• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০১৯, ০৯:২১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৮, ২০১৯, ০৯:২৫ পিএম

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আবারও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান বিএনপির

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আবারও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান বিএনপির
‘রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে বিএনপির শীর্ষ নেতারা - ছবি : জাগরণ
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য আত্মহননমূলক : মির্জা ফখরুল

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সরকারকে আবারও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা আখ্যায়িত করে তা সমাধানে মোট ১০ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেছে দলটি। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বিএনপি বিশেষ করে দলের মহাসচিব রোহিঙ্গাদের উস্কানি দিচ্ছেন বলে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অভিযোগকে ‘আত্মহনন মূলক’ বক্তব্য বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেক শোরে বিদেশি কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে ‘রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এ আহ্বান ও সুপারিশ উপস্থাপন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেমিনার শেষ হয় সন্ধ্যার পর।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা জানি, এই সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান নেই। তারা অনির্বাচিত সরকার। সুতরাং তাদেরকে বিশ্ব জনমত তৈরি করতে হলে সমগ্র জনগণকে সামনে নিয়েই এই অভাবটা পূরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, এই সেমিনারের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারের কাছে পৌঁছতে চাই, জনগণের কাছে পৌঁছতে চাই, বিশ্বমানবতার কাছে পৌঁছতে চাই। একইসঙ্গে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে, জাতিসংঘকে, আন্তর্জাতিক বিশ্বকে আহ্বান জানাচ্ছি, মানবিক যে অবস্থা তৈরি হয়েছে সেটাকে সমাধানের জন্য তারা তাদের ভূমিকা পালন করবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবার পুরনো খেলা শুরু করেছেন। বিএনপিকে দায়ী করতে শুরু করেছেন এবং তিনি আমাকে দায়ী করেছেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যু দিয়ে আমরা নাকি উস্কে দিচ্ছি রোহিঙ্গাদের। তার (কাদের) এ বক্তব্য সুইসাইডাল। এটা আত্মহননের কথা। আমরা মনে করি যে, এই ধরনের কথা-বার্তা শুধুমাত্র রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, মিয়ানমারকে আরো শক্তিশালী করবে এবং সমস্যা আরও বৃদ্ধি করবে। 

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে জীবন-সম্পদ সম্ভ্রমে অখণ্ড নিরাপত্তা ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ মাতৃভূমিতে বসবাস করতে পারে সেই নিশ্চয়তা বিধান কল্পে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নাই। ঐক্যবদ্ধ জাতিকে নিয়েই এই সমস্যা সমাধান করার জন্য এগিয়ে যেতে হবে।

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি বলতে চাই, প্রধান যে বিষয়টা- রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হলে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব ও তাদের প্রত্যাবাসনে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সেটা সরকার পারেনি। এই সরকারের ব্যর্থতা, তাদের অনভিজ্ঞতা, নতজানু পররাষ্ট্র নীতি তারা এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, মিয়ানমারের ট্র্যাপের মধ্যে এই সরকার পড়ে গেছে। এখান থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন বাংলাদে্শের জন্য সত্যিকার অর্থে বিপজ্জনক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছিলাম যে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে হলে এককভাবে বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হবে না। প্রথম থেকেই বলে এসেছিলাম যে, একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের করতে হবে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে আসার সময়ে খালেদা জিয়া যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।  

সেমিনারে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিএনপি যে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে এর মধ্যে আছে- জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, নিজের মাতৃভূমিতে অবাধ চলাচলের নিশ্চিতকরণ, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহকে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, প্রত্যাবাসনের আগে ও পরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নের মিয়ানমারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সুযোগ রাখা, রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে যাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি না হতে পারে সেই ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া প্রভৃতি।

বিএনপির আয়োজনে এই সেমিনারে দলটির নেতৃবৃন্দসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, ফ্রান্স, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, আফগানিস্তান, তুরস্ক, জাতিসংঘ, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন। তবে কূটনীতিকরা আলোচনায় বক্তব্য রাখেননি। তারা মনযোগ দিয়ে আলোচকদের বক্তব্য নোট করেন।

আলোচনায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এতে রোহিঙ্গাদের আগমনের প্রেক্ষাপট, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের প্রতিবেদন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সচিব এএইচএম মোফাজ্জল করীম, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী ও অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের সসম্মানে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের নাগরিকত্ব, তাদের নিরাপত্তা, তাদের চলাচলের স্বাধীনতা, তাদের বাড়ি-ঘর-সম্পত্তির ফিরিয়ে দেয়ার গ্যারেন্টি চায়- এ জন্য বাংলাদেশ সরকারকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, এজন্য দেশে একটি জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে হবে। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমাদের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বন্ধু বৃদ্ধি করে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। জাতীয় ঐক্য ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে আমরা মনে করি। 

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের পরিচালনায় গোলটেবিল আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী বিএনপির কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান কামাল ইবনে ইউসুফ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল মান্নান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, জয়নাল আবদীন, আবদুল আ্উয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, সুজাউদ্দিন, আবদুল কাউয়ুম, তাহসিনা রশদী লুনা, বিজন কান্তি সরকার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ওবায়দুল ইসলাম, শিরিন সুলতানা, আসাদুজ্জামান আসাদ, জহিরউদ্দিন স্বপন, ফাহিমা মুন্নী, রুমিন ফারহানা, অনিন্দ ইসলাম অমিত, মীর হেলাল, ইশরাক হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত ফজলে আকবর, শামীম আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

টিএস/ এসি

আরও পড়ুন