• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২০, ০১:৩১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৭, ২০২০, ০১:৩২ পিএম

ভয়ের লেশ নেই অনিরাপদ চলাফেরায়

ভয়ের লেশ নেই অনিরাপদ চলাফেরায়
ফাঁকা রাজধানীর জাতীয় শহীদ মিনার এলাকায় মাস্কহীন মানুষের বেপরোয়া চলাফেরা-জাগরণ

সতর্কতা ও ভয় উভয়ই কমে গেছে মানুষের চলাফেরায়। দেখে বোঝার উপায় নেই, দেশের মানুষের মাঝে করোনাভাইরাসের ভয় আছে কারো মনে। শুরুতে হ্যান্ডস্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস পরে বের হওয়া, পরস্পর কোলাকুলি বা হ্যান্ডশেক না করা এবং প্রয়োজনে পরস্পরের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মেনে দাঁড়ানোর যে চল শুরু হয়েছিল তার লেশমাত্র নেই বললেই চলে। বরং রাস্তায় মাস্ক না পরে চলাচল করা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কেন মাস্ক পরেননি প্রশ্নে পাল্টা প্রশ্নেরও মুখোমুখি হতে হচ্ছে−‘মাস্ক এখনও পরা লাগবে?’ চিকিৎসকরা বলছেন, এখনই মাস্ক পরা বন্ধ করলে ক্ষতি হবে। অন্তত সংক্রমণ আরেকটু না কমা পর্যন্ত কোনোভাবেই এটা হতে দেওয়া ঠিক হবে না।

২০ জুলাই থেকে ঢাকার সড়ক, শপিং মল, খোলা জায়গাগুলোতে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। একদিকে ঘরের বাইরে থাকার সময়সীমা বাড়ানো, আরেকদিকে ঈদের মৌসুম, ধীরে ধীরে মহামারির মধ্যে থেকেও এর ভয়াবহতাকে ভুলতে শুরু করে সাধারণ মানুষ। ঘরের বাইরে এসেই দীর্ঘদিন পরে সাক্ষাৎ হওয়া ব্যক্তিরা পরস্পর হ্যান্ডশেক করছেন, আত্মীয়-বন্ধুদের বুকে জড়িয়ে ধরতেও দেখা গেছে।

আবার সাক্ষাৎ শেষে ফেরার সময় বলছেন, আহহা, হ্যান্ডশেক করে ফেললাম কিংবা নিজেকে বোঝাচ্ছেন, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক না হয়ে কী-বা করা যাবে।

ঈদের পরের দিন সপরিবারে ধানমন্ডি লেকে আসেন তাজুল ইসলাম। এসময় তার পরিবারের সদস্যদের কারোর মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। কেন এরকম পাবলিক প্লেসে মাস্ক ছাড়া ঘুরছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাসে আসার সময় মাস্ক পরেছিলাম। বাইরে কি এখনও মাস্ক পরে থাকতে হবে?

করোনার আগে নাগরিক জীবনের বিনোদন বলতে ছিল রেস্তোরাঁর আড্ডা আর নানা দেশি-বিদেশি খাবারের স্বাদ গ্রহণ। মার্চের পর তা তিন মাস বন্ধ ছিল। ৩০ মে'র পর সীমিত সময়ের জন্য খুলতে শুরু করলেও, এখনও তেমন কাস্টমার পাওয়া যায়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় তাপমাত্রা মেপে প্রবেশ করানো হলেও, বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ বা হোটেলে এসবের বালাই নেই। নেই মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা। পান্থপথের তেমনই এক রেস্তোরাঁয় দেখা গেলো পাশাপাশি গা লাগোয়া বেসিনে লোকজন হাত ধুচ্ছে, টেবিলে লোকে লোকারণ্য।

এদিকে অভিজাত এলাকার দোকানে এত মানুষ না থাকলেও মাস্কহীন চলাফেরা, পরস্পরকে জড়িয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়। যদিও এসব দোকানে ওয়েটাররা মাস্ক পরা থাকছেন সবসময়।

কোলের শিশু সন্তানকে নিয়ে এসেছেন লাভলী। তিনি বলেন, ভাবলাম ফাঁকা জায়গায় একটু সময় বসে যাই। জায়গাটা অনেকটা ফাঁকা, কিন্তু যে এক দুইজন আছেন তারা নির্দ্বিধায় আমার সন্তানের গাল টিপে আদর করে দিয়ে গেলো। যেখানে স্পর্শ করতে নিষেধ করা হচ্ছে সেখানে এটুকু সতর্ক না থাকাটা দুঃখজনক।

বনানীর এক নামি রেস্তোরাঁয় তাপমাত্রা মেপে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আগতদের মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে না। তবে ওয়েটাররা মাস্ক পরে আছেন। দূরত্ব বজায় রাখতে সেখানে নেই কোনও বিশেষ ব্যবস্থা। এক ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য বেশি হওয়ায় তাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন দারোয়ান। তিনি বেশ চড়া গলায় কথা বলে, 'বাইরে থেকে আসায় তাপমাত্রা বেশি ঘোষণা দিয়ে প্রায় জোর করে ঢুকে পড়লেন। তার মুখে ছিল না কোনও মাস্ক।' 

সর্বশেষ গত ২১ জুলাই দেশের সর্বস্তরে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। সেখানে বলা হয়, হোটেল ও রেস্টুরেন্টে কর্মরত ব্যক্তি এবং জনসমাবেশ চলাকালীন আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরিধান করবেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মালিক সমিতিকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

পরিপত্রে আরও বলা হয়, হকার, রিকশা ও ভ্যানচালকসহ সব পথচারীর মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করবে। সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে আগত ব্যক্তিদের মাস্ক নিশ্চিত করতে হবে। পরিপত্রে বলা হয়, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট অফিসে আগত সেবাগ্রহীতারা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, একটা পর্যায়ে গিয়ে মহামারি পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয় থাকে। কিন্তু সেটি কখনও এই সময় নয়, যখন কিনা শনাক্তের হার বেশি। কিছু নিয়ম অবশ্যই আরও অনেকদিন মানতে হবে। এখনই যদি মাস্ক ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে সামনে বিপদ বাড়বে বলে বলে সতর্ক করেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবার আগে ব্যক্তির সচেতনতা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিদিনই সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করে যাচ্ছে। কিন্তু জনগণকে সেগুলো আমলে নিতে হবে। ইদানীং রাস্তাঘাটে মানুষের ভিড় বাড়ছে। যানজট বাড়ছে। এতে সামাজিক দূরত্ব ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধির ব্যত্যয় ঘটছে। এগুলো না মানলে দেশকে কোনোদিনই করোনামুক্ত করা সম্ভব হবে না। এটি যথাযথভাবে পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাই।’

এমএইউ

আরও পড়ুন