• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০১৯, ০৮:৫৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৩০, ২০১৯, ০৮:৫৬ পিএম

রূপনগরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ 

হাসপাতাল মর্গে ৫ শিশুর মরদেহ, ১২ শিশুসহ ১৫ হাসপাতালে 

হাসপাতাল মর্গে ৫ শিশুর মরদেহ, ১২ শিশুসহ ১৫ হাসপাতালে 
দুর্ঘটনার পর শিশুদের হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে- কাশেম হারুন

রাজধানীর রূপনগরে বেলুন ফোলানোর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ৫ শিশুর মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ১২ শিশুসহ আহত ১৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল পৌনে ৪টায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। 

নিহত শিশুদের মধ্যে এজন মাদ্রাসার ছাত্র রমজান।তার বাবা জুতার কারখানায় কাজ করেন।আর  মা কাজ করেন স্থানীয় গার্মেন্টসে।বাবা লোকমুখে খবর পেয়ে দৌঁড়ে আসেন রূপনগর টিনসেড বাসায়। এসে এলাকাবাসীর মুখে খবর পান তার সন্তান রমজান আর নেই। মায়ের মুখে ভাষা নেই। নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন কৌতুহল মানুষের মুখের দিকে। হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন রমজানের ছোট বোন। মৃত্যু কি জিনিষ সে এখনো জানে না। এমনটাই পরিলক্ষিত হয়েছে রূপনগরে বেলুন ফোলানোর সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত রমজানের পরিবারে। এ ঘটনায় মারা যায় আরও চার শিশু। তারা হলেন- জান্নাতি, নুপুর, শাহিন ও ফারহানা রিয়া।
 
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে ,কারও হাত নেই, কারও পা নেই, কারও নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। কারও চেহারা ঝলছে গেছে। তাজা রক্ত রাস্তায় গড়াচ্ছে। আনুমানিক ৬-১৪ বছর বয়সী ১০-১২ জন শিশু সিলিন্ডারের স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল। এ খবরে জরুরি সেবা ৯৯৯ ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ফোন পেয়েই ঢাকা মহানগর অ্যম্বুলেন্স অ্যাসোসিয়েশনের যে কর্মকর্তা রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে ছুটে গিয়েছিলেন, সেই প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তাও ঠিক এভাবেই গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ঘটনাস্থলের বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

তিনি বলেন, বেলুনের ফোলানোর সিলিন্ডার বিস্ফোরণে রূপনগরে তিন শিশু ও এক নারীসহ কমপক্ষে পাঁচজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের ঢাকা ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া জানান, এক নারী ও তিন শিশুসহ চারজনকে মৃত অবস্থায় এই হাসপাতালে আনা হয়। আহতদের মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিস্ফোরণে নিহতদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতবিক্ষত হয়। এ চারজনের দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। যে দুজন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তারা বিপদমুক্ত।

এদিকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা.মুরাদ হাসান। তিনি বলেন, এ ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে। আহত ও নিহতদের পাশে দাঁড়াতে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিহত এক শিশুর খালা জানান, তার বোনের মেয়ে বাবার কাছে বেলুন কেনার বায়না ধরলে তার বাবা তাকে টাকা দিয়ে বেলুন কিনতে পাঠান। কিছুক্ষণ পরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনে এসে মেয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন।

বিস্ফোরণের ফলে পাশে থাকা শিশু নারীর দেহে সিলিন্ডারের ভাঙ্গা অংশ ঢুকে পড়ে। এরফলে ঘটনাস্থলেই ভ্যানের পাশে থাকা কয়েকজন শিশুর মরদেহ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায়। চারজন ঘঁটনাস্থলেই মারা গেছে। হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান আরও একজন। এদের মধ্যে তিনজন শিশু এবং একজন নারী ও একজন পুরুষ। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ১৫ জন। এদের স্থানীয় হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, রূপনগর আবাসিক এলাকায় বেলুন ফোলানোর সময় সিলিন্ডর বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতাবস্থায় ১৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলজে (ঢামকে) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনই শিশু। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। 

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আহতরা হলেন- জুয়েল (২৫), সোহলে (২৬), জান্নাত (২৫), বোন তানিয়া (৮), ভাই বায়জিদ (৫), জমিলা (৭), অজ্ঞাত শিশু (৫- তার অবস্থা আশঙ্কাজনক), মীম (৮), ওজুফা (৯), মোস্তাক (৮), মোরসালিনা (৯), নাহিদ (৮), অর্নব (১০), জনি (১০)। এই ১৪ জনকে সংশ্লিষ্ট  হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সিয়াম নামে ১১ বছর বয়সী একটি শিশুকে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে  চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। 
 
রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, সিলিন্ডারের ভাঙ্গা টুকরো ও গ্যাসের প্রভাবে লাশ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়ায় বিভৎস হয়েছে।তাই মরদেহ শনাক্তে সময় লাগছে। তবে এখন পর্যন্ত শিশুর মরদেহগুলো শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানান মেডিকেল ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া। 
 
এইচ এম/বিএস 
 

আরও পড়ুন