• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৯, ২০১৯, ০৬:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৯, ২০১৯, ০৬:৫০ পিএম

সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ দাবি

আইনের শাসন অনুপস্থিত বলেই ভোগান্তি হচ্ছে : ড. মিজানুর

আইনের শাসন অনুপস্থিত বলেই ভোগান্তি হচ্ছে : ড. মিজানুর
ড. মিজানুর রহমান - ফাইল ছবি

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, দেশে আইনের শাসন অনুপস্থিত বলেই পদে পদে ভোগান্তি হচ্ছে। বুধবার (২৯ মে) যাত্রী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে ‘ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ : আমাদের দায়িত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। 

ড. মিজানুর রহমান বলেন, যেভাবে প্রতিদিন ‘বন্দুকযুদ্ধ’ চলছে সেখানে আদালতের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাচ্ছে। জবাবদিহিতার জায়গায় আমরা একটা দুর্বল জায়গায় আছি। এখানে জবাবদিহিতা একদম নেই। কারণ আইনের শাসন একদম প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। তিনি বলেন, ন্যূনতম আইনের শাসন নিশ্চিত করা না গেলে নাগরিকদের নিরাপত্তা থাকে না। জবাবদিহিতার জায়গায় আমরা একটা দুর্বল অবস্থানে আছি। সড়কের নৈরাজ্য বন্ধ করতে হলে চাঁদাবাজি, ধান্ধাবাজি ও কায়েমি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আইনের শাসন সুনিশ্চিত করতে হবে।

সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, যানজটের কারণে যাত্রীবাহী বাসগুলো কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক ট্রিপ দিতে না পেরে তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে প্রতিবছর ঈদযাত্রা মৃত্যুর মিছিলে পরিণত হয়। গত বছর ঈদুল ফিতরে দেশের সড়ক পথে ২৭৭টি দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ১,২৬৫ জন আহত হয়েছে। অধিকাংশের মৃত্যুর কারণ পণ্যবাহী যানবাহনের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষ ও বেপরোয়া গতি। তাই এবারের ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে ত্রি-হুইলার, অটোরিক্সাসহ ধীরগতির যানবাহন তুলে দেয়ার দাবি জানান তিনি। দেশব্যাপী সকল বাস, লঞ্চ ও অভ্যন্তরীণ বিমান পরিবহণ কোম্পানিগুলোর ঈদযাত্রায় ভাড়া নৈরাজ্য প্রতিরোধে বিআরটিএ, ভোক্তা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানান তিনি।

অপরদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, দেশে সড়কের পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভাল। এবার সড়কের কারণে ভোগান্তি হবে না। তবে গণপরিবহন সংকটসহ নানা কারণে ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করা সম্ভব হয় না। 

তিনি আরো বলেন, ঢাকা শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। ২০২৪ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর ৫টি এমআরটি লাইন সম্পন্ন হলে আর যানজটের ভোগান্তি থাকবে না। 

ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এসএম সালেহ উদ্দিন বলেন, পরিকল্পিতভাবে যানবাহন নিবন্ধন করা না গেলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল ধরে রাখা যাবে না। তিনি ঈদ ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের উপর জোর দেন।

বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান বলেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করা না গেলে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা কোনোভাবেই কমানো যাবে না। তিনি এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

বিআরটিএর রোড সেইফটি পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, প্রতি ঈদে অল্প সময়ে এত বেশি সংখ্যক লোকজনের যাতায়াত সামাল দেয়া সত্যিই দুরূহ। তারপরও সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ ধীরে ধীরে কমে আসছে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ঈদের আগে ঈদের সমস্যাকে সমস্যা হিসেবে না দেখে বছরব্যাপী এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ থাকা জরুরি। তিনি পরিবহনে চাঁদাবাজি জিইয়ে রাখা, শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, কর্মঘণ্টা ও মজুরি না থাকায় পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য বন্ধ করা যাচ্ছে না।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সিনিয়র আরবান প্ল্যানার তপন কুমার নাথ, যাত্রী কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা নুর উদ্দিন খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ মোক্তার উদ্দিন, ভাড়াটিয়া পরিষদের আহ্বায়ক বাহারানে সুলতান বাহার প্রমুখ।

টিএস/ এফসি