সেনা অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারি সচিব পদে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে চুক্তি মতো ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ৬ প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
প্রতারকরা সিংহভাগ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর ৩ বা ৪ দিনের মধ্যে নিয়োগপত্রও যায় ডাকে। পরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বা চাকরিতে যোগদান করতে গেলেই দেখা গেল সবই ভূয়া।
রোববার (১২ মে) সন্ধ্যায় প্রতারক চক্রের এমন ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ৪।
সোমবার (১৩ মে) দুপুরে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির এ সব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, চক্রটি দেশের উত্তর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে ঘুরে ঘুরে বেকার শিক্ষিত, চাকরি প্রত্যাশিত যুবক এবং তার পরিবারকে সহজে সরকারি চাকরিতে ঢুকিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখায়। তাদের পাতা ফাদেঁ পা বাড়ালে চক্রটি কয়েকটি কৌশলের মাধ্যমে ধাপে ধাপে প্রতারণা করে আসছিলো।
তারা বড় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থার নাম করে ঢাকায় নিয়ে এসে চাকরি দেওয়ার আগে তাদের আরোপ করা কয়েকটি শর্ত মানতে হবে বলে জানায়। তাদের শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্ল্যাংক চেক, ব্ল্যাংক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর, স্ট্যাম্পে চুক্তি স্বাক্ষর এবং চাকরি প্রত্যাশীর মূল সনদপত্র জমা রাখা। এই শর্তগুলো মানা হলেই আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
তিনি আরও জানান, টাকা নেয়ার পরে ভূয়া নিয়োগপত্র দেয়ার আগে ভুয়া স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে মেডিকেলে নিয়ে যায় এবং কৌশলে তাদের ভূয়া স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে সেনানিবাসের আশেপাশে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসে। সেনানিবাসের পাশে অবস্থিত বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে মেডিকেলের ভূয়া পরীক্ষার সম্পন্ন করতো।
এছাড়া এ প্রতারক চক্রটি নিজেদের আসল পরিচয় দেয়ার জন্য প্রতারক চক্রের সদস্যরা গাড়ি ভাড়া করে তাতে সরকারি লোগো ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় যায়। এর ফলে ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জন করে তারা। প্রতারক চক্রের একজনকে ঊর্ধ্বতন সেনা অফিসার, সহকারী সচিব বা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেয়। পরিকল্পিতভাবে প্রার্থীকে চাকরিতে যোগদানের নির্ধারিত তারিখের ৩ থেকে ৪ দিন পূর্বে নিয়োগপত্র দেখিয়ে চুক্তি মোতাবেক টাকা আদায় করে নেয়। পরে নিয়োগপত্রটি ডাকের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানায়। এরপর ভুক্তভোগী প্রতারিত হয়ে তাদের কাছে আসলে তারা নানাভাবে হয়রানি শুরু করে। আগে থেকে নিয়ে রাখা ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প এর অপব্যবহার শুরু করে। ভূয়া মামলা দিয়ে ভয় দেখাত। প্রতারণার শিকার কেউ অভিযোগ করলেই তারা উল্টো মামলার হয়রানির শিকার হতো।
র্যাবের হাতে আটক হওয়া প্রতারক চক্রের মূল হোতা মানিক চাঁদ (২৮), রতন হোসেন (১৮), ইসমাইল হোসেন (৩১), এস এম আলাউদ্দিন আল মাহমুদ (৩৬) শরিফুল ইসলাম (৩২) সম্রাট মল্লিক (২৪)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগদান নিয়োগপত্র, চাকরিপ্রার্থী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তার সিল, কম্পিউটার, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ বিভিন্ন বাহিনী নিয়োগপত্র, ভর্তি ফরম, বিভিন্ন বাহিনীর সরকারি চাকরির আবেদন ফরম প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রার্থীর থেকে নেয়া সার্টিফিকেটের ফটোকপি, বিভিন্ন প্রার্থীর ন্যাশনাল আইডি কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট কার্ড, নগদ ১৫ হাজার ৪৮৩ টাকা। ভিজিটিং কার্ড এবং ব্যাংকের পাঁচটি চেক বই।
গ্রেফতার হওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এইচএম/এসএমএম