• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০১৮, ০১:৩০ পিএম

নির্বাচনের কারণে পর্যটক শূন্য কক্সবাজার

নির্বাচনের কারণে পর্যটক শূন্য কক্সবাজার
পর্যটক শূন্য কক্সবাজার, ছবি: রিকু আমির

 

নির্বাচনের বছরে কক্সবাজারের পর্যটনখাতে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে।  যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সেখানে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্তরা।  তাদের ভাষ্য-মানুষ এখন নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনমূখী। এজন্য কক্সবাজারে ব্যবসায়ের প্রধান মৌসুম ডিসেম্বর মাস ভেস্তে যাবার আশঙ্কায়।

ছোট-বড়, অভিজাত, সাধারণ মিলিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় সাড়ে চারশোরও বেশি হোটেল-মোটেল রয়েছে। এছাড়া আছে দূরপাল্লা ও আভ্যন্তরীণ পরিবহন, ভাসমান ফটোগ্রাফার, সি বোট-সি বাইক, শামুক-ঝিনুক, সামুদ্রিক পাথর দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পের স্টল ও মার্কেট, বাহারি পোশাক-আশাকের দোকানপাট, খাবার হোটেল, আচার-বার্মিজ সামগ্রী বিক্রির দোকানসহ বহুকিছু। এসবের ব্যবসায়ীদের প্রধান লক্ষ্যই থাকে ডিসেম্বর মাস। কেননা, এসময়ে সাগর শান্ত থাকে, কর্মজীবীরা ছুটি পান, শীতকালীন অবকাশের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ দেয় বলে পর্যটকের আগমন সবচেয়ে বেশি ঘটে। কিন্তু এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রভাবে এখন থেকেই পর্যটক আগমনে লক্ষ্যণীয় ভাটা দেখা দিয়েছে।

                                                          খুব অল্প পর্যটক দেখা যায় মাঝেমধ্যে।

হোটেল মিডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফেডারেশন অব কক্সবাজার ট্যুরিজম সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী ৫ ডিসেম্বর রাতে জাগরণকে বলেন, নির্বাচনের কারণে ব্যবসায়ের পরিমাণ ২০ শতাংশে নেমে আসার আশঙ্কা আছে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ৬টি পয়েন্টে পর্যটকদের পা পড়ে সবচেয়ে বেশি। এসব হচ্ছে- ইনানী, হিমছড়ি, সুগন্ধা, লাবনী, কলাতলী, ডায়াবেটিস পয়েন্ট। এছাড়া হিমছড়ির পাহাড়, ঝরনা, মেরিন ড্রাইভসহ আরও কিছু দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করতে ভুল করেন না পর্যটকরা।

৪ ডিসেম্বর রাত আটটার দিকে কলাতলী সৈকতে দেখা যায়, সমুদ্র দর্শনে ব্যবহৃত পর্যটকদের শতশত চেয়ার ফাঁকা। হাতে গোনা ৮-১০জন যাদের পাওয়া যায়, তাদের বেশিরভাগ এ অঞ্চলেরই। ঢাকার ধানমন্ডি থেকে গমনকারী স্বস্ত্রীক আরিয়ান মোস্তফাকে পাওয়া যায়। নির্বাচনকালীন শঙ্কার কথা তার কাছ থেকেও শোনা যায়। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে একটু ভয়ে আছি। কিছুদিন পর দেশের পরিবেশ কী হয়, বলা যায় না। তাই আগেভাগেই চলে এলাম।
                                                   ইনানি সমুদ্র সৈকতের প্রবেশ পথ ফাঁকা।      

৫ ডিসেম্বর বেলা ১২টার দিকে ইনানি সমুদ্র সৈকতে প্রায় ২৫জন পর্যটক দেখা যায়। এ সৈকতে প্রবেশ পথের ডান-বামে বেশকিছু দোকানপাট আছে। সানগ্লাস বিক্রেতা ফয়জুল জাগরণকে জানান, প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে থাকার উপায় ছিল গত ডিসেম্বর বা তার আগের ডিসেম্বরগুলো। অথচ এবার ফাঁকা। একইসাথে তাদের ব্যবসায়েও ভাটা।

ইনানি ও হিমছড়ি সৈকতের আশপাশের ৬-৭ কিলোমিটারের মধ্যে আবাসিক হোটেল নেই। সুগন্ধা, লাবনী, কলাতলী, ডায়াবেটিস পয়েন্টের আশপাশেই সব আবাসিক হোটেল-মোটেল। এসব পয়েন্টে পর্যটকও ইনানি ও হিমছড়ির চেয়ে বেশি দেখা গেছে।

