• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০১৯, ১১:০৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৫, ২০১৯, ১১:০৯ এএম

নদীর পানি বেড়ে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ফের অবনতি 

নদীর পানি বেড়ে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ফের অবনতি 


ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র ও বাঙ্গালি নদীসহ অন্যান্য নদ নদীর পানি ফের বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও বগুড়াসহ বেশ কয়েকটি জেলায়।

কুড়িগ্রাম জেলার সবকটি নদনদীর পানি বেড়ে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত চার-পাঁচ দিন নদ নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। তবে দুই দিনে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পানি বেড়েছে। জেলার ৯ উপজেলার আট শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। একইসঙ্গে নদী ভাঙনে গৃহহারা হচ্ছে মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের  পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকার গ্রামগুলো। কয়েকদিন ধরে পানি কমতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র ও বাঁধের রাস্তা থেকে অনেকে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছিলেন। এখন আবার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। অনেকে আবারও বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছেন।

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ৯ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাড়িঘর থেকে পুরোপুরি পানি নেমে না যাওয়ায় এখনও অনেকে উঁচু রাস্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। বন্যার পনি প্রবেশ করায় এক হাজার ২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১৩শ’ ৩৩ কিলোমিটার সড়ক। এছাড়াও নদী ভাঙনে ১৮শ’ ৫৩টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

লালমনিরহাটে প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি ফের হু হু করে বাড়ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে জেলায়। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে নতুন করে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় হাতীবান্ধা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। এর আগে একই পয়েন্টে তিস্তার পানি দুপুরে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পাশাপাশি উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে তিস্তায় দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ভারত থেকে পানি দ্রুত বেগে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এর আগে গত ১১ জুলাই তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ও ১৩ জুলাই সেটা সর্বোচ্চ ৯০ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে। ১৫ জুলাই পর্যন্ত সেখানে বিপৎসীমা বরাবর পানি প্রবাহিত হলেও ১৬ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
 
এদিকে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাটে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গিয়ে হাজারও পরিবার প্লাবিত হয়েছে। গত ১৪ দিন থেকে চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি থাকলেও অধিকাংশ চরেই তেমন কোনো ত্রাণ কিংবা সাহায্য সহযোগিতা পৌঁছায়নি। এতে দুভোর্গে রয়েছে ভানবাসি মানুষ।

গত ১৪ দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার, সানিয়াজান, ঠাংঝাড়া, পাকশের সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া, দালালপাড়া, রমনীগঞ্জ, সির্ন্দুরনা, পাঠান বাড়ি, হলদি বাড়ী, ডাউয়াবাড়ি, বিছন দই, গড্ডীমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, পাটিকাপাড়া, পশ্চিম হলদি বাড়ি, চর গড্ডীমারী, ধুবনী, সিঙ্গীমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর, চর বৈরাতী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, গোর্বধন, কুটির পার ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, মোগলহাট, কুলাঘাটসহ নদী তীরবর্তী ১৬টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে বসতবাড়ী, রাস্তাঘাট ও স্কুল কলেজ।

এদিকে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে বাঙালি নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমা ১০১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে যমুনা নদীর পানির সঙ্গে বাঙালির নদীর পানির লেভেল সমানতালে রয়েছে।

যমুনার বুকজুড়ে উঠছে বিশাল বিশাল ঢেউ। ঢেউয়ের সঙ্গে পানি আছড়ে পড়ছে যমুনা তীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। যমুনার উপচেপড়া পানিতে ডুবে গেছে ২২২টির মতো জলাশয়। পানির তোড়ে ভেসে গেছে এসব জলাশয়ে চাষ করা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ও মাছ।
 

যমুনা বেষ্টিত বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার এসব জলাশয় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৭৩ দশমিক ৯৭ মেট্রিকটন মাছ ও মাছের পোনা বেরিয়ে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমান দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

বগুড়ায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, যমুনার পানি কমছে তবে বাঙালি নদীর পানি বাড়ছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।  
 
আরআই

 

আরও পড়ুন