসময় ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন। তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন।’
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘পাকিস্তানি উপনিবেশিক শাসকদের অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। শোষণ ও বঞ্চনাহীন ও প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।’
ভাসানী তার কৈশোর- যৌবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তিনি কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ ও যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তৎকালীন বাংলা-আসাম প্রদেশ মুসলিম লীগের সভাপতিও ছিলেন তিনি।
এছাড়াও আসাম জুড়ে ‘বাঙ্গাল খেদাও’ নামে দাঙ্গা চলাকালে বাঙালিদের রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখেন তিনি। তার উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সর্বদলীয় ওয়ার কাউন্সিলের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঐতিহাসিক লং মার্চে নেতৃত্ব দেন তিনি।
১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মওলানা ভাসানী। সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও মওলানা ভাসানী তার জীবনের সিংহভাগই কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে।
সাইসে/