• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৩১, ২০১৯, ১০:২০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৩১, ২০১৯, ১০:২০ এএম

ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সাধারণ বাইকারদের

ভাই, পাঠাও নাকি, যাবেন নাকি... 

ভাই, পাঠাও নাকি, যাবেন নাকি... 

মোটর সাইকেল চালকদের পাঠাও-উবার মনে করে যাত্রীরা ডাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যেসব মোটর সাইকেল চালক রাইড শেয়ারিং এর সাথে যুক্ত নন, সেসব মোটরসাইকেল চালকদের মধ্য থেকে আসছে এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় কটু, ক্রোধ, বিরক্তিমাখা বাক্যে নানা ধরণের লেখালেখিও হচ্ছে। পথেঘাটেও এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা দেখা যাচ্ছে।

যেসব কারণে পাঠাও-উবার মনে করে যাত্রীরা ডাক দেন যে কোনো বাইকারকে : দেখা গেছে, যদি কোনো বাইকারের পেছনের সিট খালি থাকে এবং সেই বাইক চালকের মাথায় পরিহিত হেলমেট ছাড়াও অতিরিক্ত হেলমেট থাকে, তাকেই আপাততঃ দৃষ্টিতে পাঠাও-উবারের বাইকার মনে করেন যাত্রীরা। ২৯ মে দুপুরে এ প্রতিবেদকের সামনে এমন একটি ঘটনা ঘটে, ঢাকার ফার্মগেট খামারবাড়ি এলাকায়।

হোন্ডা ব্রান্ডের সিবি হর্নেট- ১৬০ নিয়ে বাইকার মিতুল বসা ছিলেন ইন্দিরা রোড টিএন্ডটি মাঠের পাশে। এসময় সদরঘাট যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি রায়হান মিতুলকে বলেন, এই যাবেন নাকি সদরঘাট, কিছু বাড়িয়ে দেবনে, প্লিজ চলেন....। মিতুল একটু ত্যাক্ত সুরে উত্তর দেন, আপনাদের জ্বালায় মোটর সাইকেল চালানো বন্ধ করে দিতে হবে। আচ্ছা, কীভাবে বুঝলেন আমি পাঠাও চালাই? রায়হান বলেন, সরি ভাই, আসলে আপনার দুটো হেলমেট দেখে মনে হয়েছিল। মিতুল বেশ রেগে বলেন, দুটো হেলমেট থাকলেই যে পাঠাও ড্রাইভার, এই যুক্তি আপনাকে কে শিখালো? রায়হান সরি বলে সেখান থেকে বিদায় নেন।

মিতুল জাগরণকে বলেন, পাঠাও তাদেরকে অ্যাপ দিয়েছে, অ্যাপ ব্যবহার না করে কেন এভাবে একজন বাইকারকে তারা ডাকবে? এটা তো রিকশা-সিএনজি অটোরিকশা নয়।

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, বেশকিছু যাত্রী আছেন যারা অ্যাপ চালাতে পারেন না বা ঝামেলা মনে করেন, তারাই এভাবে অনুমান করে বাইকার দেখলেই অনুমান করে যোগ জিজ্ঞাসা করেন। আবার পাঠাও-উবারে রেজিস্ট্রেশন করা বেশকিছু মোটরসাইকেলের চালকও আছেন, যারা চুক্তিতে ট্রিপ নেন। তারা বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে ডাকাডাকি করে যাত্রী সন্ধান করেন। এই সংস্কৃতির সঙ্গে গা ভাসিয়েছেন অনেক যাত্রী। এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ অ্যাপে চেষ্টা করে বাইক না পেয়ে কোনো কোনো যাত্রী বাইকার দেখলেই পাঠাও-উবার মনে করে ডাক দিয়ে বসেন।

গত ২৫ মে বিকালে এ প্রতিবেদক মোটর সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্কর এলাকায়। ঢাকা বেতার এলাকা অতিক্রমের সময় মাঝবয়সী সিরাজুল ইসলাম তখন ’এই পাঠাও নাকি, যাবা মিরপুর ১০’- বলে উঠেন এ প্রতিবেদককে। এসময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় অ্যাপ রেখে কেন এভাবে ডাকাডাকির আশ্রয়। সিরাজুল ইসলাম বলেন, নেটওয়ার্কে সমস্যা। পরে অনুমতি নিয়ে তার ব্যবহৃত স্মার্টফোনে চেক করে দেখা যায়, এতে কোনো ইন্টারনেট প্যাকেজ ছিল না। এটা বলার পর ব্যবসায়ী সিরাজুল বলেন, সরি ভাই, আসলে এইসব বুঝি না।

নিয়মিত রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করেন চিকিৎসক আবদুল হাকিম। বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীতে তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, আসলে এই সংস্কৃতি চালু করেছেন পাঠাও-উবারের মোটরসাইকেল চালকরা। তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডাকেন, ঠিক যেভাবে রিকশা চালক বা সিএনজি চালক যাত্রীদের ডাকেন। এই সুযোগে যাত্রীদের অনেকে রাস্তায় ডাকাডাকি করেন মোটরসাইকেল চালকদের।

