• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২০, ০৫:০৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৪, ২০২০, ০৫:০৩ এএম

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রফিকের উপহার ‍‍`এক টুকরো ঈদ‍‍`

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রফিকের উপহার ‍‍`এক টুকরো ঈদ‍‍`
বিশেষ আয়োজনের পাশাপাশি নিত্য পণ্যের উপহার গোছাতে ব্যস্ত স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রফিক আহমেদ

করোনা পরিস্থিতিতে নিজের সীমিত সামর্থ্যের মাঝে সমাজের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে ঈদ বিলি করতে নেমেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন তুরাগের এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। আর এক্ষেত্রে এক ভিন্ন মানসিকতা নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের কার্যক্রম। উদ্দেশ্য, এলাকার কিছু নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের শি শুদের এক টুকরো ঈদ উপহার দেয়া।

ব্যতিক্রধর্মী এই উদ্যোগ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, রাজধানীর তুরাগ থানাধীন ৫৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার নাম রফিক আহমেদ। যার প্রচেষ্টা চলছে সাধ্য অনুসারে এলাকার নিম্ন মধ্যবিত্ত কিছু পরিবারের ঘরে ঘরে দুধ, চিনি, সেমাইসহ আনুষাঙ্গিক দ্রব্যাদি পৌঁছে দেয়ার, যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঈদ উদযাপনের আমেজ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির মাঝে যখন এ সকল পরিবারের সদস্যরা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন নিত্যপ্রয়োজনীয়  খাদ্যদ্রব্য যোগান দিতে, সেখানে এমন সৌখিনতার আয়োজন যোগান দেয়ার বিষয়টিকে দূর থেকে অনেকেই ভাবছিলেন 'নাম ফাটানোর জন্য লোক দেখানো কাজ' হিসেবে। কিন্তু এ কাজের মূল উদ্দেশ্যের কথা জেনে এখন রীতিমত অবাক হচ্ছেন তারাই।

এক পর্যায়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে এই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ হয় দৈনিক জাগরণ প্রতিবেদকের। এ বিষয়ে নিজেই বিস্তারিত জানান রফিক।

দৈনিক জাগরণকে তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সর্বত্রই পৌঁছে গেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো ঈদ উপহার। এই বিপর্যয়ের সময় সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষও হাত বাড়িয়েছেন অসহায় দুস্থ ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে। এ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই আমি নিজের ক্ষুদ্র সামর্থ্যের মধ্যে এই আয়োজনটি করেছি। এটা আমি সৌখিনতা বা লোক দেখেনোর জন্য করিনি। এর একটা বিশেষ কারণ আছে।

রফিক আহমেদ বলেন, আমি মূলত স্বল্প আয়ের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের কথা চিন্তা করে এ কাজটি করেছি। কারণ যে কোনো উৎসব উদযাপনের প্রাণ এই শিশুদের আনন্দ উপভোগ। আর একদিন বাদেই ঈদ। দেশের প্রতিটি শ্রেণীপেশার মানুষই চেষ্টা করে থাকেন নিজ নিজ সামর্থ্যের মাঝে একটু বিশেষ কিছু আয়োজন করে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের। পরিবারের সন্তানদের মাঝে এই ঈদের আমেজ শুরু হয় নতুন জামা আর রান্নাঘরে মায়েদের ফিন্নি-সেমাই তৈরির ব্যস্ততার মধ্যদিয়েই। যে আয়োজনটুকুর প্রতীক্ষায় থাকে প্রতিটি শিশু। চলমান পরিস্থিতিতে যা এই পরিবারের বাবা-মায়েদের পক্ষে রীতিমত অসম্ভব। অভাবের কষ্ট সইলেও ঈদের দিন সন্তানদের বিবর্ণ মলিন মুখ দেখার কষ্ট হয়তো তাদের সহ্য হবে না। শিশুদের এবার ঈদে থাকতে হবে গৃহবন্দি। তাই অন্তত ঘরোয়া পরিবেশে যেনে এই পরিবারগুলো সন্তানদের ঈদের আমেজটুকু দিতে পারেন সেজন্যেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

রফিকের ভাষ্য মতে, উচ্চবিত্তদের কিছু না কিছু ব্যবস্থা আছে, দুস্থ দরিদ্রদের জন্যে পর্যায়ক্রমে আসছে সরকারী সহায়তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অনুদান। কিন্তু অভাব আর সংকটের কষ্ট বুকে চেপে আত্মসম্মানের খাতিরে ধুকছে এই নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষগুলো। অন্তত ঈদের দিন সন্তানদের মুখে একটু হাসি দেখার আনন্দ যেন তারা উপভোগ করতে পারেন সে প্রচেষ্টাই করছি।

বিভিন্ন সময় ত্রাণের প্যাকেটে কি কি দেয়া হচ্ছে সেসব পণ্যের বিবরণ পাওয়া গেছে দেশের বিভিন্ন পর্যায় থেকে। কিন্তু এমন মানসিকতার বিবরণ উঠে আসেনি তাদের কোথাও। গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে খুব অল্প পরিসরে হলেও সমাজের অনেক বড় একটা বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেছেন এই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। সেই সঙ্গে অনুরোধ জানিয়েছেন সামর্থ্যবানদের, তারা যেন সাধ্যমত এমন পরিবারের শিশুদের এক টুকরো করে ঈদ উপহার দেন।

এ সময় এলাকার দুস্থ মানুষদের জন্যে  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো উপহার বিতরণের স্বচ্ছতা ও সুষমবন্টন নিশ্চিত করায় ৫৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ৫৪ নং ওয়ার্ডের এই তরুণ কাউন্সিলরের বিভিন্ন কার্যক্রমই তাকে উৎসাহ যুগিয়েছে ভিন্ন কিছু করার।

রফিকের এমন আয়োজন সাড়া ফেলতে শুরু করেছে স্থানীয় পর্যায়ে। জানা গেছে, বর্তমানে সে এলাকার অনেকেই এখন এগিয়ে আসতে শুরু করেছেন এমন অন্তত একটি পরিবারের শিশুদের 'এক টুকরো ঈদ' উপহার দিতে।

এসকে