• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২০, ২০১৯, ০৮:৩০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২০, ২০১৯, ১১:৩১ এএম

আ.লীগ নেতাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বৈঠক, অস্থিরতা প্রশমিত 

আ.লীগ নেতাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বৈঠক, অস্থিরতা প্রশমিত 
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বৈঠক; দৈনিক জাগরণ


ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার পর সংগঠনের মধ্যে চলা অস্থিরতা প্রশমিত হয়েছে। রবিবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব ও পদবঞ্চিতদের দীর্ঘ বৈঠকের পর বিষয়টির অবসান হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। চলতি মাসে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার পর সংগঠনের পদপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে পদবঞ্চিতরা প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে। কিন্তু রোববার আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সংগঠনটির দুই পক্ষের নেতৃবৃন্দের বৈঠকের পর ওই দ্বন্দ্বের আবসান হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, রোববার রাত সাড়ে আটটা থেকে মধ্য রাত অবধি ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ওই  বৈঠক হয়। ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চার নেতা ওই বৈঠকে উপস্থিত থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা ও সংগঠনের পদবঞ্চিতদের নিয়ে বৈঠক করেন।

বৈঠক থেকে বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসারকে সমন্বয়ক করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বৈঠকে অংশ নেয়া বিদ্রোহী গ্রুপের প্রতিনিধিদের এক সঙ্গে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাদের চলা অনশন ভাঙ্গার নির্দেশ দেওয়া হয়।  

বৈঠক সূত্র জানায়,  প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে চলা ওই বৈঠক শেষে নিজেদের মধ্যে সব দ্বন্দ্ব ও  ভুল বোঝাবুঝির অবসান করে দুই পক্ষই এক সঙ্গে সংগঠন করার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌছায়। তবে বৈঠকের শুরুতে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা সংগঠনের সাংগঠনিক অভিভাবক ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে আবেদন জানান। এ সময় পদবঞ্চিতরা কমিটি ও কমিটির পর হওয়া ঘটনার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে ‘ এভাবে চলতে থাকলে তারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে চান না’। এ সময় ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা বৈঠকে বলেন, পদবঞ্চিতদের যদি কোন অভিযোগ থাকে তবে তারা সংগঠনের ফোরামে এসে এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারাও ছাত্রলীগের উভয় অংশেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কড়া বার্তা জানিয়ে দেন। এর পর  কয়েক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছান। এ সময় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার পর মধুর ক্যান্টিনে সংগঠনের দুই পক্ষের হওয়া মারামারির জন্য যে তদন্ত রিপোর্ট এসেছে তার ভিত্তিতে ওই ঘটনার দোষীদের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এ ছাড়া  কমিটিতে যারা বিতর্কিত হয়েছেন তার স্বপক্ষে  প্রমাণসহ সত্যতা নিশ্চিতের পর তাদের সংগঠনের পদ থেকে দ্রুত অব্যাহতি দিয়ে তা শূন্য ঘোষণা করতে বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। একই সঙ্গে ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করার কথাও বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। 

বৈঠকে আওয়ামী লীগের যু্গ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ পদ বঞ্চিত নেতাদের কয়েকজন প্রতিনিধি ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজুয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত দুইদিন ধরে যারা ক্ষোভ প্রকাশ করছিল এবং ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ড করছে আজ থেকে সব ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা কাজ করবো। মধুর ক্যান্টিনে এক সঙ্গে বসে আড্ডা দিব। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠা করা সংগঠন ছাত্রলীগকে কীভাবে আরও সুসংগঠিত করা যায় এ বিষয়ে আমরা বসেছিলাম। আশা করছি আমরা সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাব। আমাদের কিছু সংখ্যক ছাত্রলীগ কর্মীর কিছু মান অভিমান ছিল। তাদের মান অভিমান শোনা হলো। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে যে ১৭টি পদ নিয়ে অভিযোগ আছে, সে অভিযোগের ভিত্তিতে নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের বিষয় খোঁজ নিতে। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে সে পদ শূন্য হওয়ার সুযোগ আছে এবং সেখানে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হবে।’

আপনারা বলছেন ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং অন্যদিকে পদবঞ্চিতরা ৯৯ জনের তালিকা দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে শোভন বলেন, আমরা যেসব অভিযোগ পাব তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিব। তিনি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিবেন। আমরা চাই আরও অনুসন্ধান হোক। অনুসন্ধানে যারা বিতর্কিত প্রমাণ হবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থাৎ পদটি শূন্য করে নতুনদের জায়গা দেওয়া হবে। তবে এতটুকু বলতে চাই যে কমিটি হয়েছে সেটি থাকবে।

এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তাদের প্রত্যেকে গত কমিটিতে একাধিক পদে ছিল। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের পূর্ববর্তী নেতারা ক্রস চেক করেই তাদের পদ দিয়েছে। এখন আমরা তাদের ডেডিকেশন তাদের সক্রিয়তা দেখে পদ দিয়েছি, তাদের মধ্যে কেউ যদি গোপনে বিয়ে করে তাহলে কী করার আছে। তারপরও বলব তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেব।

উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে সংগঠনের মধ্যে চলা অস্থিরতার ধারাবাহিকতা হিসেবে শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অনশনে বসে সংগঠনের পদবঞ্চিতরা। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেত্রীকে লাঞ্ছিত করা হয় বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর রবিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পাওয়া বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার স্বপক্ষে লিখিত দালিলিক প্রমাণ রাখার জন্য পদবঞ্চিতের প্রতি আহ্বান জানান। 

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ মে ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ডেকে এ নির্দেশ দেন। ওই দিন রাতে এক সংবাদ সম্মেলন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগের অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন সংগঠনের ওই শীর্ষ দুই নেতা।  কিন্তু এর পর ৩ দিন অতিবাহিত হলেও তার ফলশ্রুতি দেখা যায় নি। 

এর আগে গত সোমবার (১৩ মে) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংগঠনের পদপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে পদবঞ্চিত নেতাদের মারামারির ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের করা ওই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকা বিতর্কিতদের বাদ দিতে গত মঙ্গলবার (১৪মে) সংগঠনের পদবঞ্চিতরা ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন।
 
এএইচএস/আরআই