• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯, ০১:২১ পিএম

খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার: মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার: মির্জা ফখরুল
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর- ছবি: জাগরণ

 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে সরকার তাকে অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাকে চিকিৎসা না করে অসুস্থ অবস্থায় কয়দিন পর হুইল চেয়ারে করে আদালতে হাজির করে মানসিকভাবে হেনস্থা করা এই সরকারের একটি ষড়যন্ত্রের অংশ বলে তিনি মনে করেন।  

মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।  

মির্জা ফখরুল বলেন, অত্যন্ত ক্ষোভ এবং আশঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, জনগণের ভালবাসায় সিক্ত, জনগণের সমর্থনে নির্বাচিত তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দুইবারের বিরোধীদলীয় নেতা সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতা খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাকে ষড়যন্ত্র করে সাজা দিয়ে একটি পরিত্যাক্ত নির্জন কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে।

তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন তিনি যখন কারাগারে গিয়েছিলেন তখন সুস্থ অবস্থায় গাড়ি থেকে নেমে হেটে কারাগারে গিয়েছিলেন। এরপরে দেখলাম তিনি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়লেন। গত প্রায় সাড়ে তিন মাস দেশনেত্রীর অসুখগুলো আরও বেড়ে গেছে। বাম কাধে ব্যথা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডান কাধে নতুন করে ব্যথা হচ্ছে। বাম-বাহু ও কব্জিতে ব্যথা অনেক বেড়েছে। ফলে কারও সাহায্য ছাড়া তিনি দাড়াতে কিংবা চলতে পারছেন না। প্রচণ্ড ব্যথা ও কাপুনির জন্য তিনি হাত দিয়ে কিছু ধরেও রাখতে পারছেন না।

আমরা দলের পক্ষ থেকে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারকে বার বার অনুরোধ করেছি তাকে সুচিকিৎসা দেওয়ার জন্য। বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। কিন্তু সরকার কোনোটাই করেননি।

  ছবি: জাগরণ

একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল তাও সরকার করেনি। আদালতের নির্দেশে করা হয়েছিল। সেই বোর্ড সাড়ে তিনমাস পরে গত পরশু আদালতের নির্দেশে তাকে পরীক্ষা করতে গিয়েছিল। তারা পরীক্ষা করতে গিয়ে বিস্মিত হয়েছেন গত সাড়ে তিন মাসে তার কোনো রকম ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয়নি। এক্সরে করা হয়নি। ব্লাড প্রেসার মাপা হয়নি। অর্থাৎ কোনো চিকিৎসা করা হয়নি।

তিনি বলেন, আগে পরিবার প্রতি সপ্তাহে দেখা করতে পারতো। এখন ১৫ দিনের আগে কোনো মতে দেখা করতে দেয়া হয় না। তবুও সেটা অত্যন্ত সীমিত। আমরা দলের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে ইতোপূর্বে কয়েকবার দেখা করেছি। চার মাস ধরে দলের পক্ষ থেকে কাউকে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এমনকি তার আইনজীবীরাও সাক্ষাতের অনুমতি পাচ্ছেন না।

এই সরকার দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘকাল ধরে তারা পরিকল্পনা করে আসছে। যে মামলাগুলো একটার পর একটা দেওয়া হচ্ছে, এর কোনোটার কোনো ভিত্তি নেই। ইতোমধ্যে যে তিনি জামিন পেয়েছিলেন তারও কোনো সুবিধা তাকে গ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। আপনারা জানেন প্রায় ৩০ টি সম্পূর্ণ সাজানো মামলা। তার বিরুদ্ধে দিয়ে একটার পর একটা মামলা নিয়ে আসা হয়। আর লোয়ার কোর্টে গেলে অনেক দিন পরে আবার তারিখ দেওয়া হয়।

এই ধরণের আচরণ খালেদা জিয়ার সঙ্গে করা হবে এটা সাধারণ মানুষের কল্পনা ও ধারণার বাইরে। কারণ খালেদা জিয়া শুধুমাত্র একজন সাধারণ রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি স্বাধীনতার ঘোষক মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পত্নী। তিনি নিজে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে কারাগারে বন্দি ছিলেন এবং নির্যাতিত। পরবর্তীকালে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্য স্বৈশাসকের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর আপসহীন সংগ্রাম করেছেন। আজকে আমরা যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখছি তার ভিত্তির পেছনে তার অপরিসীম ভূমিকা ছিল।

আজকে সেই নেতাকে যাকে এই দেশের প্রতিটি মানুষ ভালবাসে, তিনি কখনও নির্বাচনে পরাজিত হননি। তাকে তীলে তীলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমরা বার বার বলেছি, যে এই ধরণের আচরণ কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কাম্য হতে পারে না।

দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কোনো সরকারের কাছ থেকে এ ধরণের আচরণ তার প্রাপ্য নয়। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তার নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এটা কাল বিলম্ব করা যাবে না। কাল বিলম্ব করলে দেশনেত্রীর যদি কোনো শারিরীক ক্ষতি হয়, তার সমস্ত দায় দায়িত্ব এই সরকারকে যারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় তাদের গ্রহণ করতে হবে। এবং এই প্রতিহিংসার রাজনীতি তারা করছে সেই রাজনীতির জন্য তারা দায়ী থাকবে।

অবিলম্বে সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার দলের পক্ষ তেকে বহন করতে রাজি আছি।

খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলেছি খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধীদলীয় নেত্রী। এখনও তিনি এই দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। তার নিরাপত্তা, চিকিৎসা, ন্যায়বিচার তার প্রাপ্য।       

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. মইন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেনসহ অন্য নেতারা।                                       

টিএস/টিএফ