• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯, ১০:০১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯, ১০:০১ পিএম

আপাতদৃশ্যে সমাঝোতা,  জাপায় নেতৃত্বের বিরোধ মিটছে না সহসাই 

আপাতদৃশ্যে সমাঝোতা,  জাপায় নেতৃত্বের বিরোধ মিটছে না সহসাই 
রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের - ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আপাতত দৃশ্যমান সমাঝোতা হলেও উভয়পক্ষের মাঝেই ক্ষোভ বিরাজ করছে। নেতৃত্বের এ দ্বন্দ্ব আপাতদৃষ্টিতে সমঝোতার পথে গিয়ে দলের ভাঙন ঠেকানো গেলেও এ দ্বন্দ্ব সহসাই মিটবে না বলেই আশঙ্কা দলের নেতাকর্মীদের। কারণ সমঝোতার পর জাপায় জিএম কাদেরপন্থিরা বলছেন, উভয়পক্ষের লড়াইয়ে রওশনপন্থীরাই বিজয়ী হয়েছে। যারা চেয়ারম্যানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল তারা পার্টিতে রওশন-আনিসের কাছে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ভবিষতে এসব নেতা দলে নিজের অবস্থান কতটুকু শক্ত করতে পারবে তা নিয়েও তারা সন্দিহান।

জিএম কাদেরপন্থি পার্টির এক সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আমরা শুনেছি আওয়ামী লীগ রংপুর-৩ তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবে। সেক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনরাও রংপুরে সাদ এরশাদকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করবে। সাদ বিজয়ী হওয়ার পর আগামী ৩০ নভেম্বর অনু্ষ্ঠিতব্য জাপার কাউন্সিলে সাদ যদি পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী হন তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আমরা যারা জিএম কাদেরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম, তাদের সিংহভাগই তিনি আর কাছে পাবেন না। আমরা মনে করি জিএম কাদের আপস করেছেন। পার্টির অনেক সিনিয়র নেতাসহ তৃণমূলের অসংখ্য নেতাকর্মী পার্টির কর্মকাণ্ড থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবেন।

জাপায় চেয়ারম্যানপন্থি নেতারা বলছেন, প্রেসিডিয়াম ও এমপিদের যৌথসভা করে সিদ্ধান্ত হলো ব্যারিস্টার আনিস ও ফখরুলকে অব্যাহতি দেয়ার। এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা না করেই এ সিদ্ধান্ত আবার স্থগিত করা হলো। পার্টির এ সিদ্ধান্তে সেই বৈঠকে উপস্থিত সিনিয়র ৩৪ জন নেতাকে অপমান করা হয়েছে। জিএম কাদের পুনরায় আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। এছাড়া, যে ব্যক্তি পার্টি অফিসে মনোনয়নপত্রই জমা দেননি, এমনকী আমাদের মনোনয়ন বোর্ডে সাক্ষাৎকার দেননি তাকেই মনোনয়ন দেয়া হল। এতে বৃহত্তর রংপুরের তৃণমূলের আস্থা হারিয়েছেন জিএম কাদের। এ ছাড়া আমরা যারা জিএম কাদেরের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছিলাম তাদেরকেও ভবিষতে তিনি কাছে পাবেন কি না আমরা সন্দিহান। 

এ বিষয়ে জিএম কাদেরের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়া পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, দুই পক্ষকে এক করার জন্য অনেক অযৌক্তিক দাবি মানতে হয়েছে। অন্যায় যুক্তির কাছে মাথানত করতে হয়েছে। এরশাদের মৃত্যুর পর পার্টির ভাঙন ঠেকাতে, ঐক্যের স্বার্থে অগ্রহণযোগ্য আবদারও মেনে নিতে হয়েছে। 

রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান যদি নিজের অবস্থান শক্ত করতে না পারেন, অবস্থান পরিষ্কার করতে না পারেন, তাহলে দল শক্তিশালী করা কঠিন হবে। আমাকে মনোনয়ন বোর্ড সিলেক্ট করে পরে আবার সাদকে মনোনয়ন দেয়া হল। রংপুরের তৃণমূল নেতাকর্মীরা আমাকে সমর্থন করেছে। মনোনয়ন পরিবর্তন করে পার্টি শুধু আমাকেই নয়, রংপুরবাসীকেও অপমান করা হয়েছে। 

ইয়াসির বলেন, মনোনয়ন বোর্ড তাহলে কেনো গঠন করা হল। আমার মত ত্যাগী নেতাকে মূল্যায়ন না করা হলো না। তাহলে সারাদেশের নেতাকর্মীরা আর কখনও মূল্যায়িত হবে মনে হয় না। আসলে ত্যাগের মূল্যায়ন নেই, আছে ভোগের মূল্যায়ন।

রওশনপন্থি বলে পরিচিত পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আমাদের মধ্যে গঠনতন্ত্র নিয়ে যে বিরোধ ছিল, এর অবসান হয়েছে। সমাঝোতার ভিত্তিতেই আমরা আগামী ৩০ নভেম্বর পার্টির কাউন্সিল করব। আমরা রওশন এরশাদকে বিরোধী দলের নেতা ও জিএম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নিয়েছি।

অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, জিএম কাদের সবসময় বলে বলে এসেছেন রওশন এরশাদ তার মায়ের মতো। রওশন এরশাদ জিএম কাদেরকে ডেকে নিয়ে যদি বলতেন তুমি পার্টির চেয়ারম্যান আর আমি বিরোধী দলের নেতা। তাহলে পার্টিতে আর দ্বন্দ্ব হতো না আর নেতাকর্মীরাও দ্বিধাবিভক্ত হতেন না।

টিএস/ এফসি

আরও পড়ুন