• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৯, ০৯:৫৮ এএম

অযত্নে-অবহেলায় কুলাউড়া পাবলিক লাইব্রেরি

অযত্নে-অবহেলায় কুলাউড়া পাবলিক লাইব্রেরি
কুলাউড়া পাবলিক লাইব্রেরি

 

সকালে ঘুম থেকে উঠে শিক্ষার্থীরা ছুটে যেতো নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে। বিকালে বাড়ি এসে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে কেউ খেলাধুলায় মনোনিবেশ করতো কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আড্ডায় রত থাকতো। তন্মধ্যে যুবসমাজের একটা অংশ বই পড়ায় সময় দিতো। আর বই পড়ার উত্তম স্থান ছিলো পাবলিক লাইব্রেরি। চাকরীজীবিরাও বৈকালিক আড্ডায় লাইব্রেরিতে ছুটে যেতেন প্রিয়জনদের সান্নিধ্য পেতে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ কেউও এই দলে যোগ দিতেন।

ঠিক এই রকম কুলাউড়ার পাবলিক লাইব্রেরিকে কেন্দ্র করে যুব সমাজ লাইন ধরতো নতুন বইয়ের সন্ধানে। কেউ লুডু খেলায়, কেউ দাবা আবার কেউবা কেরাম খেলায় ব্যস্ত থাকতো। কেউ কেউ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক যেমন নাটক মঞ্চস্থ, গান, নাচের বিষয়ে আলাপচারিতায় ব্যস্ত থাকতো। সন্ধ্যা হলে আবার সবাই বাড়ি ফিরে যেতে হতো। তবে লাইব্রেরি কার্ড পরিদর্শণ করে একটি বই সঙ্গে করে নিয়ে যেতো তারা। আশির দশক, নব্বইয়ের দশক এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম ৪/৫ বছর এই চিত্র দেখা যেতো হরহামেশাই।

আজকের বিশ্বায়নের যুগে কম্পিউটার, মোবাইলে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে সবাই তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যস্ত। খুব অল্প সময়ে, দ্রুত গতিতে বিভিন্ন না জানা তথ্য অতি সহজে জানা যাচ্ছে ইন্টারনেটের সাহায্যে। আজকের যুবসমাজ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাবাজি ছেড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত সময় কাটায়। মাঠে খেলাধুলা ছেড়ে কম্পিউটার, মোবাইলে গেইম নিয়ে ব্যস্ত। 

পাবলিক লাইব্রেরির প্রতি মানুষের আবেগ অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ছে। আজকের তরুণদের অনেকেই পাবলিক লাইব্রেরির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতেই পারছে না অথবা বলা যায় এক ধরনের অনীহা। অনেক লেখক ও শিক্ষকরা বিশ্বাস করেন, এরকম পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে যুবসমাজের ভবিষ্যৎ জ্ঞানভাণ্ডার নির্দিষ্ট একটা গতিতে আবদ্ধ হয়ে পড়বে। তারা মনে করেন, বই পড়ার যে স্বাদ, যে রস আছে তা একমাত্র বইপ্রেমী ব্যক্তি ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না।

সারাদেশের বিভিন্ন লাইব্রেরির মতো নাজুক পরিবেশ দেখা যায় মৌলভীবাজার কুলাউড়া পৌরসভা পাবলিক লাইব্রেরির। অযত্ন অবহেলা ও গাফিলতির কারণে গত দুই বছর ধরে এই লাইব্রেরীটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে পাঠকরা তাদের জ্ঞানচর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্মরা বঞ্চিত হচ্ছে জ্ঞান আহরণ থেকে।

জানা যায়, বইপ্রেমীদের কথা বিবেচনা করে পৌরশহরের স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধের পাশে নির্মিত হয় কুলাউড়া পাবলিক লাইব্রেরি। ১৯৮৪ সালের ২৬ জুন তৎকালীন ইউএনও সিরাজুল ইসলাম লাইব্রেরিটি উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে এটি সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হয়ে আসছিলো। পাবলিক লাইব্রেরি নামে কুলাউড়া সোনালী ব্যাংকে একটি হিসাব খোলা হয়। পদাধিকারবলে সেই হিসাব পরিচালনা করতেন তৎকালীন ইউএনও ও লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাজমুল হাসান।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লাইব্রেরির দরজার মুখে ভ্রাম্যমাণ আসবাবপত্রের দোকান। খাট, চেয়ার, টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র নিয়ে সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। লাইব্রেরির ভিতরে স্যাঁতস্যাঁতে, অপরিচ্ছন্ন, মাকড়শার জালে আচ্ছন্ন। তালাবদ্ধ ঘরে একমাত্র বৈদ্যুতিক সিলিং ফ্যানটি ঘুরছে। ধুলোবালিতে ভরপুর লাইব্রেরির টেবিলে ছড়ানো অবস্থায় কিছু খবরের কাগজ পড়ে আছে। 

কুলাউড়া পাবলিক লাইব্রেরির সদস্য ও শিক্ষক সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘মানুষের জ্ঞান বিকাশের জন্য শুধু পুঁথিগত শিক্ষা নয়, শিক্ষার মূল্যবোধ তৈরি করা দরকার। সেই মূল্যবোধ তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে একটি পাবলিক লাইব্রেরি। সেই লাইব্রেরি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এটা খুবই দুঃখজনক। অবিলম্বে লাইব্রেরিটি চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

পাবলিক লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খুরশিদ উল্লাহ বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমি লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্বে ছিলাম। সহকারী লাইব্রেরিয়ান ছিলেন শামছুদ্দিন আহমদ। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে শামছুদ্দিন মারা যান। এরপর লাইব্রেরির দিকে আর কারো চোখ পড়েনি।’ 

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবুল লাইছ বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এখানে বরাদ্দের একটা বিষয় আছে। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে এটা চালু করা যায়।’

বিএস