• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৯, ২০১৯, ০৯:২৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৯, ২০১৯, ০৯:২৫ এএম

ঈদের আগে সক্রিয় জাল টাকা চক্র

ঈদের আগে সক্রিয় জাল টাকা চক্র

রমজান ও ঈদ উপলক্ষে রাজধানীতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল টাকা চক্রগুলো। মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে র‌্যাব ও পুলিশ ব্যস্ত থাকার সুযোগটি তারা কাজে লাগাচ্ছে। ফলে এবার এ সংক্রান্তে তেমন গ্রেফতার নেই। তবে রাজধানীর জিগাতলা, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় জালনোট তৈরির একাধিক চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। 

এরমধ্যে রাজধানীর সবুজবাগ থানা এলাকার রাজারবাগ পানির পাম্পের গলি থেকে ১০০০ ও ৫০০ টাকার জাল নোটসহ আবদুর রশিদ (৩০) নামে জাল নোট চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। সেও জাল নোটের বেশ কিছু চক্র সক্রিয় থাকার খবর দেয়। এর দু’দিন পর মগবাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোটসহ ইসমাইল (৫৭) ও সোহেল (৩২) নামে অপর চক্রের আরো দু’সদস্যকে গ্রেফতার করে রমনা থানা পুলিশ। 

এই ঘটনার আগে ২১শে মে উত্তরায় জাল নোট বাজারে ছাড়ার সময় ১২ নম্বর সেক্টরের ১৯ নম্বর রোডে অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয় আরো দুই জাল নোট চক্রের সদস্যকে। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু ১০০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের সদস্যরা। গ্রেফতারকৃত শাহরিয়ার (২৫) ও স্বপন (২২) পণ্য ক্রয়ের আড়ালে বা নানা প্রতারণার মাধ্যমে জাল নোট বাজারে ছাড়ার কাজে লিপ্ত বলে পুলিশকে জানায়। 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, জাল নোট কারবারিরা সক্রিয় রয়েছে। ঈদ ও বৌদ্ধ পূর্নিমা ঘিরে তারা বড় টার্গেট নিয়ে ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে জাল টাকা সরবরাহ করে ও বিক্রি করে। মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে এই জালনোট বাজারে বিস্তার করছে। ঈদ উপলক্ষে গ্রেফতার হওয়া চক্রটি বাজারে এক থেকে দুই কোটি টাকার জাল নোট ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে বলে গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। কাজেই জালনোট থেকে বাঁচতে ক্রেতা-বিক্রেতাকে ব্যস্ততার মাঝেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ঈদের আগে বিশাল অংকের জাল টাকা নিয়ে বাজারে সক্রিয় হয়েছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। সুযোগ পেলেই তারা বিভিন্ন পণ্য কেনার নাম করে জাল টাকা সরবরাহ করছে। ১৮ লাখ টাকার জাল নোটসহ আটক রাব্বি (২৩) র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এমনই তথ্য দিয়েছেন। র‌্যাব-১০ এর সদর দফতর ধলপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের আটক করতে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে।

এছাড়া গত সোমবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে র‌্যাব-১০ এর সদস্যরা রাজধানীর ডগাইর এলাকা থেকে ১৮ লাখ টাকার জাল নোট ও জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসহ রাব্বি নামের ওই যুবককে আটক করেন।

র‌্যাব-১০ এর অপারেশন অফিসার ফজলে রাব্বি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জাল নোট তৈরি করে বাজারে ছেড়ে দেয়া বর্তমান সময়ের একটি আলোচিত ঘটনা। এতে প্রতারিত হচ্ছেন দেশের নিরীহ জনগণ। 

এ প্রতারক চক্রকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাব-১০ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় জানা যায়, ডেমরা থানার ডগাইর এলাকায় জাল টাকা লেনদেন হচ্ছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে বিকালে মেজর জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের র‌্যাবের একটি দল অভিযান পরিচালনা করে জাল টাকা ব্যবসায়ী রাব্বিকে হাতেনাতে আটক করে।

পরবর্তী সময়ে বাসা তল্লাশি করে নগদ ১৮ লাখ টাকার জাল নোট, জলছাপযুক্ত বিপুল পরিমাণ টাকা তৈরির কাগজসহ টাকা বানানোর মেশিন ও যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ১টি ল্যাপটপ, ৪টি প্রিন্টার, ১টি পেন ড্রাইভ, ৪টি সিডি, ১০২টি প্রিন্টারের কালি, ১১১ বান্ডিল টাকার নিরাপত্তা সুতা, ১৭ বোতল বিভিন্ন রকমের রং এবং ৭টি টাকা বানানোর ডায়াস উদ্ধার করা হয়।  

রাব্বি আরো জানান, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ জাল টাকার ব্যবসা করে আসছিলেন। তিনি নিয়মিতভাবে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা করে তৈরি করে এজেন্টদের মাধ্যমে বিক্রি করতেন। তিনি প্রতি এক লাখ টাকার জাল নোট দশ হাজার টাকা করে বিক্রি করেন। এ চক্রের আরো কয়েকজন সদস্য ঈদের আগ মুহূর্তে বাজারে জাল টাকা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমরা তার কাছ থেকে বেশ কিছু নাম পেয়েছি। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এইচ এম/টিএফ