• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮, ০৬:০৭ পিএম

ক্রাইম পেট্রোল দেখে অপহরণ-হত্যা, গ্রেফতার ২

ক্রাইম পেট্রোল দেখে অপহরণ-হত্যা, গ্রেফতার ২

 

অপরাধ বিষয়ক সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’-এ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড দেখে অপহরণ করে দ্রুত বড়লোক হওয়ার পরিকল্পনা করেছিল দুই তরুণ! তারা ৬ মাস ধরে পরিকল্পনা করে। সেই অনুযায়ী গাজীপুরের শ্রীপুরে মনিপুরের স্কুলছাত্র সাদমান ইকবাল রাকিন (১০) অপহরণ করে। এরপর মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে।  কিন্তু টাকা না পেয়ে দুজনে মিলে শিশুটির বুকের উপর উঠে গলা টিপে হত্যা করে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি তাদের।  মোবাইল রিচার্জের এক টুকরো কাগজই তাদের অপরাধের সাক্ষী হয়ে দাঁড়ায় বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা অধিনায়ক সারোয়ার-বিন-কাশেম।

আজ সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) মো. সারওয়ার বিন কাশেম এসব তথ্য জানান। এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর ও জয়দেবপুর এলাকা অভিযান চালিয়ে রোববার রাতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি পারভেজ শিকদার (১৮) ও তার সহযোগী মো. ফয়সাল আহমেদ (১৬)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে।  

সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, গ্রেফতার পারভেজ শিকদার ২০১৭ সালে ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে এবং শিমুলতলী কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে কৃষি ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়। তার পিতা আলীম শিকদার মানসিক ভারসাম্যহীন এবং মাতা গৃহিনী। সে দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়।

পারভেজ এর আগেও বিভিন্ন সময় ছোটখাট অপরাধমূলক কাজ করেছে। সে দুই বছর ধরে রাকিনকে প্রাইভেট পড়াত। বড় অংকের টাকা পাওয়ার আশায় ৬ মাস আগে সে রাকিনকে অপহরণ করে ও মুক্তিপণ চাওয়ার উদ্দেশ্যে রাকিনের বাবার মোবাইল ফোন চুরি করে। তার পরিকল্পনা ছিল রাকিনের বাবার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, এতে খুব সহজেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দেয়া যাবে। মোবাইল ফোনের বিস্তারিত কলের তালিকা থেকে ধরা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে হত্যাকাণ্ডের পর ছয় মাস সে ফোনটি বন্ধ করে রেখেছিল।

অপহরণের পরিকল্পনা সফল করতে পারভেজ শিকদার তার সহযোগী ফয়সাল আহমেদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। ফয়সাল ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র। পরিবারের ৪ ভাই-বোনের মধ্যে সে তৃতীয়।  একই এলাকায় বাস করার কারণে পারভেজের সঙ্গে ৩/৪ বছর ধরে তার পরিচয়। বয়স কম হলেও তারা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন এবং ছোটখাট বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক আরো বলেন, অপহরণের দিন ফয়সাল পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী খেলার ফাঁকে রাকিনকে পাখির বাসা দেখানোর কথা বলে বাঁশঝাড়ের আড়ালে নিয়ে যায়। পরে জঙ্গলের ভেতরে তাকে আটকে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু আটকাতে ব্যর্থ হলে এবং রাকিন ছাড়া পেলে তাদের কথা সবাইকে জানিয়ে দিতে পারে এই ভয়ে তাকে মাটিতে ফেলে গলা টিপে হত্যা করে। পরে মুক্তিপণ চাওয়ার জন্য ফোন করতে গিয়ে ফয়সাল দেখতে পায় মোবাইল ফোনে কোনো টাকা নেই। তখন তারা ফাউগান বাজারে রনির দোকান থেকে ২০ টাকা ফ্লেক্সিলোড করে। ফ্লেক্সিলোডের রেজিস্টারে নম্বর লিখলে ধরা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তারা ছোট একটি কাগজে মোবাইল নম্বর ও টাকা লিখে ফ্লেক্সিলোড করার জন্য দোকানে দিয়ে দ্রুত চলে আসে। টাকা রিচার্জের পর তারা চুরি করা ওই মোবাইল ফোন থেকে রাকিনের বাবাকে ফোন করে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

র‌্যাব-১ এর তদন্ত দল প্রাথমিকভাবে কোনো সূত্র না পেলেও দোকানের ডাস্টবিন/ওয়েষ্ট পেপার বক্সে নম্বর লেখা ওই ছোট কাগজের টুকরো পাওয়ার পর তদন্ত কার্যক্রম নাটকীয় মোড় নেয়। পরে লাশের পাশে প্রাপ্ত স্টার সিগারেটের প্যাকেট সহায়ক হিসেবে কাজ করে। কাগজের টুকরোর হাতের লেখা ও স্টার সিগারেটের প্যাকেটের সূত্র ধরে দুই খুনিকে শনাক্ত করে তদন্ত দল। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান সারওয়ার বিন কাশেম।

রাকিনের বাবা শামীম ইকবাল জানান, প্রায় ৬ মাস আগে তার স্ত্রীর ব্যবহার করা একটি মোবাইলফোন সিমসহ হারিয়ে যায়। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি থানায় জিডি করেননি। ওই নম্বর থেকেই তার কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে তিনি এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় মামলা করেন।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ডিসেম্বর ফাউগান গ্রামের বাড়িসংলগ্ন বাঁশঝাড় থেকে শিশু রাকিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। রাকিন ওই গ্রামের বাসিন্দা ও গাজীপুর জেলা পরিষদের কার্যসহকারী শামীম ইকবালের ছেলে। সে স্থানীয় সরকারি বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

আরআর/এএস