• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০১৯, ০৮:৪৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২, ২০১৯, ০৯:০০ এএম

ধুলার রাজ্য ঢাকা

বায়ুদূষণে বাড়ছে রোগবালাই, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা

বায়ুদূষণে বাড়ছে রোগবালাই, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা

ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। অতিরিক্ত বায়ুদূষণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে হচ্ছে হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা, ব্রংকাইটিজ, সাইনাস ও এলার্জিতে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশি রয়েছে শিশু, কিশোর ও বৃদ্ধরা। বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে নগরীর শিশুরা।

শীতের শুষ্কতা, সেই সঙ্গে শহরজুড়ে খোড়াখুড়িতে রাজধানীর বাতাসে ধুলার মাত্রার বেড়ে হয়েছে কয়েকগুণ। বায়ুদূষণের কারণে ঢাকা শহরে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি নানা শারীরিক জটিলতাও দেখা দিচ্ছে। এ সকল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি জেনেও বের হতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক মা-বাবা। 

অপরদিকে সম্প্রতি মেট্রোরেলের কাজ চলছে পুরো রাজধানীতে। রাজধানীর আজিমপুর, লালবাগ, হাইকোর্ট, প্রেসক্লাব, কাকরাইল, মতিঝিল, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকায় খোড়াখুড়িতে ওই এলাকায় ধুলার রাজত্ব পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় সব সড়কেই উড়ছে ধুলা উড়ছে। একই অবস্থা মিরপুরের কালসী রোড, ইসিবি চত্বর, মিরপুর ১২ নম্বর এলাকায়। এছাড়া উত্তরার বিভিন্ন সড়কেও ধুলার আধিক্য চোখে পড়ার মতো।

আদালত ঢাকার বায়ু দূষণ কমাতে ধুলাপ্রবণ এলাকাগুলোতে দিনে দুই বার পানি ছিটানোসহ বেশকিছু ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিলেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তণ হয়নি। বর্ষা মৌসুমে বায়ু দূষণ কিছুটা কম হলেও শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারি দফতরগুলোর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখনও নেই। যারা পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছেন, এমন একজন কর্মকর্তাও বায়ু দুষণ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা বলেছেন।

অধিদফতরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, ঢাকা শহরে অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ, গাড়ির ধোঁয়া ও আশপাশের ইটের ভাটাগুলোর কারণে প্রতিবছর এ সময় বায়দূষণ বেড়ে যায়।

অপরদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বায়ু দূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেশি হতে পারে। এখন আবহাওয়া তো শুষ্ক। নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে নিয়ে এ ধরনের রোগ বেশি হচ্ছে। এ সময় শ্বাসতন্ত্রের রোগ ছাড়াও চর্মরোগ, বয়স্ক মানুষের শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা হয়। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্করা বায়ুদূষণের কারণে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

বায়ুদূষণ নিয়ে ২০ বছর ধরে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, ঢাকার বাতাসে ধুলাবালি এবং শিল্পকারখানার ধোয়া বেড়ে যাওয়ায় বাতাসের মান দিনদিন খারাপ হচ্ছে। উপরন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় বাতাসের মান খারাপ হচ্ছে। ফলে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির শিকার হচ্ছে শিশুরা।

তিনি আরও জানান, শহরের ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাতাসের মানের ওপর পরীক্ষা চালান হয়। এতে দেখা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর বাতাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়েও ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। গবেষকরা ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯ থেকে ১০ বছর বয়সী ২৫০ জন শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখতে পান, ১৬.৮% শিক্ষার্থী কাশি, এবং ৫.৬% ছাত্র-ছাত্রী মাইগ্রেন বা মাথাব্যাথায় ভুগছেন। এছাড়াও অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত শিশুর হার ৬%। পাশাপাশি ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী, যাদের আগে কোন ধরণের শ্বাস-প্রশ্বাসগত সমস্যা ছিল না, তারাও এখন স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন না।

বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে রাজধানীর বাতাস। এরই মধ্যে ঢাকার বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার উপস্থিতি সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর।

এইচএম/একেএস

আরও পড়ুন