অবশেষে পুলিশি বাধা ও গ্রেফতার উপেক্ষা করেই দীর্ঘদিন (প্রায় পাঁচ বছর)পর নয়াপল্টনে সমাবেশ করছে বিএনপি। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা, ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী অসম চুক্তি ও কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশ করছে বিএনপি।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার এ জনসমাবেশের ঘোষণা দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। কিন্তু গত দুইদিন অনেক চেষ্টা তদবির করেও সমাবেশের জন্য ডিএমপি পুলিশের অনুমতি পেতে ব্যর্থ হয় দলটি। আজ শনিবারও দুইবার অনুমতির জন্য ডিএমপি কার্যালয়ে যান বিএনপির প্রতিনিধিদল। কিন্তু সমাবেশের অনুমতি না পেয়েই তাদের ফিরতে হয়।

এদিকে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তারা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সরকারের পদ্যতাগ, আবরার হত্যায় জড়িতদের ফাঁসি ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তাল করে তোলেন পুরো পল্টন এলাকা।

সমাবেশের বিষয়ে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক গণমাধ্যমকে বলেন, অনুমতি না পেলে সমাবেশ করতে পারবে না বিএনপি।

কিন্তু পুলিশি বাধা ও উত্তেজনার মধ্যেই সমাবেশ এগিয়ে নিচ্ছে বিএনপি। সমাবেশে ইতোমধ্যেই যোগ দিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাসার, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।

নেতারা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের মূল গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে মাইকে বক্তব্য রাখছেন। সামনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নানা শ্লোগান দিচ্ছেন।  

এদিকে সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ায় সমাবেশ স্থলের চারপাশে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য তাদের ঘিরে রেখেছে। সমাবেশস্থলের পাশে রাখা হয়েছে সাঁজোয়া যান এবং জলকামানবাহী গাড়ি। নয়াপল্টনের আশপাশেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।শনিবার বেলা ২টা থেকে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড.আব্দুস সালাম আজাদ দৈনিক জাগরণকে জানান, জনসমাবেশের অনুমতির জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আজ সকালে ডিএমপিতে যান। কিন্তু ডিএমপি কমিশনার ব্যস্ত থাকায় আমাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেননি। আজাদ জানান, পরে দুপুর সাড়ে ১২টার পর আবারও প্রতিনিধি দল ডিএমপিতে গেলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি। আমাদের এ শান্তিপূর্ণ জনসমাবেশ অবশ্যই বেলা দুইটা থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শুরু হবে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে ‘দেশের স্বার্থবিরোধী’চুক্তি বাতিল ও বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে শনিবার ঢাকাসহ দেশের সকল মহানগরে ও রোববার দেশের সকল জেলা সদরে জনসমাবেশ ঘোষণা করে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

এ সময় খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে প্রতিবেশী দেশকে খুশি করতে অসম চুক্তি হয়েছে। ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর চুক্তির সমালোচনা করে তিনি বলেন, সফরকালে স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার সাব্রুম শহরের জনগণের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর নির্বিঘ্নে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। বাংলাদেশের সমূদ্র উপকূলে যৌথ পর্যবেক্ষণের জন্য রাডার বসানোর অনুমতি দিয়েছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশ থেকে এলপিজি গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে। অথচ  বহু বছর ধরে তিস্তা এবং ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার ব্যাপারে শুধুই আলোচনা করে চলেছে। এবারও শুধু আশাই পেয়েছে- কোনো স্পষ্ট নিশ্চয়তা পায়নি।

এদিকে,জনসমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টনে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।একদিকে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও অন্যদিকে নয়াপল্টন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতিও দেখা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর নেতাকর্মীরা এখন মুখোমুখি অবস্থানে। ইতোমধ্যেই ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান অভিসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।  

টিএস/বিএস