আসন্ন ঈদুল ফিতরে রেলওয়ে ৫০ শতাংশ টিকিট স্মার্টফোন অ্যাপসের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করলেও তা দিয়ে সফলতার মুখ দেখাতে পারেনি টিকিটপ্রত্যাশীদের। বরং অ্যাপসের মাধ্যমে বারবার চেষ্টা শেষে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে রেলস্টেশনে গিয়ে দীর্ঘসারির মুখই দেখতে হচ্ছে তাদের।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) টিকিটপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পায় দৈনিক জাগরণ।
টিকিট পেতে হয়রানি রোধে মার্চের ২৮ তারিখে ‘রেল সেবা’ নামে মোবাইল অ্যাপস চালু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
৫০ ভাগ টিকিট অনলাইনে তিন পদ্ধতিতে দেয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোনের এসএমএসে, ওয়েবসাইট থেকে এবং রেলের টিকিট কাটার সর্বশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে। ঢাকা থেকে সব আন্তঃনগর ট্রেন মিলিয়ে দিনে প্রায় ৩০ হাজার ট্রেনের টিকিট রয়েছে। এরমধ্যে ৫ ভাগ রেলওয়ে কমকর্তা কর্মচারী ও ৫ ভাগ ভিআইপি ছাড়া বাকি সব টিকিটের ৫০ শতাংশ অনলাইন, এসএমএস ও অ্যাপসে পাওয়ার কথা।
বৃহস্পতিবার সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা গেছে, টিকিটপ্রত্যাশীদের প্রচণ্ড ভিড়। টিকিটপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ সারির শুরুর স্থান শনাক্ত করা গেলেও শেষ কোথায় তা শনাক্ত করা যায়নি। ভ্যাপসা গরমে যাত্রীরা ঘামছেন, একে অপরের সাথে এটা-ওটা কথা বলছেন। সারি দীর্ঘ হতে হতে একেকটি সারি চলে গেছে স্টেশনের বাইরের খোলা মাঠে।
সিলেটের টিকিটপ্রত্যাশী ফারহান আহমেদ মানিক বলেন, গত দুই দিন ধরে অ্যাপসের মাধ্যমে দুইটি টিকিট সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছি। এখন মনে হচ্ছে- অ্যাপসে দুইদিন সময় নষ্ট করে মারাত্মক ভুল হয়ে গেছে। ওই দুইদিন যদি লাইনে আসতাম, তাহলে টিকিট পেয়ে যেতাম।
নেটওয়ার্ক সিস্টেমস লিমিটেড বাংলাদেশ (সিএনএসবিডি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে রেলের জন্য বিভিন্ন সার্ভিস দিয়ে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানই রেলওয়ের অ্যাপস পরিচালনা করছে। ঈদ মৌসুমে এই অ্যাপসে একসঙ্গে প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক প্রবেশ করতে চান। যেখানে অ্যাপসের সক্ষমতা মাত্র ২০ হাজার। সে জন্যই অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট পেতে ভোগান্তি হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের টিকিটপ্রত্যাশী সিরাজুল ইসলাম বলেন, অ্যাপস খালি ঘুরে, লোড হয়। ভেতরে আর ঢোকা যায় না। এটার নামই কী ঘরে বসে রেলের সেবা পাওয়া?
বুধবার (২২ মে) কমলাপুর স্টেশনে টিকিট বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘‘অনলাইনে টিকিট দিতে না পারা অবশ্যই ব্যর্থতা। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। অ্যাপসের মাধ্যমে অবিক্রিত টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে।’’
এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘‘নেটওয়ার্ক সিস্টেমস লিমিটেড বাংলাদেশ (সিএনএসবিডি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে রেলের জন্য বিভিন্ন সার্ভিস দিয়ে আসছে। যদি তাদের কোনও গাফিলতি থাকে অবশ্যই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আমিনুল হক দৈনিক জাগরণকে বলেন, সকাল ৯টা থেকে কাউন্টারগুলো থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা তৎপর।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকাল ৯টা থেকে কমলাপুরে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। শনিবার (২৩ মে) দেয়া হচ্ছে ১ জুনের টিকিট। কাল ২৪ মে (শুক্রবার) দেয়া হবে ২ জুনের টিকিট। ২৫ মে (শনিবার) দেয়া হবে ৩ জুন এবং ২৬ মে (রোববার) দেয়া হবে ৪ জুনের টিকিট।
এবার রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে- কমলাপুর স্টেশন, বিমানবন্দর স্টেশন, তেজগাঁও স্টেশন, বনানী স্টেশন এবং ফুলবাড়িয়া (পুরনো রেলভবন) থেকে।
আরএম/এসএমএম