• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১১, ২০১৯, ০৬:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১২, ২০১৯, ১২:১৪ এএম

বাচ্চার জন্য দুধ চুরি, বাবার পাশে দাঁড়ালেন পুলিশ কর্মকর্তা

বাচ্চার জন্য দুধ চুরি, বাবার পাশে দাঁড়ালেন পুলিশ কর্মকর্তা
পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম

তিন মাস চাকরি না থাকা বাবাকে চাকরি খুঁজে দিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম।

শনিবার (১১ মে) সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া এই পুলিশ কর্মকর্তা। ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে এসি জাহিদুল জানান, রাজধানীর খিলগাঁওয়ে একটি সুপার শপ থেকে দুধ চুরি করে পালাচ্ছিলেন এক বাবা। ‘চোর চোর’ বলে মারধর করছিলেন স্থানীয়রা। পরে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রকাশ পায় আসল ঘটনা। পরে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরি।

শনিবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় তার পোস্টটি। পোস্টে এসি জাহিদুল লেখেন, ‘‘গতকাল রাত আনুমানিক ৮.৪৫ মিনিট। বাকি সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে পেলাম। ঘটনা কি তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিঁচড়ে আমার সামনে নিয়ে আসলো। ঘটনা জানতে চাইলাম। একজন বলল, ‘স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে পালাচ্ছিল।’ পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বলল, ‘স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি চুরি করেছে? সিকিউরিটি গার্ড বলল, ‘স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল।’ আমার খটকা লাগল, আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘দুধ’? তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে বলল, ‘স্যার বাচ্চাদের ন্যানো দুধের প্যাকেট।’ আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন? সে কেঁদে ফেলল। তারপর বলল, ‘স্যার, তিন মাস হলো চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।’ সাথে সাথে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়ল। মনে হলো কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে। ওর জায়গায় আমি থাকলেও হয়তো একই কাজ করতাম। সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? সে বলল, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।’’

ঘটনাটির বিষয়ে এসি জাহিদুল আরও বলেন, ঘটনাটি আমার কাছে খুবই স্পর্শকাতর লেগেছে। নাম-পরিচয় রেখে তাকে ছেড়ে দেই। আমি যেটা করেছি মানুষ হিসেবে এমনটা করা খুবই স্বাভাবিক। আমি জানি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ দুধের প্যাকেট চুরি করবে না। 

ওই বাবা মালিবাগের হোসাফ টাওয়ারের একটি মোবাইলের দোকানে কাজ করতেন। তাকে সাহায্যের বিষয়ে অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ জন্য আজ রাত ৮টায় তাকে আমার অফিসে ডেকেছি। দেখি তাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারি কি-না।

এইচএস/এসএমএম