যেসব কারণে অ্যাপ ব্যবহার করতে চান না চালকরা : সরেজমিনে জানা যায়, অ্যাপে কলের সংখ্যা কমে গেছে, কিন্তু কমিশনের পরিমাণ কমেনি। তাছাড়া প্রায়ই নেটওয়ার্কে ত্রুটি দেখা দেয় বলে ট্রিপ পাওয়া যায় না, অ্যাপ চালাতে বাড়তি টাকা দিয়ে ইন্টারনেট ক্রয় করতে হয়, ভাল একটি স্মার্টফোন লাগে, অ্যাপ পরিচালনা জটিল মনে হয়। এসব কারণে অ্যাপে যাত্রী পরিবহন করতে অনীহা জন্মে গেছে পাঠাও-উবারে রেজিস্ট্রেশন করা অসংখ্য মোটরসাইকেল চালকের।

গত ২৮ মে ফার্মগেট খেজুর বাগান এলাকায় পরিচয় হয় পাঠাও-উবার বাইকার ইসমাইলের সঙ্গে। তিনি জানান, তিন বছর ধরে চালাই, ইদানিং দেখলাম কল কমে গেছে। ট্রিপ পাই না। কেননা, বিপুল সংখ্যক মোটর সাইকেল এই কাজে নেমেছে। আবার কোম্পানিকে ট্রিপ প্রতি শতকরা ২০-২৫ টাকা কমিশন দিতে হয়, আছে তেল খরচ, মোটর সাইকেল মেরামত খরচ। লোকসান এড়াতে অ্যাপ ছাড়া চুক্তিতে চালানোটাই সঠিক মনে হয়েছে। এটা করার পর দেখলাম, আমার উপার্জন আগের মতো বেড়েছে।

পাঠাও বাইকার ইসহাক আগে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালাতেন। এক বছর ধরে যুক্ত হয়েছেন রাইড শেয়ারিং এ। তিনি বলেন, আমি মুরুক্কু-সুরুক্কু (মূর্খ) মানুষ, এইসব নেটবেট (ইন্টারনেট) কেমনে কী করে বুঝি না। এমনেই ডাইকা ডাইকা যাত্রী লই......।

সাধারণ মোটর সাইকেল চালকদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া : ফেসবুকের একটি গ্রুপে শহীদুল্লা কায়সার তুষার লিখেছেন, উবার/পাঠাও রাইডাররা যেভাবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের ডাকে বাসের হেল্পারদের মতো করে, তাদের জন্য অন্য সব বাইকারদের যেমন সমস্যা হয়, তা কী তারা জানে?? ২টা হেলমেট দেখলেই মাঝে মাঝে পাবলিক জিজ্ঞেস করে, ভাই যাবেন নাকি? তখন বলতে হয় না ভাই, আমি পাঠাও/উবার না।

একই গ্রুপে ইমরান আজিম লিখেছেন, -রিক্সাওয়ালা
-সিএনজি ওয়ালা
-বাস ওয়ালা
-টেম্পু ওয়ালা
অতঃপর যোগ হলো
-বাইক ওয়ালা
কোনও একটা ভাল, উপকারি সার্ভিসকে নোংরা না বানানো পর্যন্ত বাংগালীর শান্তির ঘুম হয় না! অ্যাপ বাদ দিয়ে সিএনজি, রিক্সার মতো দামাদামি করে, মানুষ এর আস্থার ১২টা বাজাচ্ছে।
প্যসনেট বাইকার হওয়া সত্বেও আজকাল বাইক নিয়ে বের হতে প্রচণ্ড লজ্জা লাগে! মানুষজন ক্যামনে জানি ভুরু কুঁচকে তাকায়। মনে করে, আমিও বোধহয় পাঠাও-উবার ড্রাইভার। কেউ কেউ তো মাঝে মধ্যে ডাকও দিয়ে বসে, এই যাবেন?

লিংকন জাইম লিখেছেন, উবার আর পাঠাও মনে হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হয়ে যাচ্ছে। এক সময় এরাই বাইকারদের শাসন করবে, কিন্তু এসেছিল ব্যবসা করতে।

জাব্বার হোসেন লিখেছেন, বাইকে দুই হেলমেট, বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করলেই শুনতে হয়, ভাই পাঠাও নাকি? অই যাইবেন নাকি ইত্যাদি।

প্রতিকার কী : নিয়মিত মোটর সাইকেল চালক ইমরান আহমেদ বলেন, যাত্রীদের অবশ্যই উচিৎ অ্যাপ ব্যবহার করা। যাকে তাকে পাঠাও-উবার বলে ডাকার মানে কী? বাইক কী শুধুমাত্র পাঠাও-উবারের জন্য আবিষ্কার হয়েছে? যে যাত্রী অ্যাপ চালাতে না পারে, সে যাত্রী কারও সাহায্য নিতে পারে। এসব না পারলে রাইড শেয়ার সার্ভিস নেয়ার দরকার কী?

মোটর সাইকেল চালক রাজীব আহমেদ বলেন, পাঠাও-উবার কর্তৃপক্ষ তাদের বাইকারদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এজন্য আজকে এই অবস্থা। যে সার্ভিস দেয়া হচ্ছে, এর নাম রাইড শেয়ারিং কীভাবে হয়? এটা যারা চালায় তারা তো ফুলটাইম চালান, যেমনটা চালানো হয় সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা, লোকাল বাস।

পাঠাওয়ের বনানীস্থ প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে ঊর্ধ্বতন কারও নাগাল মেলেনি। সাধারণ কর্মীরা বলেন, এ সমস্যার সমাধান নিয়ে পাঠাও কাজ করছে। যদি পাঠাওয়ের কোনো বাইকার অ্যাপ ব্যবহার না করে যাত্রী পরিবহন করে, এমন খবর পেলে সেই বাইকারের একাউন্ট স্থায়ীভাবে ব্লক করে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে উবারের উত্তরা অফিসে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

আরএম/বিএস