• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১১, ২০১৯, ১০:১০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১১, ২০১৯, ০৫:৩৪ পিএম

পাইকারিতে কমলেও খুচরা বাজারে কমছে না নিত্যপণ্যের দাম

পাইকারিতে কমলেও খুচরা বাজারে কমছে না নিত্যপণ্যের দাম

রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের মূল্য কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। যে কারণে খুচরা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম পাইকারি বাজারের তুলনায় অনেক বেশি। 
শুক্রবার (১০ মে) রাজধানীর কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এই চিত্র প্রত্যক্ষ করা গেছে। 

এদিকে সিটি করপোরেশন থেকে মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। যে কারণে কোনো কোনো বাজারে জরিমানাও করা হয়েছে বিক্রেতাদের।     

বাজারে  মহিষ, বিদেশি গরু, ভেড়া ও ছাগলের মাংস কম দামে বিক্রি হচ্ছে শোনা গেলেও   কোথাও কোনো দোকানেই পাওয়া যায়নি। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে তুলনামূলক কম মূল্যের এসব মাংসই বেশি। ব্যবসায়ীরা আরো বেশি লাভের জন্য হঠকারী করে  এগুলো দেশি গরুর ও খাসির মাংস বলে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করে। যদিও এর দায়ে কাউকে জরিমানা করা হয়নি।                 

পাইকারিতে কমলেও খুচরা বাজারে  নিত্যপণ্যের মূল্য না কমার কারণ জানতে চাইলে, ১৬৫/এ মোহাম্মদপুর সরকারি কৃষিপণ্যের বাজারের বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের ব্যাবস্থাপক মোহাম্মদ হোসেন বাবুল দৈনিক জাগরণকে বলেন, 'এখন মালের আমদানি বেশি তাই দাম কম। কিন্তু বিক্রি কম। কারণ অনেকেই রোজা শুরুর আগেই রমজান মাসের বাজার করে ফেলেছেন। তখন অনেকে বাজার-সদাই করার কারণে চাহিদা বেড়ে গিয়েছে, আর চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে। ওই বাড়তি দামের সময় খুচরা দোকানদাররা দোকানে বেশি দামে মাল তুলেছিল। এখনো ওই মাল বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। বেশি দামে কেনা বলে এখনো বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে খুচরা দোকানদারদের। যদিও পাইকারি বাজারে দাম কমে গেছে।'

পূর্বানুমান করে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম আগামী দুই সপ্তাহে আরো কমতে পারে এবং পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের আগে আবারো বাড়তে পারে।'

একই মার্কেটের সফিউল্লাহ ব্রাদার্সের স্বত্তাধিকারী সৈয়দ ওমর ফারুক বলেন, 'গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরণের চালের দাম কমেছে। কারণ বাজারে নতুন চাল এসেছে। তবে বিক্রি কম। কারণ রোজার আগেই অনেকে মাসের বাজার করেছে।' দাম আরো কমবে বলেও পূর্বানুমান করেন তিনি।

এদিকে গত সপ্তাহের মতো এখনো  রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, সবজি, মাছ, মাংসের দাম অব্যাহতভাবে বেশিই আছে ।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট , কারওয়ানবাজার, খিলগাঁও এলাকার বাজার ঘুরে এই  চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।  

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহের মতো ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৪৫ - ১৫০ টাকায়। লেয়ার মুরগির ১৭৫ - ১৮৫ এবং পাকিস্তানি কক প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪৫-২৫৫ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি। তবে কোনো কোনো জায়গায় সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হলেও ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ আছে। 
 
কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী হাসান উদ্দিন বলেন, রোজার আগে মুরগির দাম কিছুটা কমেছিল। রোজার শুরুতে মুরগির দাম নতুন করে বাড়েনি, কমেওনি। সামনে হয়তো দাম কিছুটা কমতে পারে।

কারওয়ান বাজারের গরুর মাংস ব্যবসায়ী কাদের মিয়া, গত সপ্তাহে আমরা গরুর মাংস ৫৪০-৫৫০ টাকায় কেজি বিক্রি করেছি। এখন সরকারের ঠিক করে  দেয়া দামে বিক্রি করছি। এর থেকে বেশি দাম নিচ্ছি না, আবার কম নিচ্ছি না- দাবি করেন তিনি।

তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে ডিমের দাম। শুধু ডিম বিক্রি করেন এমন ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহের মতো ডিমের ডজন বিক্রি করছেন ৮০- ৮৫ টাকায়। মুদি দোকান ও খুচরা বিক্রেতারা তা বিক্রি করছেন ৯০ - ৯৫ টাকায়।

