• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০১৯, ০৪:৫৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৯, ২০১৯, ০৫:০০ পিএম

নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের প্রয়োজন আছে কি: মাহবুব তালুকদার

নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের প্রয়োজন আছে কি: মাহবুব তালুকদার
আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনের কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার -ছবি : জাগরণ

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, নির্বাচন বিমুখতা জাতিকে গভীর খাদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এমন নিয়মরক্ষার নির্বাচনের আদৌ প্রয়োজন আছে কি?

আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে বুধবার (১৯ জুন) বিকালে সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

মাহবুব তালুকদার বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে আশঙ্কার দিক হচ্ছে ভোটারদের নির্বাচনবিমুখতা। একটি গণতান্ত্রিক দেশ ও জাতির জন্য নির্বাচন বিমুখতা অশনিসংকেত। যথোপযুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে। আমি আগেও বলেছি আমরা গণতন্ত্রের শোকযাত্রায় সামিল হতে চাই না। নির্বাচন বিমুখতা জাতিকে গভীর খাদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের অনিশ্চিত গন্তব্যে বাংলাদেশ। এই অবস্থা কখনও কাম্য হতে পারে না।

তিনি বলেন, গতকাল ৫টি ধাপে এবারের উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এই নির্বাচন সম্পর্কে সাংবাদিকরা আমার অভিমত জানতে চেয়েছেন। এসব নির্বাচন কতটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে, সে বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে আমি পূর্বে যা বলেছিলাম, এখনও তাই বলব, আপনারা নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করলে এর উত্তর পেয়ে যাবেন। প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছেই এ প্রশ্নের উত্তর রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাচন কেমন হওয়া উচিত ছিল, সে সম্পর্কে আমার কিছু বলার আছে। সংবিধানে ‘স্থানীয় শাসন’ শিরোনামে একটি সম্পূর্ণ পৃথক অনুচ্ছেদের ৫৯(১) ধারায় বলা হয়েছে ‘আইনঅনুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।’ এতে প্রতীয়মান হয় স্থানীয় সরকারের প্রতিটি স্তরে নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যবর্গ প্রশাসনিক ও অন্যবিধ দায়িত্ব পালন করবেন। স্থানীয় সরকারে কোনো বহিরাগতের হস্তক্ষেপের অবকাশ নেই। অন্য কারো হস্তক্ষেপ হলে উপজেলা নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু স্বাভাবিক ও শুদ্ধ হবে না। এ অবস্থায় স্থানীয় নির্বাচন বা উপজেলা নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবে হয়েছে কি না, এ প্রশ্ন থেকে যায়।

সংসদ সদস্যদের বিষয়ে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন সংসদ সদস্যদের আওতামুক্ত না হলে তা কখনও অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাদের উপদেষ্টার ভূমিকা উপজেলা পরিষদের কৌলিন্য বিনষ্ট করেছে। অনেক সংসদ সদস্য কেন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে পছন্দের প্রার্থীকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বসাতে চান, কখনও বা নিজ দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেন, এ প্রশ্নের সমাধান না পেলে উপজেলা নির্বাচন তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবের কবলে পড়বেই। কোনো কোনো সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বা সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করতে হয়েছে।

এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, বিরোধীদলগুলো অংশগ্রহণ না করায় এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ছিল একতরফা। একতরফা নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠের অভিমত এবং তা বহুত্ববাদের ভেতর থেকে উৎসারিত হতে হয়। একতরফা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠের কোন অভিব্যক্তি প্রতিফলিত হয় না বলে এর কোনো ঔজ্জ্বল্য থাকে না। নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরিতে উপযুক্ত পরিবেশ অপরিহার্য। কিন্তু আমরা ক্রমাগত একতরফা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, যা গণতন্ত্রের জন্য অনভিপ্রেত।

তিনি আরও বলেন, আমরা সংবিধান অনুযায়ী মুক্ত স্বাধীন উপজেলা পরিষদের কার্যকারিতা দেখতে চাই। কারো আজ্ঞাবহ হয়ে দায়িত্বপালন করলে এবং উপজেলা পরিষদের গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য বিসর্জিত হলে উপজেলা পরিষদ জনআকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ প্রশ্ন নির্বাচনের ভালো-মন্দ নিয়ে নয়, নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হলে আদৌ নিয়মরক্ষার নির্বাচনের প্রয়োজন আছে কি? এই নেতিবাচক প্রশ্নের উত্তর থেকে আমরা ইতিবাচক পথের সন্ধান পেতে চাই যোগ করেন মাহবুব তালুকদার।


এইচএস/ একেএস