• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০১৯, ০৫:৩০ পিএম

সিলেটে ঐক্যফ্রন্ট

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দিন

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দিন
বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : জাগরণ



৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি কলঙ্কিত অধ্যায় বলে মন্তব্য করেছেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই কলঙ্ক মুছতে শিগগির নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব।

সোমবার সিলেটে এমন মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। দুপুরে সিলেট পৌছে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা। পরে সেখান থেকে তারা বালাগঞ্জে ভোটের দিন নিহত ছাত্রদল নেতা সোহেলের বাড়িতে যান।

এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বাংলাদেশের জনগণের অধিকারকে হরণ করে নিয়ে গেছে এবং তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। জনগণের রায়কে তারা ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, সারা দেশেই সকলের চোখে-মুখে একটা শোকের চিত্র কারণ জনগণ তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।

নির্বাচন কমিশনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে যে নির্বাচন কমিশন আছে সেই কমিশনের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীই দেখেছে যে কতোটা অযোগ্য এ নির্বাচন কমিশন। যাদের কোন যোগ্যতাই নেই নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন কি রকম হবে এই রকম প্রশ্নেরই এখন আর কোন প্রয়োজনই নেই। জাতীয় নির্বাচনকে বাতিল করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বারবার বলছি যে গত জাতীয় নির্বাচনকে বাতিল করতে হবে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের রায়ের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠিত সরকার গঠন করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য এবং সকল দলের অংশগ্রহণে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট অটুট আছে, সামান্যতম সমস্যা নেই আমাদের মধ্যে। রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের কিছুটা অমিল থাকতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই।

নির্বাচন পরবর্তী ফের সংলাপের ডাক দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন,  সংলাপের এজেন্ডা কী হবে সেটি জানানো হয়নি। সংলাপে অংশ নিতে পুনরায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন বিষয়ক এজেন্ডা চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের আগে যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল, তাদের সঙ্গে আবারও সংলাপ হওয়ার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নির্বাচনের আগে ওই সংলাপে অংশ নিয়েছিল বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্টসহ আরও বহু দল। ওই সংলাপের সময়ই বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ঘোষণা করে। মির্জা ফখরুল বলেন, এজেন্ডায় যদি বিগত নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীরন নির্বাচনের বিষয় থাকে, তা হলে আমরা সংলাপ নিয়ে চিন্তাভাবনা করব। কারণ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে সংলাপ হয়েছিল তা অর্থবহ হয়নি।

জামায়াত নিয়ে ড. কামালের বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামায়াত নিয়ে কামালের বক্তব্য গণফোরামের। এটি ঐক্যফ্রন্টের বক্তব্য নয়। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে এখনও কোনো আলাপ-আলোচনা করিনি। জামায়াত ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্টে ফাটল ধরবে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঐক্যফ্রন্টে ফাটল ধরার কোনো সুযোগ নেই। কারণ অভিন্ন দাবিতে একসঙ্গে আন্দোলন করছি।

উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, উপজেলা নির্বাচনে এলে তো সরকার পরিবর্তিন হয় না। কাজেই এটি নিয়ে এতটা গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। ‘তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে অযোগ্য বিশ্ব তা দেখেছে। তাদের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন হতে হবে সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সফরকারী দলে আছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী, মহাসচিব হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব প্রমুখ।

মাজার জিয়ারতের সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরসহ বিএনপি ও বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠনের নেতা এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অসংখ্য নেতাকর্মী।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা সোমবার দুপুর  ১২ টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে পৌঁছে প্রথমে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন। পরে নেতৃবৃন্দ হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন। পরে সেখান থেকে বালাগঞ্জে ভোটের দিন নিহত ছাত্রদল নেতা সোহেলের বাড়িতে যান ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। তারা সেখানে অবস্থান করে নিহত সোহেলের কবর জিয়ারত করে স্বজনদের সান্তনা দেন।

প্রসঙ্গত, এ সফরের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা তাদের পূর্বঘোষিত তিন দফা কর্মসূচি শুরু করলেন। ধারাবাহিকভাবে দেশের অন্যান্য এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাও পরিদর্শন করবেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।

এসজেড