• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২০, ০৮:৫৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৭, ২০২০, ০৮:৫৬ পিএম

সামাজিক ব্যাধি নিধনে বিলুপ্তপ্রায় পঞ্চায়েতেই আস্থা তাপসের

সামাজিক ব্যাধি নিধনে বিলুপ্তপ্রায় পঞ্চায়েতেই আস্থা তাপসের
বক্তব্য রাখছেন শেখ ফজলে নূর তাপস - ছবি : কাশেম হারুন

পুরান ঢাকা ঐতিহ্যবাহী বিলুপ্তপ্রায় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা আবারো স্বরূপে ফিরিয়ে এনে মাদকসহ অন্য সামাজিক ব্যাধি নিধনে পদেক্ষপ নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেছেন, সুশাসিত ঢাকার আওতায় ঐতিহ্যবাহী ঢাকার পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কায়েম করে আমরা সামাজিক ব্যাধি মাদককে চিরতরে নিধন করব। এলাকার মুরব্বি, গুণীজন, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পঞ্চায়েত কমিটির মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক সমস্যা সমাধান করবে। 

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তাপস। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে যখন দেখি একটি বোন ধর্ষিত হয়েছে, তখন আমাদের বুকে রক্তক্ষরণ হয়। আমরা নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করব, যাতে আমাদের মা-বোনেরা নিরাপদে চলতে পারে। 

পঞ্চায়েত ব্যবস্থা মূলত এলাকার সবচেয়ে জ্ঞানী ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে। যাদের প্রধান কাজ  আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং প্রশাসনের সঙ্গে সার্বিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলা। এখনও পুরান ঢাকার কিছু এলাকায় এই ব্যবস্থা আছে, তবে এর কর্মকাণ্ড একেবারেই সীমিত। এ কমিটিগুলো আগের মতো সালিশ বিচার না করলেও শুধু সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকে।

বৃহত্তর পরিসরে জনগণের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে মেয়র পদে লড়ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী নিরলস পরিশ্রম করে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছেন। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছেন। স্বপ্ন দেখিয়েছেন একটি উন্নত বাংলাদেশের। তার নেতৃত্বে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত বাংলাদেশে রূপান্তরিত হব। সেই উন্নত বাংলাদেশের প্রয়োজন উন্নত রাজধানী। প্রাণের শহর সেই ঢাকাকে উন্নত হিসেবে গড়ে তুলতে মনোনয়ন চেয়েছি। আজ সময় হয়েছে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর। সময় হয়েছে নবসূচনা করার। নতুন পথে যাত্রা শুরুর করার। এখন ঢাকার উন্নয়নে দরকার সঠিক নেতৃত্ব ও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার।

তাপস বলেন, অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। অনেক অবহেলা, অনেক গাফিলতিতে আজকে ঢাকা একটি অপরিকল্পিত নগরী হয়েছে। দূষণে আক্রান্ত নগরী হয়ে গেছে। আজ থেকে যদি কাজ আরম্ভ না করি প্রাণের ঢাকাকে বাঁচানো যাবে না।

ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা এবং উন্নত ঢাকা- ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনাকে এই ৫ ভাগে ভাগ করে এগোতে চান বলে জানান শেখ ফজলে নূর তাপস।

১. পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে পুনরুজ্জীবিত করবো। শুধু ঢাকাবাসীর কাছে নয়, সারা বিশ্বের কাছে ঢাকার ঐতিহ্য প্রস্ফূটিত করব।

২. আমাদের ঢাকাকে আমরা বায়ুদুষণ মুক্ত করব। সবুজায়ন করব। ঢাকাকে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে সন্তানদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, মুরব্বিদের জন্য পার্ক, হাঁটার ব্যবস্থা করবো।

৩. সচল ঢাকা : এখন আমাদের নাভিশ্বাস উঠে যায় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে। আমাদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি সংগ্রাম করতে হয়। মেট্রোরেলের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হবে না। সব গণপরিবহনকে ব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস করতে হবে।

৪. সুশাসিত ঢাকা : স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে ঢাকা অভিভাবকত্ব নিয়ে এই কর্পোরেশনকে দেশের মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব। এর আওতায় ঢাকার সকল নাগরিক তাদের মৌলিক নাগরিক সুবিধা দোরগোড়ায় পাবে। দিনের ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহের ৭ দিন, বছরের ৩৬৫ দিন জনগণের জন্য কাজ করবে সিটি কর্পোরেশন। ডেঙ্গু মশা মহামারি আকার ধারণ করার পর কেউ ফগার নিয়ে যাবে না। মশা নিধন আমরা দিনের প্রথম দিন থেকে শুরু করব।

সুশাসিত ঢাকার আওতায় ঐতিহ্যবাহী ঢাকার পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কায়েম করে আমরা সামাজিক ব্যাধি মাদককে চিরতরে নিধন করব। এলাকার মুরব্বি, গুণীজন, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পঞ্চায়েত কমিটির মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক সমস্যা সমাধান করবে।

আজকে যখন দেখি একটি বোন ধর্ষিত হয়েছে তখন আমাদের বুকে রক্তক্ষরণ হয়। আমরা নিরাপদ ব্যবস্থা তৈরি করব। যাতে আমাদের মা বোনেরা নিরাপদে চলতে পারে।

৫. উন্নত ঢাকা : মহাপরিকল্পনার আওতায় দীর্ঘ মেয়াদি ত্রিশ বছরের পরিকল্পনায় ঢাকাকে উন্নত ঢাকা হিসেবে গড়ে তুলব। যেখানে প্রত্যেকটি রাস্তা, নর্দমা অবকাঠামো উন্নয়ন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাসহ উন্নত শহরের সব উন্নত ব্যবস্থাগুলো গড়ে তুলব। প্রত্যেকটি স্থাপনার স্থায়িত্ব ও মান নিরূপন হবে। দশ বছর অন্ততপক্ষে তার স্থায়ীত্ব হতে হবে। অন্য যে সকল সংস্থা কাজ করবে তাদের আমাদের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের নিয়ম মেনে তাদের কাজ করতে হবে। আমার রাস্তা আমি নির্মাণ করার পর অন্তত তিন বছর তারা রাস্তা নষ্ট করতে পারবে না। অনেক সময় দেখা যায় যে, তিন মাসের মধ্যে রাস্তা কেটে নষ্ট করে দেয়। এভাবে রাস্তা নষ্ট করা যাবে না।

এ সময় যুবলীগকে তার ঐতিহ্য ফেরাতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, যুবলীগ প্রাণের সংগঠন। যুবলীগের উপর বদনাম এলে আমাদের রক্তক্ষরণ হয়। অন্তরে রক্তক্ষরণ হয়। আজকে সময় হয়েছে- আমাদের প্রিয় নেত্রী চান, যুবলীগ তার ঐতিহ্যে ফিরুক, গর্বের জায়গায় ফিরুক। আজকে সেই সুযোগ হয়েছে। যুবলীগ যেভাবে বঙ্গবন্ধুর ভ্যানগার্ড ছিল, সেভাবে শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড- সেটা প্রমাণ করবে।

আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যুবলীগের প্রত্যেকটি তৃণমূল নেতাকর্মীকে দিনরাত পরিশ্রম করে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চেয়ে বিজয় সুনিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মাঈনুল হোসেন খান নিখিল প্রমুখ উপস্থিতি ছিলেন।

এএইচএস / এফসি

আরও পড়ুন