• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০১৮, ১২:৪৩ পিএম

উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য, হাইড্রলিক হর্নের ব্যবহার হচ্ছেই

উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য, হাইড্রলিক হর্নের ব্যবহার হচ্ছেই

 

ঢাকার রাস্তায় যানবাহনে হাইড্রলিক হর্ন ব্যবহার না করতে ১ বছর আগে উচ্চ আদালত আদেশ দিলেও তা মানা হচ্ছে না।  মাঝে-মধ্যে মামলা দিয়ে দায় সারছে ট্রাফিক পুলিশ।  এছাড়া উচ্চ আদালতের রায়ে হাইড্রলিক হর্ন আমদানি এবং বিক্রি বন্ধের নির্দেশও বাস্তবায়ন হয়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন দৈনিক জাগরণকে বলেন, শব্দ দূষণ প্রতিরোধ একটি মৌলিক বিষয়।  এতে এমন অবহেলা বা দৃষ্টি না দেয়া খুব বেমানান।  আসলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অভাব।

তিনি মনে করেন, উন্নয়ন মানেই শুধু সুন্দর রাস্তাঘাট, সেতু, ভবন নয়- সবকিছুর উন্নয়ন মানেই উন্নয়ন।

মানুষের জন্য শ্রবণযোগ্য শব্দের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডেসিবেল। কিন্তু হাইড্রোলিক হর্ন শব্দ ছড়ায় ১২০ ডেসিবেল পর্যন্ত।  এর স্থিতি ৯ সেকেন্ডের বেশি হলে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।  দেশের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুসারে রাজধানীর মিশ্র (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) এলাকায় দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা ৬০ ডেসিবেল।  এর চেয়ে উচ্চ মাত্রার শব্দে শ্রবণশক্তি হ্রাস, বধিরতা, হৃদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, বিরক্তি সৃষ্টি ও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।

মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় কোনো যানবাহনে হাইড্রলিক হর্ন পাওয়া গেলে সে অপরাধে ট্রাফিক পুলিশ ১৩৯ ধারা প্রয়োগ করে ১০০ টাকা অর্থদণ্ডের মামলা দায়ের করে।  যদি যানবাহনে থাকা হাইড্রলিক হর্ন বিকল অবস্থায়ও থাকে তাহলেও ১৩৯ ধারা প্রয়োগের বিধান আছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলছেন, এটি বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএকে কঠোর হতে হবে। শাস্তির পরিমাণও বাড়াতে হবে।

সরেজমিনে গাবতলী, ধোলাইখাল, বংশাল, বাংলামটর ও নবাবপুরের কিছু দোকানে দেখা যায়, বিভিন্ন মানের হাইড্রলিক হর্ন। এসব প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসনের কোনো বাধা পান না তারা।

গাবতলীস্থ ঢাকা মটরসের বিক্রয়কর্মী শিপলুসহ আরও ৩টি দোকানের বিক্রয়কর্মীর বক্তব্য- ভারতীয় কোম্পানি রুটস-এর তৈরি হাইড্রলিক হর্ন দেশে পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি।  ক্ষমতা অনুযায়ী এসবের দাম পড়ে ১২০০ থেকে ২৪০০ টাকা। তবে দূরপাল্লার বাসেই এসব ব্যবহার করা  হচ্ছে।  আর ঢাকা শহরের ভেতরে চলাচলকারী গণপরিবহনে যেসব হাইড্রলিক হর্ন লাগানো হয়, সেসবও রুটস কোম্পানি তৈরি করে।  তবে তা আকারে ছোট।  এসবের মূল্য ৩০০-৪০০টাকা।

স্বাস্থ্য ও শ্রবণের জন্য ক্ষতিকর বলে উচ্চ আদালতে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট রাজধানীতে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আদালত।  ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল পুলিশকে।  পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে গাড়ির মালিক ও চালকদের কাছের থানায় হর্ন জমা দিতে এবং এই হর্ন ব্যবহার করা গাড়ি জব্দ করতেও পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

রিটকারী ছিলেন- ব্যরিস্টার মনজিল মোরসেদ।  তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হলে অবস্থার আরও উন্নতি হবে।

রায়ে পুলিশ প্রধান, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি (হাইওয়ে), যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) এবং বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয় আদালত।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বিআরটিএ যদি পদক্ষেপ নেয়, তাহলে স্থায়ী সমাধান হতে পারে।

আরএম/এফসি