• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০১৯, ০৯:৪৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২০, ২০১৯, ০৯:৪৮ এএম

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আজ

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আজ
আওয়ামী লীগের লোগো

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনকে ঘিরে রাজধানীতে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।সম্মেলনে অংশ নিতে সারাদেশ থেকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো  হচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

আজ বিকাল ৩টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দলটির সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শনিবার (২১ ডিসেম্বর) কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি নির্বাচন করা হবে। এ দিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে নাম ঘোষণা করা হবে।  

দলীয় সূত্র জানায়, এবার সম্মেলনে নেতৃত্বের চমক থাকবে বলেই ধরা হচ্ছে। সেই চমক কি না দেখায় অপেক্ষায় দেশের সাধারণ মানুষও। 

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বড় রদবদল হতে পারে দলের প্রেসিডিয়াম ও সম্পাদকীয় পদগুলোয়। সম্মেলন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য সাজে সেজেছে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশন। দুই দিনব্যাপি (শুক্র ও শনিবার) সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। সম্মেলনের আগে নেতাকর্মীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে দলীয় সভাপতি পদে নবমবারের মত শেখ হাসিনাই সভাপতি থাকছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। দলীয় নেতারা বলছেন, এই মুহূর্তে দলে শেখ হাসিনা অপরিহার্য ও তার বিকল্প নেই। তবে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কোন কিছু বলতে পারছেন কেউই। তবে এবারও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরেই আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলে আলোচনা রয়েছে। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক অন্য কেউও আসতে পারে এমন কথাও দলের ভেতর আলোচনা রয়েছে ।  

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে সভানেত্রী পদে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সম্মেলনের আগের রাত অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে দলীয় প্রধানের সাক্ষাৎ পান নি দলটির নেতারা। ফলে দলে বড় ধরনের রদবদল আসতে পারে এটা ধারণা করা হচ্ছে।
গত বুধবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত হয় দলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির শেষ কার্যনির্বাহী সভা। সভায় দলের ২১তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন পরিচালনার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। অপর দুই সদস্য হলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. মশিউর রহমান এবং প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান খান।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, দলের মধ্যে চলমান শুদ্ধি অভিজানের প্রভাব এবারে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনেও দেখা যাবে। এবার দলের সভাপতিমন্ডলী ও সম্পাদকমন্ডলীর বিভিন্ন পদে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। যার আভাস ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে। সম্মেলনের আগে দলের শেষ কার্যনির্বাহী সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সংখ্যা ৪১ থেকে বাড়িয়ে ৫১ করা হয়েছে। এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা দলে বিভিন্ন পদে আসতে পারেন বলে কেন্দ্রীয় নেতারা জানাচ্ছেন। যার মধ্য দিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দলের কয়েকজন নেতা। আওয়ামী লীগের  মূল কমিটির বাইরে এতদিন সীমিত আকারে সহসম্পাদক পদ রাখার বিধান থাকলেও এবারের জাতীয় সম্মেলনের পর তা আর থাকছে না।  এ ছাড়া  এবারের জাতীয় সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্রে আর তেমন কোন সংশোধনী আনা হয় নি বলেই দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এবারেরই প্রথম সম্মেলনের আগে দল ও সরকার আলাদা করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে শেষ মূহুর্তে না হবার সম্ভাবনা কম। 

দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, এবারের জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে  নির্বাচন কমিশনের আইনে ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার যে বাধ্যবাধকতা দেওয়া আছে তার পূরণ করা হচ্ছে। দলের বর্তমান কমিটিতে সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে ১৫ জন নারী আছেন। 

এ দিকে গত কয়েকদিন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এবং দলের কার্যালয় ঘুরে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি সম্মেলনের আগে সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছে সেটি নিয়ে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেলেও এবার সেই সুযোগ নেই। সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম আলোচনায় আছে, তারাও তো বটেই নীতি নির্ধারনী পর্যায়েরও কারো কাছে কোনো তথ্য নেই।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, অন্যান্যবার সম্মেলনের আগের কার্যনির্বাহী বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিত থাকলেও এবার দলের নেতাদের তেমন কিছুই বলেন নি প্রধানমন্ত্রী। সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা এখনো অন্ধকারে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি দেখতে এসে এবারের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে কি না জানতে চাইলে দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়টা নেত্রী আর আল্লাহ জানেন।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে ইতিমধ্যেই বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও দলে অন্য একটি পক্ষ তৈরি হয়েছে, যা সম্মেলনের আগের দিন পর্যন্ত রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সাধারণ সম্পাদক ইস্যুতে নিজেদের পছন্দের লোককে বানাতে গত কয়েক দিন ধরেই  কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে একটি চাঁপা দ্বন্দ বিরাজ করছে। সাধারণ সম্পাদক পদে এবার আলোচনায় আছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বি এম মোজাম্মেল হক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় সদস্য আজমত উল্লাহ খান।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, সাধারণ সম্পাদক হবো কি না আমি জানি না এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা সে ব্যাপারে আমাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিতে চান কি না সেটাও আমার জানা নেই। তবে যদি এটা কোন কারণে হয়, যদি মনে করেন বা এ রকম কোন অবস্থা হয় তাহলে আমি মনে করি আমার প্রধান চ্যালেঞ্জই হবে উনার যে ভাবনা, উনার যে রাজনৈতিক লক্ষ্য, উদ্দেশ্য-সেটিকে বাস্তবায়ন করা নিজেকে নিবেদিত করা। এটাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা আমাদের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার। যারা কাউন্সিলর, আমরা যারা থাকবো, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সভানেত্রীকে দায়িত্ব দেবো। কারণ তিনি তার দীর্ঘ ৩৮ বছরের পথচলার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যেভাবে দেখেছেন, বুঝেছেন, পর্যবেক্ষণ করেছেন;  এর থেকে বেশি পর্যবেক্ষণ এ দলের মধ্যে আর কারো নেই। বরং তিনি অতীতে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সঠিক ছিল। দলকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে যুগোপযোগী ছিল। সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করবো।

বিএম মোজাম্মেল হক দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক কে হবেন এটার দায়িত্ব আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার উপর। উনি সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক, উনিই নেবেন। 

এএইচএস/বিএস 
 

আরও পড়ুন