• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০১৯, ০৪:১৮ পিএম

ঘুম ভাঙে পাতি সরালির কলকাকলিতে

ঘুম ভাঙে পাতি সরালির কলকাকলিতে
পাতি সরালির কলকাকলিতে মুখর জলাশয়। ছবি : জাগরণ

 

মৌসুমের মধ্যপথে এসে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। তবে শীতের আগে এসে গেছে অতিথি পাখি। বিভিন্ন জলাশয়ে সে সব পাখি দেখা মিলছে। সকাল থেকে পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত সেখানকার পাবনা শহরের ময়নামতির একটি জলাশয়। সেখানে উঁড়াউঁড়ি, ছুটোছুটি, খুনসুটি আর মনের সুখে জলকেলি ব্যস্ত হয়ে এক ঝাঁক পাখি। পাবনা শহরের নতুন অতিথি তারা। অন্য এলাকা থেকে উঁড়ে আসা এই পাখির নাম পাতি সরালি। এই মনোরম দৃশ্য দেখা মিলবে পাবনা পৌর শহরের ১২ নং ওয়ার্ডে। যান্ত্রিক শহরে এখন এই নতুন অতিথিদের কোলাহলে ঘুম ভাঙে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
     
শীতে বাংলাদেশে যে সব পাখি দেখা যায় তার মধ্যে পাতি সরালি অন্যতম। এটি ছোট সরালি বা গেছো হাঁস নামেও পরিচিত। এটি মূলত দেশি বা আবাসিক পাখি। তবে শীতকালে লোকালয়ে দলবদ্ধভাবে এদের দেখা মেলে। এ জন্য অনেকেই একে পরিযায়ী পাখি ভেবে ভুল করেন। দেশি পাখি হলেও শীতকালে ভারত, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে উঁড়ে এসে এদেশে আবাস গড়ে তোলে এই পাখি । 

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বড় বড় দালান। মধ্যখানে ছোট্ট জলাশয়। কচুরিপানায় পূর্ণ এ জলাশয়ে নির্ভয়ে ঘুরছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। সামান্য শব্দ হলেই উঁড়ে যাচ্ছে দল বেঁধে। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত পুরো এলাকা। বাড়ির ছাদ বা বারান্দা থেকেই এলাকাবাসীরা উপভোগ করছেন সেই দৃশ্য।   

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল্লাহ্ শাফি জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় অতিথি পাখির সমাগম ঘটলেও পাবনার শহরে এবারই প্রথম এই পাখির বিচরণ দেখলাম। শহরের যান্ত্রিক শব্দের বদলে এখন সকালে ঘুমভাঙে পাখিদের কোলাহলে। ওরা যেনো নিরাপদে এখানে থাকতে পারে তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। 

পাখি শিকারি বা কারও দ্বারা যেনো কোন ক্ষতি না হয়, সে বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে সচেতনতা তৈরি হয়েছে।  পাবনা বন্য প্রাণী সংরক্ষন আন্দোলন কমিটির আহবায়ক ও আলোকচিত্রী এহসান আলী বিশ্বাস জানান, এই পাখি দেশি প্রজাতির হলেও পাবনার জন্য তারা অতিথি ও দেশীয় সম্পদ। পাখি শিকারের বিরুদ্ধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রচারণা বাড়ার পাশাপাশি আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে এই সম্পদ রক্ষা করতে হবে।    

সামাজিক বন বিভাগ পাবনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, শীতের এই সময়ে পাবনার বিভিন্ন এলাকায় অতিথিসহ দেশি পাখির বিচরণ ঘটে। তাদের নিরাপত্তার জন্য রাজশাহী বন্যপ্রাণী বিভাগ ও পুলিশের সহায়তায় শিকার বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়ে থাকে। তবে লোকবলের অভাবে এটা সবসময় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
  
পাখি পর্যবেক্ষক ও কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাবের সভাপতি এস আই সোহেল জানান, পাতি সরালি নিশাচর স্বভাবের আবাসিক পাখি। দিনে জলমগ্ন ধানক্ষেত ও বড় জলাশয়ের আশেপাশে দলবদ্ধভাবে জলকেলি আর নিজেদের মধ্যে খুঁনসুটিতে ব্যস্ত থাকলেও রাতে খাবারের সন্ধানে চরে বেড়ায়। এদের প্রধান খাবার পানিতে থাকা গুল্ম জলজ উদ্ভিদ, নতুন কুঁড়ি, শস্যদানা, ছোট মাছ, ব্যাঙ, শামুক, কেঁচো ইত্যাদি। পাখিটির মাথা, গলা ও বুক বাদামি, কালো পা এবং ঠোঁট ধূসর-কালচে রঙের। পিঠে হালকা বাদামির ওপর নকশা আঁকা ও লেজের তলা সাদা। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি দেখতে একই রকম। প্রজনন মৌসুমসহ অন্য সময় এরা জুটি বেঁধে পৃথকভাবে দুর্গম বিল-হাওরে বসবাস করে। তাই শীত ছাড়া একত্রে বেশি সংখ্যায় দেখা যায় না। 

এসএমএম