লাবনী সৈকতে পর্যটকদের হাজারখানেক চেয়ার আছে। এর কাছেই সামুদ্রিক শুঁটকি মাছ বিক্রি করেন ইদ্রিস আলী। তার ভাষ্যমতে- বর্তমানে এসব চেয়ারের ৩০ভাগও ভরে না কোনো বেলাতেই।

৪ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কর্তৃক পরিচালিত মোটেল শৈবাল, মোটেল প্রবাল, মোটেল উপল, তারকা মানের সিগাল হোটেল, তিন তারকা হোটেল কক্স টুডে, হোটেল সি-প্যালেস, হোটেল সায়মান, হোটেল প্যানোয়া, হোটেল সি-ক্রাউন, হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজ, সুগন্ধা গেস্ট হাউস, ডায়মন্ড গেস্ট হাউস, সি-পার্ক গেস্ট হাউস, ইউনি রিসোর্ট, সি-হ্যাভেন গেস্ট হাউস, হোটেল সি-ক্রাউন, হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল ওসান প্যরাডাইস লিমিটেডসহ আরও কিছু হোটেলে-মোটেলে যায় জাগরণ।

                                                   সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতে গুটি কয়েক পর্যটক।      

এসব হোটেল-মোটেল পরিচালনাকারী-মালিকদের ভাষ্য অনুযায়ী- শীত মৌসুমই ব্যবসায়ের প্রধান মৌসুম। এজন্য বাড়তি বিনিয়োগ, জনবল নিয়োগসহ বহু কিছু করে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। এবার নির্বাচনের বছর বিধায় এসব বিনিয়োগ ভেস্তে যাবে। আবার বিনিয়োগ না করেও উপায় নেই।

কলাতলী সৈকত এলাকায় অবস্থিত অভিজাত হোটেল ওশান প্যারাডাইজের ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজার মো. নাসির উদ্দিন জাগরণকে বলেন, সামনে নির্বাচন এটা আমাদের ব্যবসায়ের জন্য নেগেটিভ। অনেক পর্যটক আসবে না নির্বাচনের কারণে।

ফেডারেশন অব কক্সবাজার ট্যুরিজম সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী ও 'সিগাল হোটেলস লিমিটেড' এর এসিসট্যান্ট ফ্রন্ট অফিসার এপিএম নূর এ আলমসহ কিছু হোটেল মালিক ও ব্যবস্থাপনায় যুক্তদের ভাষ্য- নির্বাচনের পরে যদি দেশের সবকিছু স্বাভাবিক থাকে, তাহলে লোকসান হয়তো পুষিয়ে নেয়া যাবে।

অভিজাত হোটেল 'সিগাল' এর এসিসট্যান্ট ফ্রন্ট অফিসার এপিএম নূর এ আলম ৫ ডিসেম্বর রাতে জাগরণকে বলেন, সাধারণ যে ছুটিছাটা ১৬ ডিসেম্বর, ২৫ ডিসেম্বরসহ আরও কিছুদিন, এতেও কিন্তু আমাদের কাস্টমার পূর্বের চেয়ে বেশিই আসে। কিন্তু শীতকালীন অবকাশ কাটাতে বিনোদন প্রিয় মানুষের যে হিড়িক লেগে যায়, তা-ই আমাদের ব্যবসায়ের প্রাণশক্তি। নির্বাচনের কারণে এবার মানুষের আগমন খুবই কম হবে।

                                                         কলাতলী সমুদ্র সৈকত প্রায় ফাঁকা।

বর্তমানে পর্যটকদের আগমনের হার অন্য বছরের চেয়ে কম বলে দাবি করেন 'সিগাল হোটেলস লিমিটেড' এর এসিসট্যান্ট ফ্রন্ট অফিসার এপিএম নূর এ আলম।

কলাতলী সৈকতের পাড়ে ডিএসএলআর ক্যামেরা নিয়ে ঘুরছিলেন ভাসমান ফটোগ্রাফার রফিক। তিনি জানান, একেক ছবির জন্য তারা ১০ টাকা করে নেন। কিন্তু এখন তা ৫ টাকায় নেমে এসেছে। তারপরও কাস্টমার পাচ্ছেন না। কেননা, পর্যটক-ই নেই।

হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালের পাশে শামুক-ঝিনুক সামগ্রী বিক্রির একটি বড় মার্কেট আছে। এখানের ব্যবসায়ী ইমরান জানান, গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার ক্রেতা অনেক কম। এমন সময় ভরপুর থাকতো কেনাবেচায়। নির্বাচনের দিন যতো এগিয়ে আসবে, মার্কেট ক্রেতার সংখ্যাও কমতে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আরএম/বিএস