• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০১৯, ১০:১৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১১, ২০১৯, ১০:১৩ এএম

‘নতুন আইনের ভয়ে সব লেগুনা ঘুমাইতাসে’

‘নতুন আইনের ভয়ে সব লেগুনা ঘুমাইতাসে’

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকাল। মোহাম্মদপুর বিআরটিসি বাস টার্মিনাল গেটে দাঁড়িয়ে লেগুনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফারহান খান। তার গন্তব্য ফার্মগেট। প্রায় ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করে মাত্র দুটো লেগুনার দেখা পেয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রচণ্ড ধাক্কাধাক্কি করে সেগুলোয় উঠা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে তিনি বেশ অবাক হয়েছেন, কেননা, এই ত্রিশ মিনিটে ফার্মগেটগামী ডজনখানেক লেগুনার দেখা পাবার কথা। কিন্তু মাত্র দুটি কেন?

তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, বাসের চেয়ে লেগুনায় চড়তে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। যাত্রীদের ঠাসাঠাসি নেই বলে। কিন্তু এমন তো না যে, লেগুনার ধর্মঘট চলছে বা সরকার নিষেধ করেছে চালাতে। বুঝতে পারলাম না আজকে কেন এমন হচ্ছে।

এ সময় লেগুনার একজন কন্ডাক্টর যাত্রী ডাকাডাকি করছিলেন। কৌতুহলী ফারহান কন্ডাক্টর ফারুকের কাছে যান। ফারহানের প্রশ্নে কিশোর বয়সী ফারুক বলেন, কেমনে চলব? একটারও জাতের কাগজপাতি নাই। অনেক লেগুনা ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্সও নাই। নতুন আইনের ডরে সব লেগুনা ঘুমাইতাসে।

ওদিকে প্রায় ৪৫ মিনিটের প্রান্তে ফারহান যে লেগুনাতে চড়তে পেরেছেন, সেটাতেও চড়তে মহাভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কেননা, ফারহানের মতন অনেকেই অপেক্ষা করছিলেন লেগুনার জন্য।

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর প্রভাবে যে শুধুমাত্র মোহাম্মদপুর টু ফার্মগেট রুটে লেগুনা চলাচল কমে গেছে, তা নয়। ওই একই প্রভাবে ঢাকার প্রায় ১৫০টি লেগুনা রুটের একই দশা। লেগুনার মালিক, চালক, কন্ডাক্টরদের দেয়া তথ্যমতে- ঢাকায় যত লেগুনা চলাচল করছে, তার অর্ধেকেরও বেশি কোনো না কোনোদিক দিয়ে অবৈধ। কোনোটার ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই বা ফিটনেস সার্টিফিকেট নেয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে। কোনোটির রোড ট্যাক্সের কাগজ নেই ইত্যাদি। তাছাড়া অধিকাংশ লেগুনা চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। এজন্য ফিটনেস থাকা সত্ত্বেও অনেক লেগুনা রাস্তায় নামতে পারছে না বৈধ চালকের অভাবে।

রাজধানীতে এখন নিবন্ধিত লেগুনার সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি। ১৫০টিরও বেশি রুটে দিনরাত চলাচল করে এসব। মোহাম্মদপুর টু ফার্মগেটে, ফার্মগেট টু ঝিগাতলা-হাজারীবাগ, নিউমার্কেট টু হাজারীবাগ, মিরপুর ২ নম্বর (৬০ফিট) টু গুলশান-মহাখালী, আজিমপুর টু শনিরআখড়াসহ আরও কয়েকটি রুটে কয়েকদিন সরেজমিনে যায় দৈনিক জাগরণ। দেখা যায়, এসব রুটে লেগুনার সংখ্যা ৫০ ভাগেরও বেশি কমে গেছে। এ কারণে লেগুনা মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে যতটা প্রতিক্রিয়া জন্মেছে, তার চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া যাত্রীদের মাঝে।

মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় কথা হয় লেগুনার মালিক আবদুর রশীদের সঙ্গে। দৈনিক জাগরণের প্রশ্নে তিনি বলেন, কাগজপাতিতে কিছু তো ঝামেলা থাকেই। বহুত লেগুনা আছে যেগুলো কার কাছ থেকে কিনা হইছে, সেইটারই ঠিক নাই। তারপরেও কিন্তু চলছে। মামলা তো খাচ্ছেই। এহন যে আইন আসছে সেইটার জরিমানা তো আগের আইনের চেয়ে বেশি, এইটাই হচ্ছে সমস্যা। আমারও ৪টা গাড়ি গত ১ নভেম্বর থেকে বসা।

একই এলাকার লেগুনা মালিক হাজী নজরুল হক বলেন, এতোদিন কাগজ করি নাই, ঠিক আছে, দোষ আমগো। কিন্তু এহন তো গেসি করতে, গিয়া দেহি বিআরটিএ’র যেই অবস্থা, মইরা যাওন লাগব ভীড়ের যাতায় (চাপে)।

মিরপুর ২ নম্বর থেকে প্রতিদিন গুলশান লেগুনায় চড়ে অফিস করেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ওদের কাগজ নেই, ওরা চালাচ্ছে না। কিন্তু যা সাজা ভোগার তা তো আমরাই ভোগ করছি। দেখেন, গুলশান যাওয়ার জন্য চার চাকার কোনো পরিবহন এই মিরপুর ২ এ একেবারেই নেই।

এ রুটের আরেকজন নিয়মিত যাত্রী হায়দার হোসেন। তিনি বলেন, ১ নভেম্বর থেকে রিকশা, পাঠাও, বাস মিলিয়ে চলতে হচ্ছে। কী করব, অফিস তো এসব বুঝবে না, সময় মতন যেতে তো হবেই। খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

আজিমপুরে কথা হয় লেগুনা মালিক সমিতির নেতা উজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, হঠাৎ কইরা এমন আইন করা একটুও ঠিক হয় নাই। এতোগুলা লেগুনার শ্রমিক হাত গুটায়া বইসা রইছে।

কিন্তু আপনারা মালিকরা এতো বছর ধরে কাগজপত্র করেননি কেন, প্রশ্নে তিনি বলেন, এই করুম করুম কইরা করা হয় নাই।

আরএম/টিএফ
 

আরও পড়ুন