বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলা ছিল সম্পূর্ণরূপে কল্পবাহিনী। পরিকল্পিতভাবে নিজ দলের লোকদের দিয়েই ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলা করিয়ে যে  রাজনৈতিক ইস্যু সৃষ্টি করা হয়েছিল, যা সর্বজনবিদিত। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগের জুড়ি মেলা ভার। দীর্ঘ ২৪ বছর পর এই রায় ঘোষণায় প্রমাণ হয়, সরকারের ক্রমপ্রসারমান ফাঁসির দড়ি এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
 
শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি চালানোর মামলায় বুধবার (০৩ জুলাই)  পাবনার  অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ৯ জনের ফাঁসি, ২৫ জনের যাবজ্জীবন ও ১৩ জনের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেয়া হয়। 

বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।  

ফখরুল বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী মত নিশ্চিহ্ন করণে নাৎসীবাদী আয়োজনের নগ্ন বহি:প্রকাশ আজকে সরকারের নির্দেশে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রায়। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের ওপর অব্যাহত জুলুমের পরেও বিএনপিকে নিস্তেজ তো করা যায়নি বরং জনসমর্থনের বিপুল বৃদ্ধিতে সরকারের হিতাহিত জ্ঞানশুণ্য হয়েছে। কাণ্ডজ্ঞান লোপ পেয়ে এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কায়দায় দুনিয়া থেকে নির্মূলে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।
 
বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, ২৪ বছর আগে ট্রেনে গুলি-বোমা হামলার সাজানো ঘটনায় আজকে আদালত কর্তৃক রায়ের মাধ্যমে একটি বিষয় সুষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে,  ভোগ-লালসায় অস্থির সরকার তাদের গদি টিকিয়ে রাখতে নানা ধরণের সর্বনাশা নীলনকশা প্রণয়ন করে রেখেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই একের পর এক সরকারের হিংসার রূপের প্রকাশ ঘটছে।  আজকে পাবনার আদালতের রায়ে সরকারের নিষ্ঠুর দানবীয় রূপের আরো একটি নতুন চেহারা দেখা গেল। দেশব্যাপী আদিম সহিংসতা, নারী ও শিশু নির্যাতন ও তাদের আগুণে নিক্ষেপ, স্ত্রীর সামনে স্বামীকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা, কিশোরীকে নির্যাতনের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দৃষ্টান্ত শুধুমাত্র এই সরকারের আমলে সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং সরকারি দলের লোকের মাধ্যমেই এ  সমস্ত অনাচার দেশব্যাপী সংঘটিত হচ্ছে। 

তিনি বলেন, দেশব্যাপী অত্যাচার, নিপীড়ন, লুন্ঠন, দখল এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এগুলোকে আড়াল করতেই ২৪ বছরের পুরনো একটি সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের জড়িয়ে আদালতকে ব্যবহার করে এই নির্দয় রায় দেয়া হয়েছে। সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই নিম্ন আদালতকে কব্জায় নিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে যে নির্মূলের নীতি অবলম্বন করেছে, আজকের রায় সেটিরই ধারাবাহিকতার অংশ। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছর পর এই রায় ঘোষণার ঘটনা শুধু হাস্যকরই নয়, এটি একটি সুদুরপ্রসারী মাষ্টারপ্ল্যানেরই অংশ। আমি  এই রায়ের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই ফরমায়েসী রায় প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
 
পাবনায় রায় ঘোষণার পরপরই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবসহ নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের সশস্ত্র হামলার  ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান মির্জা ফখরুল। এই হামলায় ইশ্বরদী পৌর বিএনপি নেতা দুলাল মন্ডল, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মেহেদী হাসান নিশান, বিপুল মোল্লাসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। তিনি  আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন এবং দুস্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান। 

টিএস/বিএস