• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০১৯, ০৬:৪৮ পিএম

হলি আর্টিজান

‘যুদ্ধের মতো অবস্থা শুরু হয়ে যায়’

‘যুদ্ধের মতো অবস্থা শুরু হয়ে যায়’
হলি আর্টিজান -ফাইল ছবি

 

রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারিতে গোলাগুলির খবর শুনে সেদিন আমি সেখানে চলে যাই। যাওয়ার পর বিকট শব্দে বোমা ফোটে। আমি সেখানে থাকা অবস্থায় দুইটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার শব্দে বিল্ডিংগুলো কেঁপে ওঠে। তখন কে কী করবে ঠিক পাচ্ছিলেন না। যুদ্ধের মতো অবস্থা শুরু হয়ে যায়। - বুধবার আদালতকে কথাগুলো বলেন হলি আর্টিজান বেকারির মালিক সাদাত মেহেদী।

আর্টিজানে হামলার সেদিনের কথা তুলে ধরে বুধবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকার সন্ত্রাস-বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে কথাগুলো বলেন। আরও তিন সাক্ষী এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীরা হলেন- মেহেদীর স্ত্রী, গৃহকর্মী সামিরা আহম্মেদ, লেকভিউ ক্লিনিকের ক্যান্টিনের ম্যানেজার আবদুল হাকিম ও হলি আর্টিজানের শেভ আকাশ খান।

মেহেদী তার জবানবন্দিতে বলেন, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে হলি আর্টিজানের ম্যানেজার সেজাদ আমাকে ফোন দেয়। সে জানায়, বেকারির ভেতর দুর্বৃত্তরা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে গোলাগুলি করছে। তখন আমি রেস্টুরেন্ট ইজুগিতে ছিলাম। আমি সাথে সাথে হলি আর্টিজানে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে পুলিশের গাড়ি দেখতে পাই।

তিনি বলেন, আমি সেখানে যাওয়ার পর বিকট শব্দে একটা বোমা ফোটে। এরপর আমার সামনে দিয়ে আহত দুইজনকে হাসাপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। কিছুক্ষণ পর আবারও গোলাগুলি শুরু হয়। আমি সেখানে থাকা অবস্থায় দুইটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার শব্দে বিল্ডিংগুলো কেঁপে ওঠে। তখন কে কী করবে ঠিক পাচ্ছিলেন না। যেনো যুদ্ধের মতো অবস্থা শুরু হয়ে যায়।

তিনি বলেন, সেখানে অবস্থানরত পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে বেকারির ভেতরে কার কোথায় অবস্থান তা বর্ণনা করি। এরপর সকালে সেনাবাহিনীর অভিযানের কথা শুনতে পাই।

তিনি বলেন, ওই ঘটনায় আমার ৫ জন ক্লোজ ফ্রেন্ড মারা যায়। আরও ৯ জন ইতালি, ৭ জন জাপানি, ৩ জন বাংলাদেশি এবং একজন ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যু কথা জানান তিনি।

সাক্ষী আবদুল হাকিম তার জবানবন্দিতে বলেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে একটা বিকট শব্দে বোমার আওয়াজ শুনতে পাই। বোমার আওয়াজ শুনে দুই নিরাপত্তকর্মী নূর আলম ও হোসেন মেইন গেট দিয়ে ভেতরে চলে আসেন। এরপর সেখানের সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। আমি লেকভিউ ক্লিনিকের ভেতরে একটা নিরাপদ জায়গায় চলে যাই।

মামলায় এই নিয়ে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। আসামিরা হলেন-তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, হাদিসুর রহমান সাগর, জানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, আবদুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।

আসামিদের মধ্যে প্রথম ছয় জন কারাগারে রয়েছেন। এদিন তাদের কারাগারে থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার অপর দুই আসামি পলাতক রয়েছেন।

মামলার পলাতক আসামি মামুনুর রশিদকে গত ১৯ জানুয়ারি রাতে গাজীপুরের বোর্ডবাজারে একটি বাস থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে রাজধানীর সবুজবাগ থানায় সন্ত্রাস-বিরোধী আইনের মামলায় আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। বর্তমানে তিনি রিমান্ডে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাকে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি।

মামলাটিতে গত ৮ আগস্ট আট আসামির বিরুদ্ধে দাখিল করা চার্জশিট গ্রহণ করে আদালত। চার্জশিটে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমের বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

মাআ/এসএমএম