• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০১৯, ০১:০৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২০, ২০১৯, ০১:০৬ এএম

বন্যাদুর্গতদের ফেলে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে : মির্জা ফখরুলের

বন্যাদুর্গতদের ফেলে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে : মির্জা ফখরুলের

বন্যার্তদের পাশে না দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে যাওয়ার প্রসঙ্গে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন, বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। বন্যাদুর্গতদের ফেলে রেখে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেছেন।

শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন দলের মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং একের পর এক জেলা বন্যা কবলিত হচ্ছে। জনগণের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এক্ষেত্রে সরকারের যে সকল উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন সেটা আমরা লক্ষ্য করছি না। সরকারের চরম উদাসীনতা এই বন্যার ব্যাপারে, তারা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। সাধারণত এরকম পরিস্থিতিতে যে উদ্যোগ-সহায়তা নেয়ার কথা সেটা দেখা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ত্রাণমন্ত্রী কোথাও যাননি। সরকারের পদক্ষেপগুলো মানুষ দেখতে চায়। সরকারের দায়িত্ব বন্যা কবলিত মানুষকে রক্ষা করা, যেটা সরকার করছে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বন্যার্তদের সহায়তায় ২১ সদস্যের একটি ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে বিএনপির ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াসীনকে। ত্রাণ কমিটি খুব শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করবে বলেও জানান তিনি।

ডেঙ্গু ভয়াবহ মহামারী আকার ধারণ করেছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ডেঙ্গুর ভয়ে অফিসে যাচ্ছেন না, মশা কামড়াতে পারে। একবার তার ডেঙ্গু হয়ে গেছে। অথচ একজন মেয়র বলেছেন যে, এখন পর্যন্ত নাকি কিছুই হয় নাই। ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ২১ জন মারা গেছেন, কয়েক হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। সবাই এখন দিনের বেলায় শিশুদের মশারির নিচে রাখছেন। বড়রা মোজা পরে থাকেন-কখন এডিস মশা কামড় দেবে সেই ভয়ে। সিটি করপোরেশনের কোন উদ্যোগ নাই। আমি নিজে উত্তরায় থাকি, এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ দেখতে পাইনি, এটাই বাস্তবতা।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, দেশে আজকে ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জনগণের নিরাপত্তা ও দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে যেন মনে হচ্ছে দেশে একটা এনার্কি (নৈরাজ্য) চলছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আদালতের ভেতরে গিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, ছোট্ট শিশুর মাথা কেটে ফেলা হচ্ছে, প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হচ্ছে এবং তার পরবর্তিতে যে ঘটনাগুলো ঘটছে যেমন, একজন প্রধান আসামি (০০৭ নয়ন বন্ড) তাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হলো। দেখা গেলো সেই মামলার যে বাদী (আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি) তাকে আবার গ্রেফতার করা হলো এবং তাকে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। পুরো বিষয়গুলো দেখা মনে হচ্ছে, এখানে একটা নৈরাজ্যের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন এবং বিচার বিভাগে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সাহেবকে অজ্ঞাত সুব্রত বাইন পরিচয় দিয়ে গুম করার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। এই বিষয়গুলো কিন্তু অহরহ ঘটছে। অনেক মানুষই ভিকটিম হচ্ছেন বিশেষ করে তুলে নিয়ে যাওয়া-এটা তো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আপনারা দেখেছেন, কয়েকদিন আগে একজন র‌্যাব সদস্য তিনি তারই এক আত্বীয় তার সঙ্গে জমির সমস্যার কারণে তিনি তাকে গোয়েন্দা দিয়ে তুলে নিয়ে গেছেন এবং তাকে হত্যা করছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই বিষয়গুলো যতো ঘটছে ততো প্রকাশ হয়ে পড়ছে যে, দেশে আজকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারাই এখন সবচাইতে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন। সরকার বলতে যা বুঝায়, এরকম গভার্মেন্ট আছে কিনা এটাই আজকে জনগণের কাছে প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বৈঠক দুই ঘন্টার উপর চলে। এছাড়া বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপির মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও যুক্ত ছিলেন।
টিএস/এসকে