• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০১৯, ১১:১৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৪, ২০১৯, ১১:২০ এএম

সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম

আজ সোমবার (৪ নভেম্বর) বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৮ সালের আজকের এই দিনে (৪ নভেম্বর( ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

তরিকুল ইসলাম ছিলেন একাধারে রাজনৈতিক নেতা, উন্নয়নকর্মী, গণতন্ত্রের প্রবক্তা এবং কর্মী-বান্ধব জননেতা। রাজনীতিতে তিনি যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার জন্য সম-সাময়িককালে দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন এবং রাজনৈতিক সহযোদ্ধা।

তরিকুল ইসলামের জন্ম ১৯৪৬ সালে ১৬ নভেম্বর যশোর শহরে। বাবা আবদুল আজিজ ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। মা মোসাম্মৎনূরজাহান বেগম ছিলেন একজন সুগৃহিণী।

১৯৬১ সালে তিনি যশোর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্টিকুলেশন, ১৯৬৩ সালে যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে আইএ পাস করেন। এরপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৬৯ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।

তরিকুল ইসলাম ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসাবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৩ সালে সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি তৎকালীন মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লীগের বিপরীতে ফাতেমা জিন্নাহর অনুকূলে জনমত সৃষ্টির জন্য অধ্যাপক শরীফ হোসেনের সহযোদ্ধা হিসেবে গ্রামে গ্রামে গমন করেন এবং মানুষকে সংগঠিত করেন। তার রাজনৈতিক জীবন ছিল বৈচিত্রপূর্ণ ও বর্ণাঢ্য। বহুবার কারাবরণ ও নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৬৬ সালে রাজনৈতিক এক মিথ্যা মামলায় তরিকুল ইসলামকে বেশ কিছুদিন কারাবরণ করতে হয়। ১৯৬৮ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের জন্যে তাকে রাজবন্দি হিসাবে ৯ মাস যশোর ও রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রাখা হয়। দেশের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় গণআন্দোলনে নেতৃত্বদানের জন্যে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতিত হন এবং কিছুদিন হাজতবাস করেন। জাতীয় রাজনীতিতে তরিকুল ইসলাম ছিলেন প্রথম সারির নেতা। ১৯৭০ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করেন তিনি। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী আহূত ফারাক্কা লং মার্চে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৩ সালে তরিকুল ইসলাম যশোর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে তিনি তিন মাস কারাভোগ করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মরহুম মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নেতৃত্বে ন্যাপ (ভাসানী) বিলুপ্ত হলে তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যশোর সদর নির্বাচনি এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি জাতীয়তাবাদী দলের জেলা আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালের ৫ মার্চ তরিকুল ইসলাম সড়ক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৮২ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করলে তরিকুল ইসলাম কারারুদ্ধ হন এবং তিন মাস অজ্ঞাত স্থানে আটক থাকেন। অতঃপর তথাকথিত এরশাদ হত্যা প্রচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি হিসাবে ৯ মাস ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ থাকেন এবং নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। জেলখানা থেকে মুক্ত হয়ে তিনি এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে তাকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এ সময়ে তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করেন। ৯০ এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তরিকুল ইসলাম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯১ সাল থেকে বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপালনকালীন তিনি পর্যায়ক্রমে সমাজকল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, খাদ্য, তথ্য, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। আমৃত্যু তিনি বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।

বিএনপির কর্মসূচি 

তরিকুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে যশোরে মরহুমের কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, খতমে কোরআন এবং আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তরিকুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেবেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবীগণ।

টিএস/এসএমএম