• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৮, ২০১৯, ১০:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৮, ২০১৯, ১০:০৪ পিএম

ছাত্রলীগে ঝিমুনি ভাব, জেলা-উপজেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি  

ছাত্রলীগে ঝিমুনি ভাব, জেলা-উপজেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি  

সম্মেলনের এক বছর হয়ে এলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি সংগঠনটি। একইভাবে ঢিমে তেতালে চলছে সংগঠনের তৃণমূল কমিটিগুলো। সংগঠনের সকল পর্যায়ে চলছে স্থবিরতা। দেশের প্রায় ৩০টি জেলা ও শতাধিক উপজেলাতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি চলছে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুসারে অনেক জেলা পর্যায়ের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও এখনও কমিটি হচ্ছে না। 

ছাত্রলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে নেতৃত্বে আসতে ইচ্ছুকরা সংগঠন ছেড়ে চলে যাবে। তৃণমূল পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি হতে দেরি হওয়ায় এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে সংগঠনের অন্য জেলা ইউনিটগুলোয়। আবার জেলা পর্যায়ের অনেক কমিটির মেয়াদ ৪ থেকে ৫ বছর আগে শেষ হওয়ার পরও কমিটি হয়নি। এ কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে সংগঠনটির কার্যক্রম। কেন্দ্রীয় ২ কমিটি আগের মেয়াদে করা অনেক জেলা ইউনিট কমিটি দিয়েই বর্তমানে চলছে সংগঠনের কার্যক্রম।
    
উল্লেখ্য, গত বছরের ১১-১২ মে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই সভাপতির পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানীর নাম ঘোষণা করা হয়। এর পর প্রায় ১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও সংগঠনের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় গত ১৫ এপ্রিল ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্যও সেদিন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। সেসময় শেখ হাসিনা দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে ছাত্রলীগের বর্তমান দুই সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে নতুন সম্মেলন করার কথা বলেন। এ সময় ছাত্রলীগের কমিটি করতে ৭ দিন সময় বেঁধে দিলেও এখনও সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি হয়নি। 

শুধু তাই নয়, বর্তমান কমিটির দুই নেতা একটি সম্মেলনও করতে পারেনি। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বলা হয়েছে, ২ বছর পর পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন। যার এক বছর প্রায় সমাপ্তের পথে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে কোনো জেলায় সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় সংগঠন অনেকটাই অকার্যকর। দুই বছরের কমিটি কোথাও কোথাও চার বছর, কোথাও ৬ বছর থেকে এক যুগ পর্যন্ত হয়ে থাকে। ওই সব জেলা-উপজেলায় সম্মেলনের জন্য কোনো ধরনের তাগিদ দেখা যাচ্ছে না।  

ছাত্রলীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকটা গতিহীন হয়ে পড়েছে সংগঠনের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের কার্যক্রম। দুজনের নেতৃত্বে দীর্ঘ ১ বছর ধরে চলছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যা নিয়ে সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা। বেশ কিছু জেলা ইউনিটে দীর্ঘদিন জেলা-উপজেলায় সম্মেলন না হওয়ার কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। তবে জেলা পর্যায়ের ওই কমিটিগুলো হওয়ার বিষয়টি অনেকটাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার ওপর নির্ভর করছে।  

ছাত্রলীগের তৃণমূল সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন জেলায় কমিটিগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও পদ ছাড়তে নারাজ সভাপতি-সম্পাদকরা। একই অবস্থা উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃত্বেও। তাদের কারণে তরুণ ছাত্রনেতারা নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। তাই ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে বিভিন্ন রাজনীতিতে চলে যাচ্ছেন অনেকেই। চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে পদপ্রত্যাশী সকল নেতাকর্মীর মাঝে। যা নিয়ে অনেক স্থানে ঘটছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। অনেক জেলায় দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের কমিটি না হওয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন অনেকেই। 
 
