• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯, ০১:৩২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯, ০১:৩২ পিএম

খালেদ ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাতক জিসানের সেকেন্ড ইন কমান্ড

খালেদ ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাতক জিসানের সেকেন্ড ইন কমান্ড
যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুইয়া

আন্ডার ওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সরাসরি কানেকশন ছিলো ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুইয়ার।এক সময় তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। মালিবাগ বাজারে সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের হানার পর অপারেশনে জিসান বাহিনীর গুলিতে আলমগীর হোসেনসহ ২ ডিবি অফিসার নিহত হন। এ ঘটনায় জিসানকে না পেয়ে তার কিছু সহযোগিকে ধরিয়ে দেন খালেদ মাহমুদ। তখনই খালেদ ক্রসফায়ার থেকে বেঁচে যান। এরপর  থেকে জিসানের সঙ্গে তার বিরোধ ঘটে। গ্রেফতার ও ক্রসফায়ার এড়াতে জিসান বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। এ সময় ভারতে গিয়ে খালেদ মাহমুদ বাংলাদেশের পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের অভাবের সময় খালেদ টাকা দিয়ে পলাতক সন্ত্রাসীদের সাহায্য করেছেন।  
    
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এর আগে ভারতে পলাতক বিএনপিপন্থী শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার। সেই সম্পর্কে ভাঙন ধরার পর তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে দুবাইয়ে পলাতক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে। তার সহযোগিতা নিয়ে টেন্ডারবাজিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন খালেদ। সেই টাকার ভাগ নিয়মিত পৌঁছে যেত জিসানের কাছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডে খালেদের অবস্থান প্রমাণে সিঙ্গাপুরের অভিজাত হোটেল মেরিনা বের সুইমিংপুলে জিসান ও খালেদের সাঁতার কাটার ছবি দিয়ে ছাপানো পোস্টারে ছেয়ে যায় নগরী।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, এক সময় টেন্ডারবাজির টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে জিসানের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি হয় তার। এসময় সম্রাটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার শুরু খালেদের। জিসানের কাছ থেকেও তিনি দূরে সরে আসেন। এক পর্যায়ে বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জিসানের বেশ কিছু ক্যাডার ধরিয়ে দেন তিনি, বেশ কয়েকজন ক্রসফায়ারে নিহত হয়। এরপর মুখোমুখি হয়ে পড়েন জিসান ও খালেদ। তখন থেকেই নিরাপত্তার খাতিরে অস্ত্র উঁচিয়ে চলতে থাকেন খালেদ ও তার ক্যাডাররা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে খালেদের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। গত সপ্তাহে দুইজনের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে। থাইল্যান্ডে পলাতক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী উল্লাহ নবীর সঙ্গেও রয়েছে খালেদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

আন্ডারওয়ার্ল্ড ও খালেদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, থাইল্যান্ডে পলাতক মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী উল্লাহ নবী খালেদের ব্যবসায়িক অংশীদার। ব্যাংককে একটি টু-স্টার মানের হোটেল ও পাতায়াতে ফ্ল্যাট ব্যবসায় বিনিয়োগ আছে খালেদের। এসব দেখভাল করেন নবী। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অভিজাত সুপারমল প্যাভেলিয়নের উপরে ১১ কোটি টাকায় সম্পতি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন খালেদ। সেখানে গড়েছেন সেকেন্ড হোম। স্কটল্যান্ডেও কিনেছেন বাড়ি। সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য পরিবার নিয়ে ঘনঘন যাতায়াত করেন। সেখানে বিনিয়োগ ভিসায় স্থায়ীভাবে পরিবার নিয়ে থাকার প্রস্ততিও চলছে তার।

জানা গেছে, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ পাঁচজন সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের সকালের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন। ভোরে তারা সে উদ্দেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও যান। তাদের সন্দেহ ছিল, তারা বিমানবন্দরেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে পারেন। এ আতঙ্ক থেকে তারা বিমানবন্দর থেকে গতকাল বিকেলে ফিরে আসেন। 

র‌্যাবের গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথে সম্রাট-খালেদসহ পাঁচজন এক সঙ্গেই ছিলেন। পরে দুপুরের দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গিয়ে যে যার মতো আলাদা হয়ে যান। সেখান থেকে খালেদ বিকেল ৩টা ৩১ মিনিটে ফিরে যান তার বাসায়। সেখান থেকে দ্রুতই বের হয়ে যাওয়ার কথা ছিল খালেদের। কিন্তু এর মধ্যেই র‌্যাব তার বাসায় ঢুকে পড়ে। যার ফলে তিনি আর বাসা থেকে বের হতে পারেননি। সেখানেই গ্রেফতার হন খালেদ। 

এইচএম/বিএস 
 

আরও পড়ুন