• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০১৯, ০৮:১৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২২, ২০১৯, ০৮:১৭ এএম

বাজার মনিটরিং টিমের যতো কর্মযজ্ঞ কাগুজেই 

বাজার মনিটরিং টিমের যতো কর্মযজ্ঞ কাগুজেই 

দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বছরে দুই বার ছয়মাস মেয়াদি কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু কাগুজে যতটা কার্যকর বাজার মনিটরিং টিম বাস্তবে এর ছিটেফোটা ও নেই। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা থেকে শুরু করে সারাবছরে দেখা পাননি এসব টিমের লোকদের। এই টিমের অধিকাংশরা নানা ব্যস্থতার জন্য পারেন না বাজার পরিদর্শন করতে। ফলে মন্ত্রণালয়ে বসেই তৈরি করতে হয় বাজারের তালিকা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরের প্রথমার্ধে জানুয়ারিতে টিম গঠন করা হয়। এদের মেয়াদ থাকে ছয় মাস। পরবর্তীতে মেয়াদ শেষে আরেকবার টিম গঠন করা হয়। আর এভাবেই বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে। আর তাদের কিছুটা সক্রিয়তা দেখা যায় রমজান শুরুর আগে। হাক-ডাক বৈঠক এসবেই চলছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১৪টি মনিটরিং টিম গঠন করা হলেও তাদের দেখা পান না ক্রেতা-বিক্রেতা কিংবা ভোক্তার কেউই। ১৪টি টিমের একেকটিতে রয়েছেন ১১ জন সদস্য, যার প্রধান উপসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। বাজার নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়ের এ বিশাল বহর সম্পর্কে অনেকেই জানলেও, দেখেনি কেউই। কারণ এসব টিমের কার্যক্রম শুধু কাগজপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অফিসের খাতা-পত্রের মধ্যেই প্রতিদিনের বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখছেন এ নিয়ন্ত্রক টিমের সদস্যরা।  

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতিদিন ১৪টি টিমের মধ্যে দু্ইটি টিম রাজধানীর বাজারে উপস্থিত হচ্ছেন। সে টিমের ১১ সদস্যের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত থাকেন। তারা বাজার পর্যবেক্ষণের পরে এসব পণ্যের আমদানি, বিশ্ববাজারের সঙ্গে দামের সামঞ্জস্য, দেশি উৎপাদন, মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রী ও সচিব বরাবর প্রতিবেদন পেশ করেন প্রতিদিনই। সেটার ওপর ভিত্তি করেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অন্যান্য সব পদক্ষেপ নেয়। 

বাজারে এসব টিমের উপস্থিতি কেন লক্ষ্য করা যায়নি এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই কারও কাছে। কোথায় কখন কিভাবে এসব টিম আসে ও যায় জানে না কেউই। মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি ছয়মাস পরপর এ টিম পুনঃগঠন করে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল (আইআইটি অনুবিভাগ)। সেলের যুগ্ম সচিব (আইআইটি-১) এ কে এম আলী আহাদ খান বলেন, এ টিমগুলোর কাজ বাজার মনিটরিং করা। আসন্ন রমজান উপলক্ষে কার্যক্রম আরও জোরালো করার কথা আমরা ভাবছি। 

এদিকে প্রতিটি টিমের ১১ জন করে সদস্যের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব প্রধান সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন করে সদস্য থাকেন। বাকি সদস্য নেওয়া হয় ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে, ঢাকা যে কোনো একটি সিটি করপোরেশন, ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদফতর এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে একজন করে। 

এখানেই শেষ নয়, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে এসব সংস্থার কোনো সদস্য কখন কিভাবে ওই মনিটরিং টিমে যুক্ত হন তা নিজেরাও জানেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চলতি মেয়াদে মনিটরিং টিমের একজন সদস্য বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে একটি টিম হয়। প্রথম প্রথম দু-একদিন মিটিং হয়। এরপর একটি রোস্টার করে পালাক্রমে বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বভার পরে। কিন্তু সময়ের অভাবে শেষ পর্যন্ত আর বাজারে যাওয়া হয় না। গেলেও দু-একজনের বেশি কখনও উপস্থিত থাকেন না। এভাবেই চলছে।

এর বাস্তব প্রমাণ মেলে একজন বাজার মনিটরিং টিমের এক প্রধানের সঙ্গে কথা বলে। তিনি তার কত নম্বর টিম ও কিভাবে সেটা বাজারে কাজ করছে জানতে চাইলে বলেন, আমি কোন টিমে আছি, সেটা ঠিক মনে নেই। সম্ভবত ৫ নম্বর টিমে হতে পারে। তবে আগামী ২৭ তারিখে আমার টিমের মনিটরিংয়ের তারিখ রয়েছে। কিন্তু সেটা নাও সম্ভব হতে পারে। কারণ ওইদিন একটি সমন্বয় সভা আর মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে মিটিং রয়েছে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরেক উপসচিব নার্গিস মুরশিদা বলেন, কাজ হচ্ছে। তবে প্রচারণা না হওয়ার কারণে সেটা জানা যায় না। এ কারণে আগামীতে মনিটরিংগুলো দৃশ্যমান করতে পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা চলছে। গণমাধ্যমকে সঙ্গে রাখা প্রয়োজন। 

এআই /বিএস/এসএমএম