• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০১৮, ০২:০৪ পিএম

বিএনপি এখন আইনত চেয়ারপারসন শূন্য !

বিএনপি এখন আইনত চেয়ারপারসন শূন্য !
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া -ফাইল ছবি

 

দুই মামলায় উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালত থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন পদে খালেদা জিয়ার থাকার কোনো আইনি বৈধতা নেই বলে মনে করেন আইনজীবীরা।  এদিকে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানও আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত।  তাই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে থাকার বৈধতা নেই তার।  ফলে দলটি এখন আইনত চেয়ারপারসন শূন্য।

তারা বলছেন, বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।  যার ফলে তাদের আগের গঠনতন্ত্রই এখন বহাল আছে।  ওই গঠতন্ত্রের ৭ ধারা অনুসারে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে কেউ দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তিনি দলের কোনো পদে থাকতে পারবেন না। আর দলের শীর্ষ পদে থাকার তো প্রশ্নই আসে না।  তাই দলটির শীর্ষ পদ অর্থাৎ চেয়ারপারসনের পদ এখন শূন্য।’
 
তবে চেয়ারপারসন পদ নিয়ে এসব যুক্তি মানতে রাজি নন বিএনপি নেতারা। নেতাদের বক্তব্য, সরকারের উপর মহলের চাপে একটি মিথ্যা অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়ার যে শাস্তি হয়েছে, তা নিছকই একটি রাজনৈতিক মামলা। রাজনৈতিক কারণে ও রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেয়ার সুগভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।  যা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে। তাছাড়া, নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও খালেদা জিয়ার দলীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করাকে দলটির নেতারা আইনের কোনো ব্যত্যয় বলেও মনে করেন না।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক দুই বারের সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন দৈনিক জাগরণের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘খালেদা জিয়াই বিএনপির আইনগত চেয়ারপারসন। এটা নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্নের অবকাশ নেই। ব্যাস।’ 

বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীদের অন্যতম অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘সরকার তো কত কিছুই করতে চাচ্ছে, করতে চায়। এসব নিয়ে ভাবাভাবির কিছু নেই। বেগম খালেদা জিয়াই দলের আইনগত চেয়ারপারসন। এ নিয়ে প্রশ্ন নেই। তার দয়িত্বপালনও আইনের কোনো বরখেলাপ নয়।’

একজন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপি প্রধানের দায়িত্বপালন আইনে না হোক, নৈতিকতার দিক থেকে কতটা সমর্থন যোগ্য- এমন জিজ্ঞাসায় সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘এখানে নৈতিকতার কোনো বিষয় নেই। আর দায়িত্বপালন করাটাও নৈতিকভাবে কোনো অন্যায় নয়।’

বিএনপির অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জাগরণকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির আইনগতভাবে চেয়ারম্যান এই জন্য যে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার বিধিবদ্ধ নিয়ম, তাতে সর্বোচ্চ আদালতের সর্বোচ্চ স্তরটা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগে উনার যদি সাজা বহাল থাকে ঠিক তখনই তাকে বলা যায় যে, উনি দণ্ডপ্রাপ্ত। এর আগে পর্যন্ত সর্বোচ্চ এতটুকু বলা যায়, উনি প্রাথমিকভাবে দণ্ডিত। প্রাথমিকভাবে দণ্ডিত হলে, এটাকে কোনো সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় না। সুতরাং, এই হিসেবে উনি আমাদের আইনগত অভিভাবক। আর তারেক রহমান সাহেব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর মহাসচিব তো অফিসিয়াল এক্সিকিউটিভ হিসেবে স্বাক্ষরগুলো করেন সব সময়। নির্বাচন কমিশনে এবারও তিনিই তাই (স্বাক্ষর) করবেন।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী জাগরণকে বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের এসব যুক্তি সঠিক নয়। এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করছি।’ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক এই সদস্য বলেন, ‘যে কোনো পর্যায়ের আদালতই যখন কোনো ব্যাক্তিকে সাজা দেয়, সেটা অবশ্যই মেনে নিতে হবে। আপিল বিভাগ সর্বশেষ স্তর। সেখানে অব্যাহতি পেলে বলতে পারবে যে তিনি খালাস। এর আগ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি এটি বিবেচনায় রাখতে হবে।’

বিএনপির গঠনতন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। যার ফলে পূর্বের গঠনতন্ত্রই এখন বহাল আছে। আর পূর্বের গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা অনুসারে দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত কেউ বিএনপির কোনো পদে থাকার আইনগত বৈধতা নেই। তাই দলটির শীর্ষ পদ অর্থাৎ চেয়ারপার্সনের পদটি বর্তমানে আইনত শূন্য আছে।’ 

প্রসঙ্গত, জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারিক আদালত।

এদিকে অর্থ পাচার মামলায় নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকার অর্থদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ১৬ জুলাই ২০১৬ সালে এই রায় দেন আদালত। তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরেই লন্ডনে অবস্থান করছেন। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশও দিয়েছেন।

এদিকে, কারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও লন্ডনে নির্বাসনে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে দলীয় মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

টিএস/ মাআ/ জেডএস