 ডিম ব্যবসায়ী কফিল উদ্দিন  বলেন, ডিমের দাম ডজনে ২০ টাকা পর্যযন্ত  কমেছিল । গত এক সপ্তাহে ডিমের দাম নতুন করে কমেনি, আবার বাড়েওনি। তবে আমাদের ধারণা সামনে হয়তো ডিমের দাম কিছুটা কমতে পারে। আবার ঈদে ও বিয়ের কারণে চাহিদা বাড়বে, দামও বাড়তে পারে।

এছাড়া দাম অপরিবর্তিত  রয়েছে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের। কারওয়ানবাজারে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহের মতো দেশি পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি করছেন ১২৫-১৩০ টাকা। আর খুচরা বাজারে ভালোমানের দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা। আর কাঁচা মরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা। তবে বেড়েছে রসুনের দাম। গত সপ্তাহে রসুন ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে তা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, রোজার আগে দাম কিছুটা বাড়লেও গত এক সপ্তাহে নতুন করে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। এবার রোজায় পেঁয়াজের দাম বাড়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। তবে ঈদের পর হয়তো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।

এদিকে বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বাজার ও মানভেদে কাঁচা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা কেজি। শসা ৫০-৬০, বেগুন ৬০-৭০, পাকা টমেটো ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

দাম অপরিবর্তিত থাকা অন্য সবজির মধ্যে পটল ৪০-৫০, বরবটি ৬০-৭০, কচুর লতি ৭০-৮০, করলা ৬০-৭০, ধুন্দুল ৬০-৭০, ঢেঁড়স ৪০-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

চড়া দামের বাজারে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর মুখি। বাজার ভেদে কচুর মুখি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা। এছাড়া কাকরোল ৬০-৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫০-৭০, উসি ৪০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী আলামিন বলেন, প্রতিবছরই এপ্রিল-মে মাসে সবজির দাম বেশি থাকে। গত বছরের তথ্য ঘেঁটে দেখেন এ সময় কোনো সবজি দাম ৫০ টাকার নিচে ছিল না। সুতরাং রোজার কারণে এবার সবজির দাম বেশি, কেউ যদি এমন অভিযোগ করে তা সঠিক নয়। সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। বাজারে নতুন সবজি আসলে আবার দাম কমে যাবে।

সবজির পাশাপাশি অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দামও। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা কেজি। পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা কেজি। রুই ২৮০-৬০০, পাবদা ৬০০-৭০০, টেংরা ৫০০-৮০০, শিং ৫০০-৬০০ এবং চিতল বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকা কেজি।

মাছের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী সুবল বলেন, কয়েক মাস ধরেই মাছের দাম চড়া। এবার মাছের দাম সহসা কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। কারণ এবার বৃষ্টি খুব একটা হয়নি। যদি বৃষ্টি অথবা বন্যা হয় তাহলে হয়তো মাছের দাম কিছুটা কমতে পারে।

এদিকে  রমজান উপলক্ষে মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে  রাজধানীতে মাংসের দাম নির্ধারণ করে
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু নির্ধারিত সেই দাম মানছেন না মাংস ব্যবসায়ীরা। তারা ২৫ থেকে ৭৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন গরুর মাংস। এছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা নেই।

এসব অভিযোগে শুক্রবার (১০ মে) রাজধানীর মিরপুর বড়বাগ কাঁচাবাজারের পাঁচ মাংস ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। অভিযান পরিচালনা করেন অধিদফতরের ঢাকা জেলা অফিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল।

এর মধ্যে মা গোস্ত বিতানকে পাঁচ হাজার টাকা, রানা গোস্ত বিতানকে তিন হাজার টাকা, নাসিরের মাংসের দোকানকে পাঁচ হাজার এবং পীরেরবাগ অলি মিয়ার কাঁচা বাজারের ছাত্তারের মাংস বিতানকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, রমজান মাস উপলক্ষে বাজারে বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে আজ (শুক্রবার) মিরপুরে অভিযান চালানো হয়। এখানে বেশিরভাগ দোকানে সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত দাম ৫২৫ টাকার চেয়ে বেশি অর্থাৎ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়। এছাড়া অনেক দোকানে আইন অনুযায়ী মূল্য তালিকা টাঙানো হয়নি। এসব অভিযোগে ৫টি মাংস বিক্রির প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে রোজায় মাংসের দাম নির্ধারণ করে। নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী দেশি গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫২৫ টাকা এবং বিদেশি বা বোল্ডার গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫০০ টাকা ও মহিষের মাংস কেজি প্রতি ৪৮০ টাকায় বিক্রয়ের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে খাসির মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা এবং ভেড়া ও ছাগীর মাংস প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা ধরে বিক্রির জন্য এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। পহেলা রমজান থেকে ২৬ রমজান পর্যন্ত মাংসের এ দাম নির্ধারণ করা হয়।

এমএ/বিএস