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল ঘোষণা করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ওই জেলা ইউনিটের নেতারা ‘কমিটি কবে হবে’ এর জন্য তীর্থের কাকের মতো চেয়ে রয়েছেন। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ার কারণে হতে পারছে না জবি ছাত্রলীগের কমিটি। ওই নেতারা জানান, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নির্দিষ্ট কোনো নেতৃত্ব না থাকায় সংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসে সংগঠনের রাজনীতিও বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত। একইসঙ্গে ওই ইউনিটে সংগঠনের মধ্যে দেখা দিয়েছে রাজনীতিহীনতা। 

রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও ৭ মাস আগে। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর ওই বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের কমিটি হয়। সেসময় ১৪ সদস্যের কমিটি দেয়া হয়। বর্তমানে তাদের ৮ জন বিভিন্ন চাকরিতে যোগদান করেছে। 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতা দৈনিক জাগরণকে জানান, নতুন কমিটির জন্য আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের বলেছি। কিন্তু একটি অদৃশ্য প্রভাবে এখনও কমিটি হচ্ছে না। 
    
দীর্ঘ ৬ বছর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে কমিটি হয়েছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের। সেসময় ইশতিয়াক আহমেদ জয়কে সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ হোসেনকে দিয়ে চলছে সংগঠনের কমিটি। কিন্তু এখনও সম্মেলন করতে পারেনি ছাত্রলীগের এই জেলা ইউনিট। এ বিষয়ে ক্ষোভ দেখা গেছে খোদ ওই জেলা ইউনিটের কমিটিতে থাকা নেতাদের মাঝেও। জেলা ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মারুফ আদনান দৈনিক জাগরণকে বলেন, এর আগে ৪ বার কমিটি দেয়ার কথা বলেও দেয়নি। তবে বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদের জেলা সম্মেলন করবেন বলে জানিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব যারা রয়েছেন তাদের কমিটির মেয়াদ ৫ বছর। ওই জেলা ইউনিটের শীর্ষ নেতৃত্ব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি হলেও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের দাপটে সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে। তবে এই দুই নেতার কারণে ছাত্রলীগ থেকে ঝরে পড়ছে তরুণ নেতৃত্ব। 

ফেনী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয় ২০১৫ সালের ১৪ মে। গঠনতন্ত্র অনুসারে ওই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। কিন্তু এখনও করা হয়নি সম্মেলন। সেসময় সালাহ উদ্দিন ফিরোজকে সভাপতি ও জাবেদ হায়দার জর্জকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। 

জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১৫ সালের ১ মার্চ। ওই কমিটিতে নিহাদুল আলম নিহাদকে সভাপতি ও মাকসুদ বিন জালাল প্লাবনকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। 

একই অবস্থা গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের কমিটির। জেলাটিতে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১৬ সালে। নিয়ম অনুযায়ী ওই জেলার বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। 

২০১৬ সালের অক্টোবর রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি হয়। কমিটিতে সভাপতি পদে মো. জাকারিয়া মাসুদ রাজিবকে সভাপতি ও মো. সাইফুল ইসলাম সুমনকে (এরশাদ) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। সেই কমিটির কার্যক্রম এখনো চলছে।
 
২০১৫ সালের ২১ জুলাই গঠন করা হয় কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ কমিটি। আবু তৈয়ব অপিকে সভাপতি, মিজানুর রহমান রাতুল ও শাহাদৎ হোসেনকে সহ-সভাপতি, লোকমান হোসেন রোবেলকে সাধারণ সম্পাদক এবং ওমর ফারুক মির্জা ও হোসেন মো. মনিরকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৬ সদস্যের কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। সেসময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ওই কমিটির অনুমোদন দেন। যা এখনও চলমান রয়েছে।
 
২০১৫ সালে দীর্ঘ ১২ বছর পর জাহিদ হোসেন অনিককে সভাপতি ও তানভীর মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ওই কমিটি ঘোষণা করেন। এর পর ছাত্রলীগের সোহাগ-জাকির কমিটির মেয়াদ শেষ হলে, বর্তমান শোভন-রাব্বানী নেতৃত্ব এলেও জেলাটির সম্মেলন হয়নি। 
বর্তমান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নিজ জেলা মাদারীপুর। এ ছাড়া ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের নিজ জেলাও মাদারীপুর। এর পরও এখনও হয়নি ওই জেলা ইউনিটের কমিটি।   

এসব বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ান চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তারা ফোন ধরেননি। 

এএইচএস/ এফসি